সকাল দশটায় সরগরম শিয়ালদহ আদালত। এজলাসে-এজলাসে শুরু হয়ে গিয়েছে মামলার শুনানি। হঠাত্ চার ও পাঁচতলার সমস্ত এজলাস ভরে গেল তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধে। কাশতে শুরু করলেন অনেকেই। বোঝা গেল, সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে কোনও বিষাক্ত গ্যাস। আর তার জেরে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সকালের এই ঘটনায় দীপালি শ্রীবাস্তব নামে এক মহিলা বিচারক-সহ তিন জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিত্সার পরে অন্য দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও দীপালিদেবী সেখানে ভর্তি রয়েছেন। অসুস্থ হয়ে পড়েন এক বিচারপ্রার্থীও।
গ্যাস বেরোনোর আতঙ্কে আদালত চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন প্রায় সকলেই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন। দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, কোনও নিকাশি নালা থেকে গ্যাস বেরিয়েছে।” তবে অনেকের ধারণা, আদালত চত্বরে ঝাঁঝালো গন্ধের অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়েছিল। দমকল-কর্তারা অবশ্য নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
কী হয়েছিল এ দিন?
আইনজীবীরা জানান, সকাল দশটা নাগাদ আদালতের চার ও পাঁচতলায় ঝাঁঝালো গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়। তাতেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। রিমিকা ঘটক নামে এক আইনজীবী বলেন, “লঙ্কা পোড়ার মতো ঝাঁঝালো গন্ধ ছিল। তাতেই শুরু হয় কাশি-বমি।” আইনজীবীরা জানান, পাঁচতলাতেই স্টেনোগ্রাফারদের দফতরে কাজ করছিলেন শর্মিলা মুখোপাধ্যায় নামে এক মহিলা। ঝাঁঝালো গন্ধে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পাঁচতলাতেই দীপালিদেবীর এজলাস।
ঘটনার সময়ে সেখানে হাজির ছিলেন শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী। তিনি বলেন, “মামলার কাজ চলার সময়েই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় বিচারকের। তিনি তখন এজলাস ছেড়ে নিজের চেম্বারে চলে যান। পরে তাঁকে চিকিত্সার জন্য এনআরএস-এ নিয়ে যাওয়া হয়।”
এনআরএস-এর সুপার দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দীপালিদেবী শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছিলেন। তাঁকে ভর্তি করে চিকিত্সা শুরু হয়েছে। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও চিকিত্সকেরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, শর্মিলাদেবী ও বিচারপ্রার্থী ওই ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিত্সার পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই আদালতের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে গন্ধের তীব্রতা কমতে থাকে। ১২টা নাগাদ অবস্থা স্বাভাবিক হলেও অনেক মামলার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। শিয়ালদহ সিভিল বার অ্যাসোসিয়েশন-এর সহ-সম্পাদক গৌতম সরকার জানান, অসুস্থ বোধ করায় অনেকেই আদালত ছেড়ে চলে যান। অসীম কুমার নামে এক আইনজীবী বলেন, “এই ঘটনার জন্য এ দিন দায়রা আদালতে কোনও কাজ হয়নি।”
আদালত চত্বরে এমন ঘটনার কথা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে হাজির হয় এন্টালি থানার পুলিশ ও দমকল। তন্নতন্ন করে গ্যাসের উত্স খোঁজা শুরু হয়। দমকলের অনুমান, নর্দমা থেকে গ্যাস ছড়াতে পারে। এ দিন সকালেই নর্দমা পরিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাই সেখান থেকেই পাইপ বেয়ে গ্যাস উপরের দিকে উঠেছে বলে দমকল-কর্তারা মনে করছেন। তবে নর্দমা থেকে গ্যাস বেরোলে তা শুধু চার ও পাঁচ তলাতেই ছড়াল কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে দমকল-কর্তারা নিশ্চিত করে কোনও উত্তর দিতে পারেননি। দমকলের এক কর্তা জানিয়েছেন, কী থেকে এবং কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাবে না। |