মিলছে জমি ব্যবহারের অনুমতি। শুরু হচ্ছে গঙ্গাপাড় সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের বাকি অংশের কাজ।
ওই প্রকল্পে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হলেও মাত্র ১১৮ মিটার জমি ব্যবহারের অনুমতির জন্য আটকে ছিল হাওড়া সেতুর নীচ থেকে টানা সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প। অবশেষে সেই জট খুলছে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, খুব শীঘ্রই ওই জমি ব্যবহারের জন্য প্রতিরক্ষা দফতর অনুমতি দিয়ে দেবে। সম্মতিপত্র হাতে এলেই দ্রুত শেষ করা হবে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের ওই প্রকল্প। গঙ্গার পূর্ব পাড় জুড়ে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্র হয়ে উঠবে। প্রতিরক্ষা দফতরের পূর্বাঞ্চলের প্রধান মুখপাত্র তরুণকুমার সিঙ্ঘা বলেন, “রাজ্য সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে শর্তসাপেক্ষে ওই জমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”
কী সেই শর্ত? তরুণবাবু বলেন, “প্রতিরক্ষা দফতরের প্রয়োজনে যে কোনও সময়ে ওই কাঠামো ভেঙে দেওয়া হবে। সেই শর্ত মেনেই মুচলেকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার পরেই সবুজ সঙ্কেত মিলেছে।” যে কোনও সময়ে ওই সম্মতির চিঠি সরকারের কাছে চলে আসবে বলে তিনি জানান।
রাজ্যের ক্ষমতায় এসেই গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্য ফেরানোয় জোর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতাকে লন্ডন বানানোর পরিকল্পনার পাশাপাশি শহরের অন্যতম আকর্ষণ গঙ্গার পূর্ব পাড় সাজাতে উদ্যোগী হন তিনি। আর তা তদারকির ভার দেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। বছর আড়াইয়ের মধ্যেই তাঁর সেই স্বপ্ন প্রায় বাস্তবায়নের মুখে। বাম আমলে গঙ্গাপাড়ের কিছুটা অংশে মিলেনিয়াম পার্ক গড়ে উঠেছিল। |
মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, হাওড়া সেতুর নীচ থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু পর্যন্ত পুরো গঙ্গার পাড় সাজিয়ে তুলতে হবে। সেই মতো রাজ্যের পুর দফতরকে ওই কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। প্রথম পর্যায়ে প্রিন্সেপ ঘাট থেকে বাজেকদমতলা পর্যন্ত প্রায় ১.৬ কিলোমিটার অংশে ঝকঝকে রাস্তা তৈরি হয়। সাজানো হয় আলো দিয়ে। গড়া হয় কংক্রিটের বেঞ্চ। প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল ওই প্রকল্পে। বছরখানেক আগেই তা উদ্বোধনও করেন মুখ্যমন্ত্রী। তখনই জানিয়ে দেন, হাওড়া সেতু থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু পর্যন্ত পুরো গঙ্গার পাড় জুড়ে দেওয়া হবে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে। অর্থাত্, মন চাইলে যে কোনও পর্যটক একেবারে হাওড়া সেতু থেকে গঙ্গার পাড় ধরে সোজা মিলেনিয়াম পার্ক, বাবুঘাট, প্রিন্সেপ ঘাট হয়ে পৌঁছে যেতে পারবেন অন্য প্রান্তে। পুরমন্ত্রী জানান, ওই জায়গাগুলোর সংযোগ রক্ষার জন্য কেএমডিএ গঙ্গার পাশ দিয়ে তিনটি সেতু গড়েছে। একটি সেতু মিলেনিয়াম ৩ (আর্মেনিয়ান) থেকে যাচ্ছে মিলেনিয়াম ২-এ। পরের সেতু বেয়ে পৌঁছনো যাবে মিলেনিয়াম ১-এ। শেষে একটি ছোট্ট সেতু। যা নিয়ে যাবে বাবুঘাট সংলগ্ন গঙ্গাপাড়ের পথে। আগামী বছরেই পর্যটকেরা পুরো পথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন বলে জানান পুরমন্ত্রী।
নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী নিজে ওই প্রকল্পের কাজ নিয়ে খুবই উত্সাহী। কাজের অগ্রগতির খবরাখবর নিতে যে কোনও দিন তিনি সৌন্দর্যায়নের কাজ দেখতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। আর তার আঁচ পেয়ে এখন দ্রুত গতিতে সেখানে কাজ চলছে।
এখন হাওড়া থেকে হুগলি সেতু পর্যন্ত গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প গড়ছে পুর দফতর। সহযোগিতা করছে কলকাতা পুর-প্রশাসন ও রাইট্স সংস্থা। আর্মেনিয়ান ঘাটের কাছে গঙ্গার উপরই গড়া হচ্ছে ডেস্ক স্ল্যাব। পুর দফতরের আর্থিক সহায়তায় কাজটা করছে কলকাতা পুরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর। ওই দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, গঙ্গার উপরে প্রায় ৫০০ মিটার পথ জুড়ে ৩৫ ফুট ডেস্ক স্ল্যাব বসানো হচ্ছে। তার উপরে খানিক পর পর রাখা হচ্ছে গ্রানাইটের তৈরি বসার বেঞ্চ। গঙ্গার গায়ে থাকছে সুদৃশ্য রেলিং। আর উল্টো দিকে ১৫ ফুটের ঝকঝকে পথ। তার পাশেই সারি সারি গাছ। প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই পথ সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান ওই ইঞ্জিনিয়ার।
|