বড়দিনের শহরে ফিরে আসছে পুরনো কলকাতার স্মৃতি। গ্রেট ইস্টার্নের হাত ধরে। তবে শুধু দু’দিনের জন্য!
এক সময় গ্রেট ইস্টার্ন বেকারির কেক এবং আম-বাঙালির বড়দিন ছিল সমার্থক। নিউ মার্কেটের নাহুমের পাশাপাশি গ্রেট ইস্টার্ন ছিল তার নিজের মেজাজে। মহাকরণের কেরানি, সওদাগরি অফিসের বড়বাবু কিংবা নামী সাংবাদিক-লেখক, বড়দিনের আগে গুটি-গুটি হাজির হতেন সব্বাই। চিরাচরিত প্লাম কেক নিয়ে ঘরমুখো হতেন তাঁরা। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে এ হেন বেকারি বন্ধ হয়ে যায়। তার বদলে বাঙালির বড়দিনে ঢুকে পড়ে এক গাদা কনফেকশনারি-চেন। কিন্তু এ বারটা তেমন না-ও হতে পারে। ললিত সুরি হসপিটালিটি গ্রুপ গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল কিনে নেওয়ার পর এ বার বড়দিনে বেকারি খুলছে তারা। ললিত-গ্রেট ইস্টার্নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বছর ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর খোলা থাকবে হোটেলের বেকারি। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মিলবে চিরাচরিত প্লাম কেক, ফ্রুট কেক, চকোলেট ও কুকিজ।
|
গত ১৯ নভেম্বর নব কলেবরে গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময়ই ললিত সুরি হসপিটালিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জ্যোত্স্না সুরিকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন, বড়দিনে কলকাতাকে গ্রেট ইস্টার্নের বেকারি ফিরিয়ে দিতে। সেই অনুরোধ রেখেই এ বার যীশু-উত্সবের আগে বেকারি খুলছে গ্রেট ইস্টার্ন। শুধু তাই নয়, দু’দিনে কেক-কুকিজ বিক্রির টাকাও দুঃস্থদের কল্যাণে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করা হবে বলে সংস্থার মুখপাত্র জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আগেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেন। মুখ্যমন্ত্রীও তাঁদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রত্যুত্তর দিয়েছেন। এ ছাড়া, তাদের কুকিজের প্রথম ভাগটা বিলিয়ে দেওয়া হবে দুঃস্থ শিশুদের মধ্যে।
তবে এ সবের বাইরে বাঙালি ব্যস্ত তার স্মৃতি নিয়েই। এক সময়ে গ্রেট ইস্টার্ন বেকারির নিয়মিত ক্রেতা ছিলেন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বললেন, “বাস থেকে নেমে আনন্দবাজার পত্রিকা অফিস যাওয়ার পথে ওয়াটারলু স্ট্রিটে ঢুকতেই এলাকাটা রুটির গন্ধে ভরে থাকত। বিকেলে খাওয়ার জন্য কেক-পেস্ট্রি কিনতাম। আর বড়দিনে প্লাম কেক।” এক সময় রুটির দৌড়ে ফিরপো এবং গ্রেট ইস্টার্নের লড়াই ছিল। “পরে ফিরপো বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রেট ইস্টার্ন রয়ে গিয়েছিল।”মনে করিয়ে দিচ্ছেন নীরেন্দ্রনাথবাবু। তবে নতুন গ্রেট ইস্টার্ন বেকারিতে কিন্তু পুরনো সেই যন্ত্রপাতি ব্যবহার হবে না। হোটেলের মুখপাত্র অমৃতা রায় জানান, নতুন করে বেকারি তৈরি হচ্ছে। যন্ত্রপাতিও নতুন। পুরনো যন্ত্রপাতিগুলি বেকারিতে সংরক্ষণ করা হবে। |