বাস বাতিল হয়েছে চার বছর আগে। সে-ই ২০০৯ সালে। অথচ তার ট্রাফিক আইন ভাঙার ‘কেস’ (অভিযোগ) আসছে এত দিন পর। মাঝে চার-চারটে বছর পার করে। তা-ও আবার একটা-দু’টো নয়। এমন বাসমালিকও আছেন, যাঁরা এই সূত্রে হাতে পেয়েছেন দেড়শো-দু’শো চিঠি। ফলে অভিযোগ-পিছু ১০০ টাকা করে দিতে হওয়া মানেই কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা গুনতে হবে। তার উপর সব কেসের জরিমানা তো ১০০ টাকা নয়। ফলে সব মিলিয়ে বিপুল অঙ্কের জরিমানা (ফাইন) দিতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
বাস মালিকদের দাবি, এমনিতেই ভাড়া না-বাড়া আর তেল ও যন্ত্রাংশের লাগাতার বাড়তে থাকা দামের জেরে তাঁদের ব্যবসার দফারফা। এর উপর এই জরিমানা গুনতে হলে, আক্ষরিক অর্থেই মাথায় হাত পড়বে। তাই এর প্রতিবাদে আগামী সোমবার পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
পরিবেশ দূষণ রুখতে ২০০৯ সালে ১৫ বছর কিংবা তার বেশি পুরনো বাস, মিনিবাস এবং লরির রাস্তায় নামা বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোটর্র্। সেই নির্দেশ কার্যকর করে তৎকালীন বাম সরকার। ফলে ওই বছরের ৩১ জুলাই থেকেই ১৫ বছরের পুরনো বাস, মিনিবাস, লরির রাস্তায় নামা বন্ধ করা হয়। এ রাজ্যে শুধু বাস-মিনিবাসই বাতিল হয় পাঁচ হাজার। যার বদলে নতুন গাড়ি কিনে ব্যবসা চালু রাখেন তাঁরা। মালিকদের অভিযোগ, ওই সমস্ত পুরনো গাড়ির কেসই এখন আসতে শুরু করেছে। যার ফয়সলার জন্য লোক-আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে মালিকদের।
জয়েন্ট কমিটি অফ প্যাসেঞ্জার ট্রান্সপোর্টের সেক্রেটারি জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় জানান, “সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ কেসের চিঠি এসেছে। যার এক-একটির জন্য নিদেন পক্ষে ১০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। অর্থাৎ যিনি ১৫০টি কেসের নোটিস পেয়েছেন, তাঁকে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। এটা মানা অসম্ভব। তাই এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
মালিকদের মূল প্রশ্ন, বাস যদি আইন ভেঙেই থাকে, তা হলে এত দিন পরে কেস পাঠানোর কারণ কী?
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দিলীপ কুমার আদকের যুক্তি, “সমস্ত কেসের নোটিসই আগে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তখন কেউ আমল দেননি। আমাদের কাছে তার রেকর্ড আছে।”
কিন্তু এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ বাস-মিনিবাস মালিকেরা। বরং তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, “সমস্ত কেসের নোটিস কি একই দিনে সকলে অবজ্ঞা করেছেন? তা যদি না-হয়, সে ক্ষেত্রে অবজ্ঞা করার দরুন জমে থাকা কেসগুলি অল্প-অল্প করে আগে ছাড়া হয়নি কেন? একসঙ্গে প্রায় লাখ দেড়েক কেস জমার কারণ কী?”
জয়ন্তবাবুর আরও অভিযোগ, “পুরনো বদলে নতুন গাড়ি নিতে হলে, আগেরটির সমস্ত বকেয়া কেস, রোড ট্যাক্স (পথ কর) ইত্যাদি মিটিয়ে দিতে হয়। যে সব গাড়ির বিরুদ্ধে কেস এসেছে, সেগুলি সবই আমরা বদল করেছি। কেস যদি বকেয়াই থাকে, তা হলে গাড়ি বদলের অনুমতি দেওয়া হল কী ভাবে?” তা ছাড়া, যে কোনও কেসেই ট্রাফিক আইন কবে-কখন-কোথায় ভাঙা হয়েছে, নোটিসে তার উল্লেখ থাকার কথা। কিন্তু পুরনো গাড়ির এই সব কেসের নোটিসে তা-ও নেই বলে তাঁর দাবি।
এ বিষয়ে দিলীপবাবুর উত্তর, “বকেয়া কেস মিটিয়ে তবেই যাতে নতুন গাড়ি নামানোর অনুমতি দেওয়া হয় তা নিশ্চিত করতে পাবলিক ভেহিকেলস্ ডিপার্টমেন্টকে কেসের তালিকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তখন তা কর্যকর করা হয়নি। পুরনো কেসের যাবতীয় রেকর্ড রয়েছে। মালিকরা ইচ্ছা করলেই দেখতে পারেন।”
কিন্তু এই যুক্তিতেও সন্তুষ্ট নন মালিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, এতে রাজ্যের ভাঁড়ার ভরবে ঠিকই, কিন্তু মাথায় হাত পড়বে মালিকদের। আর তার প্রিতবাদেই পথে নামা। |