উড়ালপুল থেকে ঝাঁপ দিয়ে নীচে পড়ে গুরুতর আহত হলেন এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি ঝাঁপ দেবেন আঁচ করে নীচ থেকে টহলদার পুলিশ তাঁকে সতর্ক করেছিলেন। পুলিশের দাবি, তাতে কান দেননি ওই ব্যক্তি। সোমবার রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক কার্যালয় নবান্নর সামনে, বিদ্যাসাগর সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডে এই ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।
কয়েক মাস আগে মন্দিরতলা এলাকার ১৫তলা ভবনে রাজ্যের প্রশাসনিক দফতর উঠে আসার পর থেকে হাওড়ার দিকে সেতুর সমস্ত অ্যাপ্রোচ রোড ও অন্যান্য রাস্তা পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়। সেতুর সব উড়ালপুল দিয়ে সাধারণ মানুষের হাঁটাচলা বন্ধ করা হয়। এর পরেও কী করে পুলিশি নজরদারি এড়িয়ে ওই ব্যক্তি হেঁটে উড়ালপুলে উঠলেন প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বেলা ১১টা নাগাদ নবান্ন সংলগ্ন বাস টার্মিনাসের কাছে বছর পঞ্চাশের ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তিনি হিন্দিতে কথা বলছিলেন। বাস টার্মিনাস সংলগ্ন এক দোকান থেকে তিনি দু’দফায় মিষ্টি খান। ওই মিষ্টি বিক্রেতার কাছ থেকে এক বার মোবাইলও চান মেয়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য। কিন্তু বিক্রেতা মোবাইল না দেওয়ায় তিনি সেখান থেকে চলে যান। |
পুলিশ জানায়, এর পরে দুপুর ২টো নাগাদ আন্দুল রোড অ্যাপ্রোচ রোড উড়ালপুলের রেলিং-এর উপরে ওই ব্যক্তিকে বিপজ্জনক ভাবে বসে থাকতে দেখে পাহারাদার এক পুলিশকর্মী ছুটে যান। উড়ালপুলের নীচে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের কয়েক জন পাহারাদার পুলিশকর্মী এবং চ্যাটার্জিহাট থানার একটি টহলদার ভ্যানের পুলিশকর্মীরাও ওই ব্যক্তিকে দেখতে পেয়ে নেমে আসার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু কারও কথা না শুনে ওই ব্যক্তি উপর থেকে প্রায় ২০ ফুট নিচে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে ঝাঁপ দেন। তখনই ওই ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে টহলদারি ভ্যানে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি।
ঘটনার পরে পুলিশি তৎপরতা নিয়ে কোনও সংশয় না থাকলেও প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে। যখন ঘটনাটি ঘটে তখন নবান্নে ছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক মন্ত্রী, আমলা। স্বাভাবিক ভাবেই বিদ্যাসাগর সেতুর টোলপ্লাজা থেকে নবান্ন সংলগ্ন সেতুর ফ্লাইওভারে আঁটোসাঁটো পুলিশি প্রহরা থাকার কথা। কিন্তু তার মধ্যে কী করে আধ কিলোমিটার হেঁটে ওই ব্যক্তি আন্দুল রোড উড়ালপুলে পৌঁছলেন তা ভাবাচ্ছে হাওড়া সিটি পুলিশকর্তাদের।
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি সদর নিশাত পারভেজও নিজের উদ্বেগ গোপন করেননি। তিনি বললেন, “এত পুলিশ থাকা সত্ত্বেও কী করে ঘটনাটি ঘটল, বোঝা যাচ্ছে না। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ডিসি সদর জানান, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা, ওই ব্যক্তি আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর পকেট থেকে ২০ টাকা ও ২২ ডিসেম্বরের গুয়াহাটি-ব্যাঙ্গালোর সিটি ট্রেনের একটি ৪২৫ টাকার টিকিট মিলেছে। টিকিটের সূত্র ধরেই ওই ব্যক্তির পরিচয় জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। |