পুলিশি হেফাজতে ধনেখালির তৃণমূল নেতা কাজি নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর তদন্তে সোমবার শাসক দলের বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অসীমা পাত্রকে ডেকে কথা বলল সিবিআই।
সিবিআই সূত্রের খবর, সোমবার সকালে কলকাতার লর্ড সিনহা রোডে সিবিআই দফতরে অসীমাদেবীকে ডেকে পাঠানো হয়। যদিও সরকারি কাজের কথা বলে তিনি সময় চেয়ে পরে বিকেলে সিবিআইয়ের দফতরে যান। ওই ঘটনার তদন্তকারী অফিসাররা তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে সিবিআইয়ের দিল্লি শাখার অফিসাররা সরাসরি এই ঘটনার তদন্ত করছেন।
এর আগে ধনেখালিতে ঘাঁটি গেড়ে দফায় দফায় ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলেন সিবিআই অফিসাররা। ধনেখালি থানায় সেই সময় কর্মরত ও গ্রেফতার হওয়া তিন পুলিশকর্মীর সঙ্গেও বার বার কথা বলেন তাঁরা। সম্প্রতি সিবিআইয়ের এসপি পর্যায়ের অফিসাররা ঘটনার তদন্তে ফের কলকাতায় আসেন।
অসীমা পাত্র।
—নিজস্ব চিত্র। |
গত কয়েক দিন ধরে পর্যায়ক্রমে ওই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের কলকাতায় ডেকে পাঠিয়ে জেরা করছেন সিবিআই অফিসাররা। যদিও অসীমাদেবী স্বাভাবিক কারণেই এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বারে বারেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যেহেতু বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন, তাই তিনি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করবেন না।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ধনেখালির মদনমোহনতলায় সদ্য কেনা ম্যাটাডরের কাগজপত্র নিয়ে পুলিশের সঙ্গে নাসিরুদ্দিনের বচসা বাধে। হাতাহাতি হয়। অভিযোগ, সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের গায়ে হাত তোলেন তিনি। এর পরেই থানা থেকে বাড়তি পুলিশ এনে নাসিরুদ্দিনকে প্রকাশ্যে মারধর করতে করতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। মামলার এফআইআর-এ অভিযোগ করা হয়েছে, বেধড়ক মারে থানার লকআপে নাসিরুদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। শৌচাগারে যেতে চান। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
যদিও সেই সময় পুলিশের বয়ান অবশ্য ভিন্ন। জেলার পদস্থ পুলিশ কর্তারা জানিয়েছিলেন, থানায় নিয়ে আসার পরে নাসিরুদ্দিন অসুস্থ বোধ করেন। জল খেতে চান। শৌচাগারে গেলে অসুস্থতার মাত্রা বাড়ে। পুলিশই তাঁকে চিকিৎসার জন্য ধনেখালি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর থেকেই নিহত তৃণমূল নেতা নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী মনুজা বিবি বারে বারেই অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় বিধায়ক অসীমাদেবীর ‘নির্দেশে’ই ধনেখালি থানার তৎকালীন ওসি বরুণ ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশ তাঁকে পিটিয়ে মেরেছে। বিধায়ক এবং ওসি-র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন মনুজা। ওই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়ে যায়। কংগ্রেস, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন-সহ বিভিন্ন দল আন্দোলনে নামে। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার জেলা পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার সিআইডি-র হাতে তুলে দেয়। সিআইডি তিন পুলিশকর্মীকে গ্রেফতারও করে। যদিও, নিহতের স্ত্রী বারে বারেই জানিয়েছিলেন রাজ্য সরকারের তদন্তে তাঁদের ভরসা নেই। আগাগোড়া সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে মাস কয়েক আগে সিবিআই ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয়।
ধনেখালির তৎকালীন ওসি বরুণ ঘোষকেও ইতিমধ্যেই জেরা করেছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসাররা। ঘটনার পরে বরুণবাবুকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি তাঁকে চণ্ডীতলা থানার ওসি করে পাঠান জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী। জেলা পুলিশের কর্তাদের এই সিদ্ধান্তে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় পুলিশমহলে।
|