বিরোধীরা যাতে হরতাল-অবরোধ ডেকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে না-পারে, সে জন্য সেনা নামছে বাংলাদেশে। আবার এই নির্বাচন ‘নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হবে না’ আশঙ্কা করে পর্যবেক্ষক পাঠাতে অস্বীকার করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেনা নামানোয় যদি বিএনপি ও তার সঙ্গী জামাতে ইসলামি প্রমাদ গণে, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘোষণায় নিশ্চিত ভাবেই চাপে পড়ল শাসক আওয়ামি লিগ।
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবুদ্দিন আহমেদ আজ ঘোষণা করেছেন, “নির্বাচন জানুয়ারির ৫ তারিখে হলেও ২৬ ডিসেম্বরই সারা দেশে সেনা মোতায়েন হচ্ছে। আপাতত ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ দিন সেনাদের মোতায়েন রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে তা বাড়ানো হতে পারে।” প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিরোধীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করলেও দেশের কোথাওই আর তেমন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে না বলেই জেলা প্রশাসনের কর্তারা বৈঠকে জানিয়েছেন। ঢাকার জনজীবনও আগের চেয়ে অনেক স্বাভাবিক। কিন্তু ভোট কাছাকাছি এলে আবার যাতে পরিস্থিতির অবনতি না-হয়, সে জন্যই সর্বত্র সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করা হচ্ছে।
সেনারা কি শুধুই রুটমার্চ করবে, না কি নাশকতায় যুক্ত বিএনপি-জামাতের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযানও চালাবে?
এই প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “দুষ্কৃতীরা কোনও দলের নয়। যারা তাদের ভাড়া করে, তারা তাদের হয়েই সন্ত্রাস করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেমে সেনারা নিশ্চয়ই তাদের দমনে অভিযান চালাবে।” কাজী রকিবুদ্দিন জানান, স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করবে সেনারা। সেনাবাহিনী ছাড়া বিজিবি, তটরক্ষী, আনসার বাহিনী ও অন্য সশস্ত্র বাহিনীগুলিকেও ভোটের সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হবে।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, গত সপ্তাহ থেকেই সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ মাঠে নেমে পড়েছে। অসামরিক গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যে পুরোপুরি ভরসা না-রেখে বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা ও সন্ত্রাসে যুক্ত জামাত-শিবিরের কর্মীদের নামের তালিকা তৈরি করছে তারা।
২৬ তারিখে মোতায়েন হওয়ার পরেই এদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য অভিযান শুরু করবে সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যেই সেনা-গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা, ফেনি, লালমণিরহাট, জয়পুরহাট ও সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু মৌলবাদী দুষ্কৃতীকে আটক করেছে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী। এর পরে প্রায় সর্বত্রই জঙ্গি জামাত-শিবির কর্মীরা গা-ঢাকা দিয়েছে। কোথাও কোথাও তারা বিক্ষিপ্ত ভাবে খুন-জখম চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের বক্তব্য, মূলত এই কারণেই এ বার বিরোধী জোটের ডাকা অবরোধে জনজীবন সে ভাবে ব্যাহত হয়নি। হিংসার প্রকোপও তুলনায় কম। নাশকতা প্রতিরোধে কালই দেশে রেলপথের সর্বত্র আনসার বাহিনীকে নিয়োগ করা হয়েছে। পরিবহণ মন্ত্রী জানিয়েছেন, এ বার থেকে বিরোধীরা অবরোধ ডাকলেও দূরপাল্লার সব বাস চলবে।
কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর না-করার জন্য এর আগে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। খালেদা জিয়ার দাবি নেমে ইস্তফা দেওয়ার জন্যও তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিল। বিরোধীদের নাশকতা-সন্ত্রাসকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বলে দাবি করে, তা প্রতিরোধে বলপ্রয়োগ না-করার জন্যও সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। তার পরে আজ ব্রাসেলসে ইইউ-এর মুখপাত্র ক্যাথরিন অ্যাস্টন বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, “পর্যবেক্ষকরা প্রস্তুতই ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে না, এই আশঙ্কা করেই তাঁদের আর পাঠানো হচ্ছে না।”
|