বছর শেষের আগেই পর্যটকদের জন্যই একের পর এক সুখবর। সুন্দরবনের পর্যটকদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছাপূরণে ইতিমধ্যেই খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবনের কোর এরিয়ার দু’টি দ্বীপ নেতিধোপানি ও হরিণখালি। এ বার সুন্দরবনের ঝড়খালি এবং উত্তরবঙ্গের গরুমারা লাগোয়া ময়নাগুড়ির রামসাইয়ে প্রজাপতিদের মুক্ত-উদ্যান গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে বন দফতর।
লঞ্চে বসে চোখে দূরবীন লাগিয়ে একমনে জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে বাঘ দেখার আশা কিংবা নজরমিনারে দাঁড়িয়ে গণ্ডারের খুনসুটি দেখা, হাতির পিঠে ভ্রমণ কিংবা গরুর গাড়িতে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোএতদিন এ সবই পর্যটকদের সঙ্গী ছিল। এ বার বাড়তি পাওনা হতে চলেছে প্রজাপতি উদ্যান। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর ঝড়খালিতে ঝড়খালি আইপ্যাডের কাছে ৩ কাঠা জমি চিহ্নিত করে ইতিমধ্যেই ওই বাগান তৈরি করার কাজ শুরু করে দিয়েছে বন দফতর। জানুয়ারির মধ্যেই কাজ শেষ করে তা পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। একইভাবে রামসাইয়ে রাইনো ক্যাম্পের পাশে বন দফতরের কাউন্টারের পিছনে এক একর জমিতে গড়ে উঠছে ‘ওপেন বাটারফ্লাই পার্ক’। |
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বনবিভাগের ডিএফও লিপিকা রায় বলেন, “বাদাবনে প্রজাপতি নিয়ে এ রাজ্যে এ ধরনের কাজ আগে হয়নি। ওখানে কি ধরনের প্রজাপতি আছে, তা একত্রিত করার জন্য একটি সংরক্ষণ কেন্দ্র করা হচ্ছে। ঝড়খালিতে তৈরি হওয়া এই বাগান ভবিষ্যতে সুন্দরবনের পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণের কারণ হতে পারে।” জলপাইগুড়ির ডিএফও (বন্যপ্রাণ) সুমিতা ঘটকের কথায়, “জঙ্গলের পাশে থাকায় শুরুতেই ওই পার্কে প্রজাপতির ডিম মিলেছে। এটা ভাল লক্ষণ। আশা করছি আগামী বছর পর্যটকরা এখানে এসে প্রজাপতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন।”
বন দফতর সূত্রের খবর, প্রজাপ্রতি বিশেষ কিছু গাছের পাতায় ডিম দেয়। একই ভাবে ডিম ফুটে বার হওয়া লার্ভা বিশেষ কিছু গাছের পাতা খায়। ওই কারণে উদ্যানের গাছ নির্বাচনের সময় বিষয়টি নজরে রাখা হয়েছে। লাগানো হয়েছে অতসী, আকন্দ, লেবু, অড়হর, ভাট, রঙ্গনের মতো বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ। প্রথম দিকে ৩০ থেকে ৪০ রকম প্রজাতির প্রজাপতি নিয়ে ঝড়খালির বাগানটি খুলে দেওয়া হবে। থাকবে হোয়াইট টাইগার, প্লেন টাইগার, ব্লু টাইগার, কমন ক্রো, পিকক প্যানসি, গ্রে প্যানসি, লেমন প্যানসি-সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি। পর্যটকদের কৌতূহল মেটাতে ছবি-সহ বিবরণ বোর্ডে লিখে দেওয়া হবে।
বন দফতরের এক কর্তা জানান, সুন্দরবনে এসে হরিণ, কুমির আর গরুমারায় পর্যটকরা এত দিন গন্ডার, হাতি, বাইসন, হরিণের মতো বন্যপ্রাণ দেখার সুযোগ পেয়েছেন। প্রজাপতি উদ্যানের কাজ শেষ হয়ে গেলে ঝড়খালি ও রামসাইয়ের আকর্ষণ আরও বাড়বে। এই দুই জায়গা থেকে পর্যটকেরা একটু অন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন।
|