সব কিছু ঠিকঠাক চললে জুনিয়র ক্রিকেট বয়স ভাঁড়ানোর অপরাধে সিএবি যে তেরো ক্রিকেট কোচিং সেন্টারকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে, তাদের অধিকাংশের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন পড়তে চলেছে। যে আবেদন করতে চলেছেন স্বয়ং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। যদিও সিএবি নিজেদের স্টান্সে এখনও প্রায় অনড়।
যে তেরোটা ক্রিকেট কোচিং সেন্টারকে এক বছরের নির্বাসনে পাঠিয়েছে সিএবি, সেখানে বাকিদের সঙ্গে ভিডিওকন স্কুল অব ক্রিকেট আছে। দৈনন্দিন সম্পর্ক না থাকলেও সৌরভ ভিডিওকনের মুখ্য কর্তা, এবং বৃহস্পতিবার সিএবি-র রায়ের পর তাঁর নামও জড়িয়ে যায় প্রচারমাধ্যমে। যা নিয়ে আনন্দবাজারকে সৌরভ এ দিন রাতে বললেন, “অ্যাকাডেমির ব্যাপারে আমি অত জড়িত থাকি না। কিন্তু জড়িয়ে তো যাবেই। তবে এটাও বলব যে, অ্যাকাডেমির খুব দোষ নেই। কারণ একই প্লেয়ারদের স্ক্রুটিনি সিএবি-ও করেছে।” সঙ্গে সংযোজন, “সিএবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি আবেদন করব। সরকারি ভাবেই আবেদন করব।” |
যা শুধু সৌরভ নন, সৃষ্টি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিও করছে। বাংলা ক্রিকেটে বর্তমানে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়ের মতো ক্রিকেটার দিয়েছে সৃষ্টি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। চলতি রঞ্জি মরসুমে রেলওয়েজের হয়ে প্রচুর রান করা অরিন্দম ঘোষেরও এখানেই হাতেখড়ি। অ্যাকাডেমির কর্ণধার ও প্রধান কোচ প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিচ্ছেন, সিএবি-র সঙ্গে বিরোধে তাঁরা যেতে চান না। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকলে তাঁরা সেটাই করবেন। বলেও দিলেন, “নিজেদের জেদ ধরে রেখে ক্রিকেটারদের খেলা বন্ধ করার পক্ষপাতী আমরা নই।” আর মেনল্যান্ড সম্বরণ অ্যাকাডেমি তারা কী করছে? ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, “আগে সিএবি-র চিঠি পাই। সরকারি ভাবে জানি, রায়ে কী বলা আছে। তার পর ঠিক করব।”
ঘটনা হল, সিএবি যেমন কোচিং সেন্টারদের বিরুদ্ধে দেওয়া নির্বাসনের রায় পুনর্বিবেচনার ব্যাপারটা খোলা রেখেছে, ঠিক তেমনই নতুন করে কিছু ভাবতে গেলে বেশ কিছু ব্যাপার দেখাও হবে।
যেমন কোচিং সেন্টারের পক্ষ থেকে কাউকে দায়িত্ব নিয়ে বলতে হবে যে ভবিষ্যতে এমন কিছু আর ঘটবে না। যেমন সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টারের অতীত রেকর্ড। দেখা হবে, অতীতে কখনও সেই কোচিং সেন্টারের ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল কি না। যেমন বাংলা ক্রিকেটে সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টারের অবদান। দেখা হবে, বাংলা দলের সাপ্লাই লাইন হিসেবে সেই কোচিং সেন্টার কেমন করেছে। যেমন কোচিং সেন্টারের সাব-জুনিয়র, জুনিয়র ক্রিকেটে পারফরম্যান্স। ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান সমর পাল বলছেন, “ক্রিকেট কমিটি যে শাস্তি দিয়েছে, সেখান থেকে সরবে না। পুনর্বিবেচনার ব্যাপারটা যদি হয়, তা হলে সেটা ওয়ার্কিং কমিটি দেখবে। আমরা নই।” |
সিএবি যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় আবার বললেন, “আগে আবেদন জমা পড়ুক, তার পর ভাবব।” শোনা গেল, জুনিয়র কমিটির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের আবাসন ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সিএবি কর্তাদের বারবার বলেছেন যে, বয়স ভাঁড়ানো না আটকাতে পারলে খেলাটাই শেষ হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে ধরা পড়লে কোচিং সেন্টার ও ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে কী আইন হবে, সেটা বৃহস্পতিবার নিজে বৈঠকে পাশ করিয়ে গিয়েছেন। সিএবি আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, যে সব কোচিং সেন্টার একজন অভিযুক্ত ক্রিকেটারকেও শুনানিতে উপস্থিত করেনি, তাদের ক্ষমা করা হবে না। পুনর্বিবেচনাও হবে না তাদের ক্ষেত্রে।
বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। গত রাতেই জাতীয় মিডিয়ায় অযাচিত ভাবে নাম জড়িয়ে যেতে দেখে সৌরভ ফোন করেন সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়াকে। শোনা গেল, সিএবি থেকে সৌরভকে বোঝানো হয় যে এর সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। দরকারে সিএবি সেটা মিডিয়ায় পরিষ্কারও করে দেবে। এ দিন সকাল থেকে বাকি অ্যাকাডেমিতেও উত্তেজনা বাড়তে থাকে। কিছু অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে সিএবি-র আইনি রাস্তায় হাঁটার কথাও বলা হতে থাকে। যার পাল্টা দিয়ে দেয় সিএবি। বলে দেয়, কেউ চাইলে আইনের রাস্তায় যেতেই পারে। কিন্তু তারা যেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি নিয়ে না আসে। দু’টো একসঙ্গে হবে না! আরও বলা হয়, আদালতে যদি সিএবি হেরেও যায়, যদি টুর্নামেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাতে সিএবি-র ক্ষতি হবে না। কারণ সাব-জুনিয়র বা জুনিয়র টুর্নামেন্ট একটাও সিএবি আয়োজিত টুর্নামেন্ট নয়।
আগামী দু’এক দিনে উত্তেজনা এখন কমে না বাড়ে, সেটাই শুধু দেখার। |