সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং সাংসদ কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে আগেই নানান মামলা হয়েছে। এ বার তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল প্রভিডেন্ট ফান্ড দফতরও। অভিযোগ পিএফ ফাঁকির। অভিযোগ সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গেরও। বৃহস্পতিবার রাতে পিএফ-কর্তৃপক্ষের তরফে বিধাননগরের পাঁচ নম্বর সেক্টর থানায় এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে সারদা সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কেও।
|
চন্দননগর আদালতের
পথে কুণাল ঘোষ। শুক্রবার।
ছবি: তাপস ঘোষ |
প্রভিডেন্ট ফান্ড দফতর সূত্রের খবর, সারদার মিডিয়া শাখায় প্রায় ২৫০ কর্মী কাজ করতেন। নিয়ম অনুযায়ী পিএফ বাবদ তাঁদের সকলের কাছ থেকেই টাকা কেটে নেওয়ার কথা। কিন্তু সব কর্মীর বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ড খাতে টাকা কাটা হয়নি। এটা যদি অভিযোগের একটা দিক হয়, অন্য দিকটা আরও গুরুতর। সেটা হল, বেশ কিছু কর্মীর বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ড বাবদ টাকা কাটা হলেও পিএফ অফিসে তা জমা দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সারদা গোষ্ঠীর ওই সংস্থার (বেঙ্গল মিডিয়া) বোর্ড অব ডিরেক্টর্স-এর বিরুদ্ধে বিধাননগরের পাঁচ নম্বর সেক্টর থানায় অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ দায়ের করেছেন পিএফ-কর্তৃপক্ষ।
সারদা কাণ্ডের অন্য একটি মামলায় কুণালবাবুকে এ দিন চন্দননগর আদালতে তোলে পুলিশ। সরকার পক্ষের আইনজীবী সামিয়ুল হক জানান, পঙ্কজ মান্না নামে চুঁচুড়ার সুকান্তনগরের এক বাসিন্দা সারদা সংস্থায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি টাকা ফেরত পাননি। ওই মামলার সূত্রে কুণালবাবুকে জেরা করার আবেদন জানায় পুলিশ। ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম পূর্বা কুণ্ডু ওই মামলায় কুণালবাবুকে চার দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টেও সারদা মামলার শুনানি হয়েছে। সারদা সংস্থার বিপুল তছরুপের তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে দায়ের করা মামলার শুনানিতে এ দিন যোগ দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ইডি)। ইডি-র দাবি, মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী বেআইনি টাকায় কেনা সম্পত্তি একমাত্র তারাই বাজেয়াপ্ত করতে পারে। ইডি-র পক্ষে সোমনাথ বসু বলেন, তাঁরা এখনই সারদার স্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে চান। কিন্তু এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্য সরকার অবশ্য পাল্টা দাবি করেছে, তারাও ওই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে বলে আইনে বলা আছে। এবং রাজ্য সরকার তা করছেও।
বিভিন্ন আদালতে মামলার পাশাপাশি এ দিন সারদা কাণ্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে সিপিএম। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির ডাকে সিপিএম-কর্মীরা সল্টলেকে সারদার মূল অফিসে প্রতীকী দখল অভিযানে নামেন। মিছিল করে সারদার অফিসের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে রাস্তায় তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। পুলিশি বেষ্টনী ভেঙে সিপিএম-কর্মীরা সারদার ওই অফিসের বাইরে তাঁদের পতাকা লাগিয়ে দেন। সারদা কাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন দাবি সংবলিত পোস্টারও সেঁটে দেওয়া হয় অফিসের দেওয়ালে। সারদা-কর্ণধারের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। এর পরে এক দল কর্মী অফিসের অন্য প্রান্ত দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো মারপিট শুরু হয়ে যায়। এই ঘটনায় দু’পক্ষের কয়েক জনের অল্প আঘাত লাগে। |