দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিকাঠে চড়ানো এবং আপৎকালীন ভিত্তিতে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ ভাবে জঙ্গিমুক্ত করা এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আগামী ৫ তারিখ নিবার্চনের বাকি পর্বটুকু সাঙ্গ করার দিকে হাঁটছেন আওয়ামি লিগ নেত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপি ভোট বয়কট করায় ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টিতে ইতিমধ্যেই এক জন করে প্রার্থী বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন। এর মধ্যে ১৩২ জন আওয়ামি লিগের, বাকি ৫ জন তাদেরই জোটশরিক। এর পর সরকার গড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু হাসিনার সামনে এখনও দু’টি বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গিয়েছে। প্রথমটি, দেশজোড়া হিংসা এবং অশান্তি বন্ধ করে আইনশৃঙ্খলায় রাশ টানা। দ্বিতীয়টি, বিরোধীশূন্য নির্বাচনে অসন্তুষ্ট পশ্চিম বিশ্বের আস্থা ফেরানো।
আপাতত তা নিয়েই চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। দু’টি বিষয় নিয়েই কৌশল রচনা চলছে। গত কালই নিরাপত্তা বিষয়ক সর্বোচ্চ পর্যায়ের কমিটির বৈঠকে স্থির হয়েছে, যে সমস্ত জেলায় জামাত শক্তিশালী, আগামী কয়েক সপ্তাহ সেখানে অভিযান চালাবে নিরাপত্তা বাহিনী। আওয়ামি লিগের প্রচারসচিব অসীম উকিলের কথায়, “এই হিংসা-নাশকতার সঙ্গে নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। মুজিবর রহমানের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এই হিংসায় প্রশ্রয় দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। সংবিধান অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারির আগে নতুন সরকার গঠন করতে হবে। মাঝের এই সময়টুকুতে জামাতে ইসলামির দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সময়টুকু আমাদের চাই।” এই ‘চূড়ান্ত ব্যবস্থা’-র মধ্যে রয়েছে জামাত এবং বিএনপি-র মধ্যে ব্যবধান তৈরি করা, সামরিক ভাবে জামাতের হিংসাত্মক আন্দোলন দমন করা, সামাজিক ভাবে গোটা দেশ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করার মতো কৌশলগুলি।
আওয়ামি লিগের সাংসদ আসাদুজ্জামান নূরের কথায়, “জামাত-বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ দ্বিতীয় পাকিস্তান অথবা আফগানিস্তানে পরিণত হবে।” সাতক্ষীরা, জয়পুরহাট, বগুড়ার মত কিছু জেলায় ইতিমধ্যেই পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। এর পরে রংপুর, সুনামগঞ্জ, রাজশাহিতেও এই অভিযান হবে। |
পাক হাই-কমিশনের সামনে থেকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের
সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ঢাকায়। ছবি: রয়টার্স। |
বহির্বিশ্বে কূটনৈতিক বার্তা দেওয়ার কাজটিও চলছে। তার কিছুটা সুফল পাওয়া গিয়েছে বলেও মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি। তাঁর সঙ্গে গত কাল বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা। জামাতকে নরমপন্থী মুসলিম সংগঠন হিসাবে তুলে ধরে সামাজিক পরিসরে তাদের জায়গা করে দেওয়ার পক্ষে আগাগোড়া সওয়াল করেছে হোয়াইট হাউস। ৭১-এর যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া আমেরিকা বরাবরই বিএনপি-ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ আওয়ামি লিগের। সাম্প্রতিক ঘটনাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হিসাবেও ব্যাখ্যা করেছে আমেরিকা। এহেন ওবামা প্রশাসনের সুরও কিছুটা নরম করেছে বলে দাবি বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের। মাহমুদ আলির কথায়, “অবশেষে পরিস্থিতি দেখে ড্যান মজেনা আমায় বলেছেন, বিএনপি-র উচিত জামাতের সংস্পর্শ থেকে বেরিয়ে আসা।”
জামাত সম্পর্কে এহেন নেতিবাচক উক্তি সাম্প্রতিক অতীতে আমেরিকার কাছ থেকে শোনা যায়নি বলেই জানাচ্ছে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ। ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার চাইছে, পশ্চিম বিশ্বকে বোঝানোর প্রশ্নে নয়াদিল্লি আরও বড় ভূমিকা নিক।
বাংলাদেশে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকও কোমর বেঁধে নেমেছে। মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানাচ্ছেন, “সমস্ত তথ্য ও নথি জোগাড় করে আমরা শ্বেতপত্র প্রকাশ করছি। সেখানে জামাতের হিংসা ও নাশকতার সমস্ত রেকর্ড থাকবে। সংবিধাসম্মত ভাবে নির্বাচন করার চেষ্টা করছেন হাসিনা, আর তা বানচাল করতে বিএনপি-জামাত জোট কী ভাবে ষড়যন্ত্র করছে, থাকবে সে কথাও।”
তালিবান এবং পাক সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে জামাতের যোগাযোগের বিষয়টিকেও মার্কিন কর্তাদের সামনে তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে। ইনুর কথায়, “আশির দশক থেকে ধাপে ধাপে প্রায় ৭ হাজার জামাত নেতা ও জঙ্গিকে আইএসআই আফগানিস্তানে পাঠায় তালিবানের কাছে প্রশিক্ষণের জন্য। ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল জামাতের বেশ কিছু নেতার। এরাই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্রমশ জঙ্গি ঘাঁটি গড়ে তুলেছে।” |