সেনা ছাউনির কোনও গোপন এলাকাতেই তিনি ঢুকতে পারতেন না। তা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সুবেদার মদনমোহন পালের কাছে সেনা সংক্রান্ত যে-সব গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য ও মানচিত্র পাওয়া গিয়েছে, তা দেখে ফৌজের কর্তারা হতবাক। মদনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর আরও কেউ জড়িত ছিল কি না, তা জানতে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ বা সিআইডি-র হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নথি পাচারের অভিযোগে সম্প্রতি ব্যারাকপুর থেকে প্রাক্তন সুবেদার মদনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফৌজের প্রাক্তন কর্মী হওয়ার সুবাদে সেনা ছাউনির ক্যান্টিন এবং আরও কয়েকটি এলাকায় তাঁর যাতায়াত ছিল। সেই সুযোগেই তিনি ফৌজের নানান তথ্য জোগাড় করে পাকিস্তানে পাচার করতেন বলে অভিযোগ।
কী তথ্য মিলেছে ধৃতের কাছে? কেনই বা সন্দেহ করা হচ্ছে যে, তাঁর সঙ্গে ফৌজের ভিতরের কারও কারও যোগ থাকলেও থাকতে পারে?
সেনা সূত্রের খবর, ব্যারাকপুর, পানাগড়, হাসিমারা সেনা ছাউনির বিভিন্ন তথ্য এবং ছাউনির ভিতরের সবিস্তার ম্যাপ পাওয়া গিয়েছে মদনের কাছে। ওই তিন সেনা ছাউনিতে কোন কোন ইউনিট রয়েছে, তাদের মাথার উপরে কোন রেজিমেন্ট আছে, কোন ইউনিট কবে কোন ছাউনিতে সরে যাবে, নতুন কোন ইউনিট আসবে এই ধরনের খুঁটিনাটি তথ্য জোগাড় করেছিলেন মদন। শুধু ক্যান্টিনে গেলে ওই সব তথ্য কারও হাতে আসার কথা নয় বলেই মনে করেন সেনা অফিসারেরা। তাঁদের সন্দেহ, মদনের সঙ্গে তথ্য পাচারের চক্রান্তে আরও কয়েক জন প্রাক্তন সেনাকর্মী জড়িত থাকতে পারেন। এমনকী ফৌজের ভিতরের কারও কারও জড়িত থাকাও অসম্ভব নয়। জেরায় ধৃত প্রাক্তন সুবেদার স্বীকার করেছেন, পাকিস্তানের তরফে উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কয়েক জন প্রাক্তন সেনাকর্মীকেও এই কাজে লাগাতে বলা হয়েছিল তাঁকে।
ষড়যন্ত্রের জাল কতটা ছড়িয়েছিল এবং কারা কারা ওই চক্রে জড়িত, তা জানতেই সিআইডি-র হাতে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, পাক গোয়েন্দাদের কাছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নথি পাচার করার জন্য প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা পেতেন মদন। তাঁর তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া গিয়েছে। মদনের মাসোহারার টাকা বেশ কয়েক বার মালদহ ও কলকাতার দু’টি ব্যাঙ্কের শাখা থেকে পাঠানো হয়েছে। কারা সেই টাকা পাঠিয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।
পুলিশি সূত্রের খবর, এক পাক গোয়েন্দা অফিসার প্রথমে যে-মোবাইল নম্বর থেকে মদনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, সেটি ইংল্যান্ড থেকে কেনা কোনও সিমকার্ডের নম্বর। মদনকে প্রয়োজনে ওই নম্বরে ফোন করতে বলা হয়েছিল। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই মোবাইল নম্বরটি কখনও পাকিস্তান, আবার কখনও বা আফগানিস্তানে বসে ব্যবহার করেছেন পাক গোয়েন্দারা। ওই ফোনের সবিস্তার তথ্য পেতে ইন্টারপোল মারফত ইংল্যান্ডের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবে সিআইডি।
|