দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় দল যাওয়ার আগে পেসারদের রিভার্স সুইং পাওয়া নিয়ে অনেক কথা শুনছিলাম। কিন্তু খুব একটা ভরসা পাইনি। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার আউটফিল্ড যা, তাতে রিভার্স করার সম্ভাবনা কম। আউটফিল্ডটা রাফ নয়। বলের পালিশটা তাই সে ভাবে ওঠে না।
কিন্তু তার পরেও দেখছি ভাল রকম রিভার্স হচ্ছে! মহম্মদ শামি, জাহির খানরা রিভার্স করিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলে দিল! কারণ হিসেবে মনে হচ্ছে, ওয়ান্ডারার্সের উইকেট। উইকেটের রাফে পড়ে বলের পালিশ উঠছে, রিভার্স করাতেও অসুবিধে হচ্ছে না জাহিরদের।
মহম্মদ শামি দু’টো উইকেট পেল। ওর আবার শুধু রিভার্স নয়, লেট রিভার্সও হচ্ছে! অনেকে বলতে পারেন, জাহির তা হলে কী এমন করেছে? পেয়েছে তো একটা উইকেট। কিন্তু আমি বলব, দক্ষিণ আফ্রিকানদের আগাগোড়া ঝামেলায় ফেলে যাচ্ছে জাহির। আর ও যদি রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করতে আসে এ বার, দেখবেন বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের সমস্যা কিন্তু আরও বাড়বে।
তবে শুধু রিভার্স সুইং নয়। দিনের শুরুতে ব্যাকফুটে চলে গিয়েও ভারতকে যে আবার দিনের শেষে ফ্রন্টফুটে দেখাচ্ছে তাতে রিভার্সের সঙ্গে আরও একটা ব্যাপার আমি জুড়ব। সাবেকি সিমে ফেলে কাট করানো। যেটা করাচ্ছে ইশান্ত শর্মা। |
ইশান্তদের সৌজন্যে ব্যথাতুর তাঁর টিমও। |
সংক্ষেপে, কাট আর রিভার্সেই স্টেইনদের ভয়াবহ পেসের উত্তর দিচ্ছে ভারত।
একটা সময় দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো টিমের পাঁচ উইকেট কি না মাত্র ষোলো রানে ফেলে দিচ্ছে ইশান্ত-শামিরা! তা-ও আবার ওদের নিজেদের দেশে। হাসিম আমলা যে বলে বোল্ড হল, সেটা ইশান্তের স্টক বল। অনেক বার ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করে এ ভাবে বল ভিতরে এনে স্টাম্প ছিটকে দিয়েছে ও। আমলাও বুঝতে পারেনি, ছাড়তে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেল। পরের বলেই ইশান্ত আবার পেয়ে গেল জাক কালিসকে। এই বলটাও কাট করে ভেতরে এল, কালিস এলবিডব্লিউ। পরের ওভারেই জাহির তুলে নিল স্মিথকে। দক্ষিণ আফ্রিকা আচমকা ১৩০-১ থেকে ১৩০-৪! শামি এসে এর পর দুমিনি আর ডে’ভিলিয়ার্সকে তুলে নেওয়ায় স্কোরটা দাঁড়াল ১৪৬-৬! ভাবা যায়!
তবু বলব, প্রতিপক্ষের আরও ঘাড়ে চেপে বসার সুযোগ ভারত ফেলে এল। কেন, পরে আসছি। আগে ইশান্তের ব্যাপারে একটু বলতে চাই। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে বেধড়ক মার খাওয়ার পর ওর আত্মবিশ্বাস বলে কিছু আর ছিল না। কিন্তু তার পরের রঞ্জিটাই মনে হয় ওর সব আবার পাল্টে দিয়েছে। দিল্লি-র হয়ে ন’টা উইকেট পেয়েছিল ওই রঞ্জিতে। আপনি যদি ন’উইকেট পান, আত্মবিশ্বাস এমনিই চলে আসবে। তা সেটা যতই ঘরোয়া ক্রিকেটে হোক না কেন। প্লাস, আমার মনে হয় ইশান্ত ওর আগের ছন্দটাও পেয়ে গিয়েছে রঞ্জিতে লম্বা স্পেলে বল করে। জাহিরকে দেখেও ভাল লাগছে। ও পেস-ব্যাটারির মেন্টর। নিজে ভাল বল করছে, বাকিদেরও বুঝিয়েসুঝিয়ে দিচ্ছে। শামি একবার শর্ট করায় দেখলাম ডেকে বোঝাল। পরের বল থেকে ফুল লেংথে করতে থাকল শামি। সবচেয়ে বড় কথা, জাহির আসার পর টিমের বোলিংয়ে ডিরেকশন বলে একটা ব্যাপার এসেছে। অনেক বেশি আগ্রাসীও মনে হচ্ছে এখন ভারতীয় বোলিংকে। তার উপর জাহির হচ্ছে রিভার্স সুইংয়ের মাস্টার। ওর কাছ থেকে শামি অনেক কিছু শিখতে পারবে। |
চোট পেয়ে যন্ত্রণাক্লিষ্ট গ্রেম স্মিথ। |
কিন্তু দু’প্লেসি আর ফিলান্ডারকে ৬৭ রানের পার্টনারশিপ করতে দেওয়ার কোনও মানে হয় না। মনে রাখতে হবে এই উইকেটে তিরিশ রানের লিডও অনেক বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেড়শো রানে ওদের ছ’টা চলে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল যে ভারতেরই পঞ্চাশ-ষাট রানের লিড থাকবে। কিন্তু সেটা মনে হচ্ছে হবে না। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দু’প্লেসির ক্যাচ স্লিপে ফেলে দিল রোহিত শর্মা। ওই ক্যাচটা ধরতে পারলে শামিরও এ দিন তিন উইকেট হয়ে যেত।
যাক গে, শুক্রবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংকে শেষ করে দিতে হবে। আমার ধারণা, এই উইকেটে যদি ২৩০-৪০ রান ওদের দ্বিতীয় ইনিংসে টার্গেট দেওয়া যায়, ভারতের ম্যাচ জেতা উচিত। চাপেই ওরা পারবে না। চাপের সামনে ভেঙে পড়াটা দক্ষিণ আফ্রিকার বরাবরের ট্র্যাডিশন। কিন্তু ওই আড়াইশো তুলতে হলে বিরাট কোহলির আরও একটা বড় ইনিংস খেলা খুব দরকার। কোহলি, রাহানে আর কিছুটা পূজারা ছাড়া আর কাউকে দেখেই মনে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার পেস সামলাতে পারছে বলে। শিখর ধবন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কেউ না। তাই বলব, ভারত পাল্টা লড়াই দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এখনও ম্যাচ পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। |