সকালে নিজেদের লোয়ার অর্ডারে পাঁচ উইকেট ১৬ রানে হারানোর বদলা— বিকেলে বিপক্ষের টপ অর্ডারের পাঁচ উইকেট ১৬ রানে ফেলে দেওয়া! রহস্যটা কী? বৃহস্পতিবার জো’বার্গে ভারতীয় পেসের এই পাল্টা জবাবের নায়ক যিনি সেই ইশান্ত শর্মার মন্তব্য, “ধৈর্য ধরে সারাক্ষণ ঠিক লাইন-লেংথে বল করে যাওয়া। বিশেষ করে ধৈর্যটাই এই বোলিং সাফল্যের চাবিকাঠি।”
তৃতীয় দিনের পরিকল্পনাও এ দিন মাঠে দাঁড়িয়েই নিয়ে নিলেন দিল্লির ঝাঁকড়া চুলের দীর্ঘকায় পেসার। টিভি ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রীকে বলে দিলেন, “কাল সকাল-সকাল পাঁচ উইকেট নিতে চাই। মানে আরও দু’টো তুলতে হবে আমাকে।” তবে বলতে পারছেন না শুক্রবার ম্যাচের গতিপ্রকৃতি কোন দিকে যেতে পারে। “সেটা আমি ঠিক জানি না। টেস্টের এখনও অনেক বাকি,” বললেন ইশান্ত। চায়ের পর ঠিক কী বোলিংটা করল ভারতীয় পেসার ত্রয়ী যাতে ১৩০-১ থেকে ৩৯ ডেলিভারির মধ্যে ১৩৬-৬ হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা? কী আলাদা বৈশিষ্ট ওই সাড়ে ছ’ওভারের স্পেলের? ইশান্তের ব্যাখ্যা, “কোনও আলাদা বৈশিষ্ট নেই। ওই স্পেলটাই শুধু নয়, ওদের ইনিংসের পুরোটাই আমরা নিখুঁত লাইনে বল করেছি। আর ধৈর্য ধরে থেকেছি, টাইট লেংথ খেলতে খেলতে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কখন ধৈর্যচ্যুতি ঘটে! চায়ের পর সেটাই ঘটেছে।” |
যে পিচের বাউন্সে সমস্যায় আমলাও। ছবি: রয়টার্স। |
কালিসদের ছ’টা উইকেটের মধ্যে নব্বই শতাংশ পড়েছে ফুল পিচড্ ডেলিভারিতে। অরুণলাল টিভিতে বলছিলেন, “স্মিথের আউটের বলটা জাহির এতটাই নিঁখুত লাইনে ফুল পিচড্ করেছে যে, ব্যাটসম্যানকে পা অফ স্টাম্পের বাইরে আনার সুযোগই দেয়নি। তাতেই এলবিডব্লিউ।” ইশান্তও বলছেন, “বিদেশের গতি আর বাউন্সের পিচে এই ফুল পিচড্ ডেলিভারি করা দরকার। যেটা ভারতীয় উইকেটে করার দরকার পড়ে না। ফলে বিদেশে এলে নেটে আমরা এই বিশেষ লাইনটার আলাদা ভাবে অনুশীলন করি।” সঙ্গে তিনি অবশ্য যোগ করলেন, “ওয়ান্ডারার্সের পিচে এ দিন কয়েকটা বল একটু নিচু হয়েছে। কয়েকটা বল একটু বেশি লাফিয়েছে। উইকেটে কিছু রাফ-ও তৈরি হয়েছে।”
যা অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হাসিম আমলা টিভির পর্দায় বলে গেলেন, “এই উইকেটে ব্যাট করা এ দিন একটু কঠিন হয়েছে। পরে আরও হবে। ফলে প্রথম ইনিংসের লিডটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হবে। ইশান্তের বলটা জাজমেন্ট দিয়ে ছেড়ে দেওয়াটা আমার বোকামি হয়েছে। তার পরেই ওদের তিন পেসার মারাত্মক হয়ে উঠল।”
যে তিনের মধ্যে বাংলার মহম্মদ শামি সম্পর্কে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা ফের উচ্ছ্বসিত। অরুণ লাল বললেন, “ওর কন্ট্রোল তো সব সময়ই সুপার্ব। এখন তার সঙ্গে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল করার আত্মবিশ্বাসটাও অনেক বেড়ে গিয়েছে। এ দিন রিভার্স তো বটেই, শামি লেট রিভার্সও করেছে। পিচে পড়ার পরেও হাওয়ায় মুভ করেছে কয়েকবার।” আর শামির নাম সরাসরি না করে তাঁর সতীর্থ ইশান্ত বলে দিলেন, “এই পর্যায়ের ক্রিকেটে ভাল বোলিংয়ের জন্য একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোটা খুব দরকার। পিঠে সতীর্থের সাহায্যের হাত থাকার চেয়ে আর ভাল কিছু অনুভূতি হয় না। যে অনুভূতি এ দিন আমাদের ছিল।” |