চায়ের আগে মনে হচ্ছিল, ওয়ান্ডারার্সে মাটি হারিয়ে ফেলেছে ভারত। ২৮০-র বিরুদ্ধে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা তখন ১১৮-১। বস্তুত দ্বিতীয় দিনের সকালেই ভারতীয়রা জো’বার্গে মাটি হারিয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে কোনও তেমন মারাত্মক লজ্জা ছিল না। বিদেশের পেস আর বাউন্সের পিচে সকালের নতুন বলে ভারতের ব্যাটিংয়ের লেজ প্রকট হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার পর ধোনির বোলাররা দক্ষিণ আফ্রিকানদের ঘরের মাঠেও ওদের প্রতিটা রান করতে ঘাম করে দিচ্ছিল। স্মিথ-আমলার বড় জুটিটারও বেশিরভাগ রানই হয় ব্যাটের কানায় লেগে, কিংবা স্লিপ-সরণির মধ্য দিয়ে অনিচ্ছাকৃত স্টিয়ারের মাধ্যমে অর্জিত।
যার বদলাই যেন ভারতীয় পেস আক্রমণ নিল চায়ের পরপরই। ইশান্ত, জাহির, শামি— ত্রিফলায় একটা সময় মাত্র সাড়ে ছয় ওভারে, ১৬ রানে গেঁথে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার পাঁচ জন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। আমলা-কালিস-স্মিথ-দুমিনি-ডে’ভিলিয়ার্স। এমনকী প্রথম তিন জন ওয়ান্ডারার্স ড্রেসিংরুমের পথের লম্বা টানেলে সেঁধিয়ে গেল ৯ বলের মধ্যে, স্কোরবোর্ডে কোনও রান যোগ হওয়ার আগেই। আমার মতে, বৃহস্পতিবার ভারতীয় পেস বোলারদের চাপের মুখেও এতটুকু ধৈর্য না হারিয়ে ভাল লাইনে বল করে যাওয়ারই পুরস্কার এটা। টেস্টটা আপাতত দারুণ ভাবে সমান-সমান অবস্থায় আছে। কারও দিকে সামান্যতম বেশি ঝুলে নেই।
জাহির বনাম গ্রেম স্মিথ—দু’দলের দুই তারকার কামব্যাক ডুয়েলটাও জমাটি হল। স্মিথ হাফসেঞ্চুরি পেলেও সেটা ওকে অশ্বিনের স্লিপে ফস্কানোর দাক্ষিণ্যে। গোড়ার দিকে একটার বেশি উইকেট ফেলতে না পারলেও তিন ভারতীয় পেসারই এত ভাল করেছে যে, অনেক দিন পর ধোনি আক্রমণে প্রথম স্পিনার আনার কথা ভাবল ৩১ ওভারে মাথায় এসে! |
পাঁচ বলের কিসসা
৩৮.১ থেকে ৪৪.৩। ৩৯ বলে ১৬ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার পাঁচ উইকেট |
আমলা
৩৮.১ ওভার আমলা বো ইশান্ত
অফ স্টাম্পের বাইরে বল ছাড়তে গিয়ে বোল্ড।
সিমে পড়ে বল ভিতরে ঢুকে আসে। |
কালিস
৩৮.২ ওভার কালিস এলবিডব্লিউ ইশান্ত
ফুল পিচড বল।
সিমে পড়ে বল সামান্য ভিতরে ঢোকে। |
|
স্মিথ
৩৯.৩ ওভার স্মিথ এলবিডব্লিউ জাহির
ফুল লেংথ বল।
বাঁ-হাতির জন্য লেট ইনকামিং ডেলিভারি। |
ডে’ভিলিয়ার্স
৪৪.৩ ওভার ডে’ভিলিয়ার্স এলবিডব্লিউ শামি
ফুল লেংথ বল।
পিচে হিট করে ভিতরে ঢুকে আসে। |
|
৪৪.১ ওভার দুমিনি ক বিজয় বো শামি
অফ স্টাম্পের উপর পড়ে সামান্য লেট মুভমেন্ট। বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাট ছুঁয়ে প্রথম স্লিপে। |
|
ব্যাটিংয়েও ভারতের এ দিন মাত্র ২৫ রানে শেষ পাঁচ উইকেট ঝরে গেলেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সকালের প্রথম আধ ঘণ্টার মারাত্মক সময়টা কিন্তু আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান সামলে দিয়েছিল। রাহানে আর ধোনি প্রথম ন’ওভার ফিলান্ডারদের গোলাগুলির সামনে বুক চিতিয়ে লড়েছে। তার পর মর্কেলের বিপজ্জনক বাউন্সে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ছন্দ একবার নষ্ট হয়ে গেলে পরের পর উইকেট পড়ে যায়।
কিন্তু মোটেই ভুলে যাবেন না যে, বহু দিন পর বিদেশের পেস আর বাউন্সের উইকেটে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমে ভারতীয় দল ব্যাটিং আর বোলিং দু’বিভাগেই তাদের স্কিল এবং প্রতিরোধে সবাইকে চমকে দিয়েছে। ভারতের তরুণ ব্যাটিং লাইন আপের প্রতি নতুন সম্মানের জন্ম হয়েছে। ইশান্ত-শামির তরুণ পেস জুটি সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। ব্যাটে রাহানে ছ’নম্বরে প্রচুর ক্ষমতা দেখাল, যে পজিশনে কিছু দিন আগেও ভিভিএস লক্ষ্মণের দাপট ছিল।
এই তরুণ ব্যাটসম্যানদের শুধু দরকার আগামী ইনিংসগুলোতে বেশি করে সিঙ্গলস রানের দিকে নজর দেওয়া। ভারতীয়রা যদি ওয়ান্ডারার্সে ওদের প্রথম ইনিংসের পর্যালোচনা করে তা হলে দেখবে, ‘স্ট্রাইক রোটেট’ করার বেশি চেষ্টা করা হয়নি। দুর্বল লোয়ার অর্ডার নিয়ে তুমি বিদেশের গতি আর বাউন্সের উইকেটে ভয়ঙ্কর পেস আক্রমণের সামনে দেড়শো ওভার ব্যাট করবে এটা ভাবলে ভুল হবে। সে জন্য খুচরো রান তোলার দিকে বেশি নজর দিলে যেমন ওভার পিছু রানরেটটাও তিনের বেশি থাকে, তেমনি ১১০-১২০ ওভারেও সাড়ে তিনশো রানের ইনিংস গড়ে ফেলা যায়। নইলে ওভার পিছু ২ রান তুললে ১৫০ ওভারেও কোনওক্রমে তিনশোয়ে পৌছনো সম্ভব। |