এক মাস হতে এল পুরভোট হয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ, পুরপ্রধান নির্বাচনও হয়ে হিয়েছে। কিন্তু এখনও মেদিনীপুর পুর-নির্বাচনের বেশিরভাগ প্রার্থীই প্রচারে খরচের হিসেব জমা দেননি। নিয়মমতো নির্বাচনের এক মাসের মধ্যে প্রার্থীদের লিখিত ভাবে জানানোর কথা, কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে। মেদিনীপুরে পুরভোট হয়েছে ২২ নভেম্বর। প্রশাসন ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ, হাতে আর তিন দিন। অথচ এখনও পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েক জন খরচের হিসেব দিয়েছেন বলে খবর। এ ক্ষেত্রে কংগ্রেস-তৃণমূল-সিপিএম সব দলের প্রার্থীরাই গড়িমসি করছেন।
হিসেব দিতে এত অনীহা কেন? রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য, সবে পুরবোর্ড গঠন হয়েছে। ফলে, এত তাড়াতাড়ি সব কিছু গুছিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তৃণমূলের শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তী বলেন, “এক মাসের মধ্যে হিসেব জমা দিতে হবে। ইতিমধ্যে প্রার্থীদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্রুত হিসেব জমা দিতে বলেছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রার্থীরা হিসেব জমা দেবেন।” আশিসবাবু নিজেও এ বার পুরভোটে প্রার্থী ছিলেন। কংগ্রেসের শহর সভাপতি সৌমেন খানেরও বক্তব্য, “হাতে আর কিছু দিন সময় রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রার্থীরা হিসেব জমা দেবেন। এ নিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে।” সৌমেনবাবু নিজেও পুরভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন। কেন এখনও দলের সব প্রার্থী হিসেব জমা দিলেন না? সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক কীর্তি দে বক্সী বলেন, “আমাদের প্রার্থীরা হিসেব জমা দিতে শুরু করেছেন। সকলকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হিসেব জমা দিতে বলেছি।” বিজেপির শহর সভাপতি অরূপ দাসও বলছেন, “হয়তো একটু দেরি হচ্ছে। তবে দলের সব প্রার্থীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়েই সকলে হিসেব জমা দেবেন।”
ভোট প্রচারে খরচের উর্ধ্বসীমা রাজ্য নির্বাচন কমিশন সীমা বেঁধে দেয়। প্রার্থীদের জানানো হয়, ঠিক কত টাকা ভোটের জন্য খরচ করা যাবে। এ বারের পুরভোটে যেমন নির্দেশ ছিল, যে সব ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার বা তার কম, সেখানে প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা খরচ করতে পারেন। আর ৬ হাজারের পর প্রতি ভোটারপিছু ৫ টাকা খরচ করা যাবে। পুরভোটের পরে জেলা প্রশাসনকে হিসেব দিতে হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকজন প্রার্থীই হিসেব জমা দিয়েছেন। অথচ, মেদিনীপুরে পুরভোটে প্রার্থী সংখ্যা ছিল ১১৫। তৃণমূলের ২৫, কংগ্রেসের ২৪, কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল ১, সিপিএমের ১৩, সিপিআইয়ের ৩, ফরওয়ার্ড ব্লকের ২, আরএসপি’র ১, বিকাশ পরিষদের ২, বামফ্রন্ট সমর্থিত নির্দল ৪, বিজেপি’র ১৪, এসইউসি’র ২ এবং নির্দল ২। পুরভোটে ১১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩৫ জনেরই জামানত জব্দ হয়েছে। তবে, হিসেবের ক্ষেত্রে কার জামানত জব্দ হয়েছে, কার জব্দ হয়নি, তা দেখা হয় না। সব প্রার্থীকেই হিসেব জমা দিতে হয়। জানা গিয়েছে, প্রার্থীরা হিসেব পাঠিয়েছেন ডাক-মারফত।
হিসেব দেওয়ার ক্ষেত্রে এই গড়িমসি অবশ্য নতুন। বিগত পুরভোটেও এমন ছবিই দেখা গিয়েছে। এ বার যেখানে ২৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থী ছিল ১১৫ জন, সেখানে ২০০৮ সালের পুরভোটে ২৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৮৩, ২০০৩ সালে ৮৭ জন। গত বার বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্দিষ্ট সময়ে হিসেব জমা দেননি। অভিযোগ, নিয়ম মেনে বহু প্রার্থীই প্রচারে খরচ করেন না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে খরচ পৌঁছে যায় লক্ষে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী বলছিলেন, “আইন যেমন রয়েছে, তার ফাঁকও রয়েছে। এক মাস ধরে ভোটের প্রচার করতে হয়। কত পোস্টার-ফেস্টুন ছাপাতে হয়, মিটিং-মিছিল করতে হয়। এখন জিনিসপত্রের যা দাম, তাতে কি ৩০ হাজার টাকায় সব করা সম্ভব?” তাহলে? ওই প্রার্থীর বক্তব্য, “প্রার্থী নিজে হয়তো ৩০ হাজার টাকা খরচ করেন, বাকিটা দল দেয়!” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক প্রার্থী বলেন, “শুনেছি, এ বার এক প্রার্থী না কি নিজের প্রচারে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। অথচ, তাঁকেও খাতায়-কলমে দেখাতে হবে যে তিনি ৩০ হাজার টাকাই খরচ করেছেন!”
হিসেবের এই গরমিলের জন্যই কি তবে তা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই গড়িমসি? এ প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটেছে সব দল।
|