উপাচার্য হিসেবে তাঁর কার্যকাল শেষ হলেও মালবিকা সরকারকে প্রেসিডেন্সি পরিচালনার কাজের সঙ্গে যুক্ত রাখার চেষ্টা হবে বলে মেন্টর গ্রুপ আগেই জানিয়েছিল। আর সোমবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানালেন, মেন্টর গ্রুপ এমন কোনও প্রস্তাব দিলে সরকার তা ইতিবাচক ভাবেই ভেবে দেখবে। কারণ, মালবিকাদেবী প্রেসিডেন্সির জন্য ভাল কাজ করেছেন বলে মনে করে রাজ্য সরকার।
উপাচার্য হিসেবে মালবিকাদেবীর কার্যকাল শেষ হচ্ছে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি। মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু জানান, বর্তমান উপাচার্যকে পরে মেন্টর গ্রুপ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা (গভর্নিং বোর্ড) অথবা ওই দুই সংস্থার সঙ্গেই যুক্ত রাখার কথা ভাবা হতে পারে। মালবিকাদেবী এই বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি বলেন, “আগেও বলেছি, যে-ভাবেই প্রয়োজন হবে, আমি প্রেসিডেন্সিকে সাহায্য করব।” |
গত ১৫ অগস্ট মালবিকাদেবীর ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হয়েছে। তাই তাঁর জায়গায় নতুন অস্থায়ী উপাচার্য বেছে নিতে সার্চ বা সন্ধান কমিটি গড়ে রাজ্য সরকার। যদিও মেন্টর গ্রুপ ২০১৫-র জুন পর্যন্ত মালবিকাদেবীকে উপাচার্য হিসেবে রেখে দেওয়ার সুপারিশ করে রিপোর্ট দেয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। পরে আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের হস্তক্ষেপে আগামী বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মালবিকাদেবীর মেয়াদ বাড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্থায়ী উপাচার্য বেছে নিতে সন্ধান কমিটি গড়ার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করেছে সরকার। গত সপ্তাহে মেন্টর গ্রুপের বৈঠকের পরে সুগতবাবু জানিয়েছিলেন, কার্যকাল শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে মালবিকাদেবীকে যুক্ত রাখতে চান তাঁরা।
শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, “মেন্টর গ্রুপ এই প্রস্তাব দিলে সেটা গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা হবে। মালবিকাদেবী গত দেড় বছরে অকল্পনীয় ভাল কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ওঁকে যুক্ত রাখার প্রস্তাব এলে আমরা ভেবে দেখব, এ ব্যাপারে কী করা যায়।”
এ দিন প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপ এবং কাউন্সিলের বৈঠক ছিল। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান। তার পর ব্রাত্যবাবু বলেন, “এই সপ্তাহেই বিধির খসড়া উচ্চশিক্ষা দফতরে জমা দেবেন ওঁরা। আশা করছি, এ মাসেই প্রেসিডেন্সির বিধি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।”
মালবিকাদেবী জানান, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে প্রকৃতিগত ভাবে প্রেসিডেন্সি কিছুটা আলাদা। তাই বিধিতেও কিছু বৈশিষ্ট্য রাখা হয়েছে।
সেই বৈশিষ্ট্য ঠিক কেমন?
সুগতবাবু পরে বলেন, “গবেষণা কাজের উন্নতির লক্ষ্যে গবেষণা পরিকল্পনা ও উন্নয়নের জন্য একটি অধিকর্তা-পদ তৈরি করা হবে। এই ধরনেরই কিছু বৈশিষ্ট্য থাকছে বিধিতে।” ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসে এই বিধি রূপায়ণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে মেন্টর গ্রুপ।
বিধি বলবৎ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বোর্ড তৈরি হয়ে যাবে। তার পরে উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য গড়া সন্ধান কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত সদস্যের নাম চূড়ান্ত করে পাঠানো হবে। মালবিকাদেবীর কার্যকালের মধ্যেই নতুন উপাচার্য বাছা যাবে বলে শিক্ষামন্ত্রীর আশা।
প্রেসিডেন্সির উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষ নিয়েও সরব হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। বেহালা কলেজের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তিনি জানান, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষের নিরিখে প্রেসিডেন্সির উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। দেশের অন্যতম প্রাচীন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশংসা করে মন্ত্রী জানান, গত আড়াই বছরে ওই প্রতিষ্ঠান বিশ্বে একটি বিশেষ স্থান লাভ করেছে। তাঁর কথায়, “উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে বিভিন্ন আধিকারিক যে-ভাবে এই উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, তাতে এ বার থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কেও উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হচ্ছে।”
|