জুনিয়র ক্রিকেটে বয়স ভাঁড়ানোর অপরাধে অভিযুক্ত খুদে ক্রিকেটার ও কোচিং ক্যাম্পদের কঠিন শাস্তি দিল সিএবি। যা শুধু দৃষ্টান্তমূলক নয়, একই সঙ্গে অভূতপূর্বও।
অতীতে বয়স ভাঁড়ানোর কলঙ্ক দেখেছে সিএবি। কিন্তু সেই অপরাধে বিয়াল্লিশ জন খুদে ক্রিকেটার এবং তেরোটা কোচিং সেন্টারকে নির্বাসনে (কয়েক মাস আগে যারা ধরা পড়েছিল) কখনও পাঠায়নি সিএবি। যা বৃহস্পতিবার বৈঠকের শেষে পাঠানো হল। অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের দু’বছরের জন্য নির্বাসন। আর কোচিং ক্যাম্পদের এক বছরের জন্য। যেখানে আছে ভিডিওকন স্কুল অব ক্রিকেট, মেনল্যান্ড সম্বরণ অ্যাকাডেমির মতো নামীদামি ক্রিকেট কোচিং সেন্টারও।
শুধু তাই নয়, বৈঠক শেষে চরম হুঁশিয়ারিও কোচিং সেন্টার এবং ক্রিকেটারদের সার্বিক ভাবে দিয়ে রাখল সিএবি। বলে দেওয়া হল, যা শাস্তি হয়েছে সেটা কিছু না। নামমাত্র। আগামী বছর থেকে এমন ঘটলে, কপালে অনেক বেশি দুঃখ আছে।
বয়স ভাঁড়িয়ে ধরা পড়লে অভিযুক্ত ক্রিকেটারকে তখন পাঠানো হবে আজীবন নির্বাসনে! এবং কোচিং সেন্টার ও কোচকে নির্বাসিত করা হবে দশ বছর।
|
আগামী অম্বর রায় সাব-জুনিয়র এবং অনূর্ধ্ব সতেরো টুর্নামেন্টের আবেদনপত্রের সঙ্গে এই সতর্কবার্তা আগাম দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আরও বলে দেওয়া হচ্ছে, বয়স ভাঁড়িয়ে ভবিষ্যতে কেউ ধরা পড়লে তার সম্পূর্ণ দায় নিতে হবে কোচিং সেন্টারকে। সিএবি কোনও দায় নেবে না। কোনও ক্রিকেটার প্রকৃত জন্মনথি জমা দিচ্ছে কি না, সেটাও দেখতে হবে কোচিং সেন্টারকেই। বয়স ভাঁড়ানো আটকাতে আরও কিছু কিছু কড়া নিয়ম আনা হচ্ছে। যেমন, স্কুল সার্টিফিকেট চাওয়া হবে ক্রিকেটারদের। প্রধান শিক্ষকের সই সমেত। দরকারে স্কুলের মাইনের বইও চেয়ে পাঠাতে পারে সিএবি। তা ছাড়া ক্রিকেটারকে ছবি সই করিয়ে আনতে হবে গেজেটেড অফিসারকে দিয়ে। তবে সিএবি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের প্রশ্ন।
ক্রিকেট কমিটির বৈঠকে এ দিন এ বছর থেকেই অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের তিন এবং কোচিং ক্যাম্পদের দু’বছর নির্বাসনে পাঠানোর দাবি ওঠে। কিন্তু কথাবার্তা বলে দেখা যায় যে, ক্রিকেটারদের এখন তিন বছরের নির্বাসনে পাঠানোর অর্থ তার ক্রিকেটজীবনই শেষ হয়ে যাওয়া। কারণ অনূর্ধ্ব সতেরো টুর্নামেন্টটাও সে আর খেলতে পারবে না। ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান সমর পাল এ দিন পরে বললেন, “আমরা এমন একটা ব্যবস্থা নিতে চেয়েছি যা সবার মনে থাকবে।” আর সিএবি যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “এটার দরকার ছিল। অনেক দিন ধরে জুনিয়র ক্রিকেটে এ সব চলছিল।”
