‘স্যার’কে সতর্ক করে
সৌভিক, দাবি আইনজীবীর

বারও একটানা জেরা করা হল সৌভিক আইচকে। বৃহস্পতিবার নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা জজ ও সেশন জজের আদালতে দুপুর ২টো নাগাদ সজল ঘোষ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হতেই পরপর তিন আইনজীবী তাঁকে জেরা করেন।
জেরা শুরু করেন আইনজীবী প্রতীমসিংহ রায়। এই মামলার প্রধান সাক্ষী পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌভিকের কীভাবে, কতদিনের আলাপ, তাঁরা একই দলের কর্মী কিনা তা জানতে চান তিনি। এছাড়া সজলবাবু জীবিত থাকাকালীন প্রদীপ সাহার সঙ্গে কোনও মামলায় জড়িয়েছিলেন কিনা, বা সৌভিককে চিঠি দিয়ে সজলবাবু প্রদীপ সাহার সঙ্গে কোনও মনোমালিন্যের কথা জানিয়েছিলেন কি না তাও জানতে চান। সৌভিকের উত্তর, না। আরও কিছু প্রশ্নের পরে প্রতীমবাবু বলেন, আদালতে সাক্ষী কলেজের গণ্ডগোলে যে মার খাওয়ার কথা বলেছেন তা আসলে পড়ে গিয়ে কোনও শক্ত কিছুতে আঘাত পেয়ে রক্ত জমে যাওয়া, যাকে বলা হয় ‘হেমাটোমা’। সাক্ষীর বুকের বাঁ দিকে এবং কনুইতে সেই হেমাটোমা হয়েছিল, তাঁকে কেউ মারে নি বলেও দাবি করেন তিনি। তবে সৌভিক বলেন, এটা ভুল। এরপরে সাক্ষীর পড়াশোনা সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন করেন তিনি। জানতে চাওয়া হয় সাক্ষী কি কি বিষয় নিয়ে বিএ পড়ছেন। জবাবে কম্পালসারি বাংলা ও ইংরাজি ছাড়াও বাংলা, সংস্কৃত ও এডুকেশন নিয়ে পড়ছে বলে জানায় সৌভিক। তবে ঐচ্ছিক বাংলায় সিলেবাসে আছে কি না তার উত্তর দিতে পারেনি সে।
জেরার শেষ পর্বে প্রদীপবাবুর আইনজীবী বলেন, প্রদীপবাবু শুধু রাজনৈতিক কর্মীই ছিলেন না, ওই এলাকার মানুষজনকেও সাহায্য করতেন। ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলেন সৌভিক। শেষে প্রতীমবাবু সাক্ষীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ওই রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালে সজল ঘোষ খুন হননি, প্রদীপ সাহাও রাতে হাসপাতাল যাননি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এই মামলায় প্রদীপ সাহাকে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সৌভিকবাবুও মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে এসেছেন। সৌভিক জানান, তিনি একথা মানতে পারছেন না।
এ দিন অভিযুক্তের কাঠগড়ায় অন্য চারনের সঙ্গে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে হাজির ছিলেন প্রদীপবাবু। আদালতে হাজির ছিলেন তাঁর বৃদ্ধা মাও। তবে কিছুক্ষণ জেরা শোনার পরেই চলে যান তিনি।
দ্বিতীয় আইনজীবী হিসাবে সৌভিককে জেরা করেন বিষ্ণু শীল। তিনি প্রথমেই জানতে চান সৌভিকবাবু যে নবদ্বীপ আদালতে সাক্ষী দিতে এসেছেন, তিনি কোনও সমন পেয়েছেন কি না, এবং তা আদালতে জমা দিয়েছেন কি না। সৌভিক বলেন, তিনি একটি কাগজ দেখে আদালতে এসেছেন। প্রমাণ দেখাতে পারবেন কি না জানতে চাওয়া হলে সাক্ষী বলেন, না। এরপরে বিষ্ণুবাবু জানতে চান এ দিন কোথা থেকে আদালতে এলেন সৌভিক। সাক্ষী জানান, তিনি তপনকাকার বাড়ি থেকে আসছেন। তপনকাকা মানে পূর্বস্থলীর বিধায়ক তপন চট্ট্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে কী ভাবে, কার সঙ্গে এলেন? সাক্ষী বলেন, তাপস দে-র মোটরবাইকে করে এসেছেন। জানতে চাওয়া হয় তপনবাবুর বাড়ি থেকে সাক্ষী কতদিন ধরে যাতায়াত করছেন। জবাব আসে মাস তিন চারেক। এরপরে সেই রাতের ঘটনা ও নবদ্বীপ হাসপাতাল নিয়ে আরও কিছু প্রশ্ন করা হয় তাঁকে।
পরবর্তী পর্বে বিষ্ণুবাবু জানতে চান সৌভিক যেহেতু প্রদীপ সাহার স্কুলেই পড়াশুনা করেছেন তাই প্রদীপবাবুকে স্যার বলেন কি না। উত্তর আসে হ্যাঁ।এরপরে জানতে চাওয়া হয়, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি সাক্ষী তার মোবাইল থেকে স্যারকে ফোন করেছিলেন কি না। সাক্ষী বলেন, না। বিষ্ণুবাবু জানতে চান, তার সঞ্জীব নাথ বলে কোনও বন্ধু আছে কি না। হ্যাঁ বলে সৌভিক। কিন্তু সাক্ষীর মোবাইলের কলার লিস্ট জানা গিয়েছে, সাক্ষী ওই দিন প্রদীপ সাহাকে রাতে ফোন করেছিলেন এবং তখন তার বন্ধু সঞ্জীব নাথ সঙ্গেই ছিল বলে জানান বিষ্ণুবাবু। সৌভিক বলেন, তিনি ফোন করেন নি। বিষ্ণুবাবু বলেন, সাক্ষী ফোন করে স্যারকে বলেছিলেন, ‘স্যার আপনি সাবধানে থাকবেন। আপনি বড় বিপদে পড়বেন। আপনাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।’ সৌভিক এ বারও বলেন, তিনি কোনও ফোন করেন নি। জেরার শেষে বিষ্ণুবাবু সাক্ষীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সাক্ষী রাজনৈতিক নেতাদের চাপে, তাদের নির্দেশমতো মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে এসেছেন। তবে এটাও অস্বীকার করেন সৌভিক।
শেষ আইনজীবি হিসেবে সৌভিককে জেরা করেন সামসুল ইসলাম মোল্লা। তিনিও ওই রাতের ঘটনা ও আরও নানা বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন। আজ, শুক্রবার আবারও শুনানি হওয়ার কথা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.