যে রায় শোনার পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায় কোচিং সেন্টারগুলোতে। যে অ্যাকেডমি থেকে উঠে এসে বর্তমানে বাংলা খেলছেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়রা, সেই সৃষ্টি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি-র কর্তারা বলছেন, অ্যাকাডেমি তুলে দেবেন! “একজন ক্রিকেটারের জন্য ক্যাম্প নির্বাসিত হলে, ক্যাম্প রাখারই দরকার নেই,” বলে দিচ্ছেন সৃষ্টির অন্যতম প্রধান প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিওকনের অন্যতম মুখ্য কর্তা, প্রাক্তন বাংলা ক্রিকেটার স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ও ক্ষুব্ধ সিএবি-র সিদ্ধান্তে। |
|
অপরাধ কী
অম্বর রায় সাব-জুনিয়র ও জুনিয়র ক্রিকেটে প্রায় পঞ্চাশ খুদের বয়স ভাঁড়ানো।
অপরাধের শাস্তি
অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের দু’বছরের নির্বাসন। জড়িত কোচিং ক্যাম্পদের এক বছরের।
ফের ঘটলে
ক্রিকেটারকে আজীবন নির্বাসন। কোচিং ক্যাম্প ও কোচকে দশ বছরের।
|
সিএবি-কে পাল্টা
“সিএবি তো আমাদের মেডিক্যাল করেছিল। দায়টা তা হলে ওদেরও থাকে...
সিএবি-র উচিত ছিল এ বছর কোচিং সেন্টারদের নিয়মকানুন ধরিয়ে
পরের বছর থেকে শাস্তি চালু করা।”
স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়
(প্রাক্তন বাংলা ক্রিকেটার ও ভিডিওকন স্কুল অব ক্রিকেটের অন্যতম মুখ্য কর্তা) |
|
স্নেহাশিস বলে দিচ্ছেন, “সিএবি-র উচিত ছিল এ বছর কোচিং সেন্টারদের নিয়মকানুন ধরিয়ে পরের বছর থেকে শাস্তি চালু করা।” সঙ্গে স্নেহাশিসের সংযোজন, “কী করব ভাবিনি। আগে রায়ের কাগজ পাই। তবে এটা মানতে পারছি না। সিএবি তো আমাদের মেডিক্যাল করেছিল। দায়টা তা হলে ওদেরও থাকে। আর যারা বয়স ভাঁড়ায়, তাদের তিন-চারটে করে বার্থ সার্টিফিকেট থাকে। আমরা কী ভাবে ধরব?” মেডিক্যালের যে দায় আবার ওড়াচ্ছেন সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। বলে দিচ্ছেন, “মেডিক্যাল কোথায় হয় এখন? ও সব পয়েন্ট ক্রিকেটে হত এক সময়।” আর সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়— তিনি কী বলছেন? “আমার ক্যাম্পের ছেলে আছে বলে আমি তো কমিটিতে থেকেও বৈঠকে যাইনি। রায় মানছি।”
রায়ে বলা আছে, কোচিং ক্যাম্পরা চাইলে সিএবি-র ওয়ার্কিং কমিটির কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবে। যা দেখে কোনও কোনও কোচিং ক্যাম্প কর্তা রাতে আশ্বান্বিত হয়ে পড়লেও, জানা গেল তাতে হয়তো কোনও লাভ হবে না। ঠিক তেমনই অক্টোবর থেকে রায় দেওয়ার সময় ডিসেম্বরে টেনে আনাও নাকি পূর্বনির্ধারিত ব্যাপার। যাতে কোনও কোচিং সেন্টার প্রভাবশালী মহলকে ব্যবহার করে পার না পেতে পারে।
এক সিএবি কর্তা স্পষ্ট করে দিলেন ব্যাপারটা। বলে দিলেন, “অম্বর রায় শুরু জানুয়ারি থেকে। কিছু করার জন্য এদের হাতে সময় কোথায়!” |