জর্দা নদীর খাত থেকে বালি উত্তোলন চলছেই বলে অভিযোগ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করার পরেও ওই নদী গর্ভের যে বিরাট এলাকা কয়েক ফুট গভীরে তলিয়ে বিপজ্জনক জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে পাথর ফেলে বোজানোর কাজ চলছে। এরই মধ্যে যথেচ্ছভাবে বালি তোলার জন্য নদী গর্ভে ধসের পরিধি বেড়ে চললেও ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে ব্লক প্রশাসন ও সেচ দফতরের মধ্যে চাপান
উতোর চলছেই।
ময়নাগুড়ির বিডিও সংহিতা তলাপাত্র বলেন, “বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেচ দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।” যদিও সেচ দফতরের জলপাইগুড়ির এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র বিপ্লবকান্তি রায় বলেন, “জর্দা নদীতে জলপ্রপাতের বিষয়ে আমরা প্রশাসনের কোনও চিঠি পাইনি।” পরিস্থিতি দেখে হতাশ ময়নাগুড়ি কলেজের ভুগোল বিভাগের প্রধান মধুসূদন কর্মকার। তিনি বলেন, “নদী থেকে বালি উত্তোলন বন্ধ রাখার কথা প্রথম থেকে বলে আসছি। সেই সঙ্গে ভাঙন এলাকা পাথর ফেলে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি, আমাদের পরামর্শ মানা হয়নি। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী বর্ষায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।”
ময়নাগুড়ির জল্পেশ মোড় সংলগ্ন এলাকা থেকে মন্দিরের দিকে জর্দা নদীর প্রায় দু’কিলোমিটার এলাকা অন্তত সাত ফুট গভীরে তলিয়ে ‘নিক ফলস’ বা জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়েছে। কলেজের ভূগোল বিভাগের গবেষকরা ‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের’ সাহায্যে ওই জলপ্রপাতের অবস্থান নির্ণয় করেছেন। তাঁরা জানান, যথেচ্ছভাবে বালি উত্তোলনের ফলে নদীর ‘ইকো সিস্টেম’ বা বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়ায় নদীর ওই দশা হয়েছে। ভাঙন ক্রমশ পিছিয়ে ময়নাগুড়ি শহর সংলগ্ন এলাকার দিকে এগিয়ে যাবে। দ্রুত বালি তোলা বন্ধ করে ওই খাদ পাথর দিয়ে বন্ধ করা না হলে পাকা সড়ক, কয়েকটি সেতু বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে চলে আসবে।
ময়নাগুড়ি কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, নদী সমীক্ষা করে গত ৬ ডিসেম্বর ব্লক প্রশাসনের কাছে ওই রিপোর্ট পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁর পরেও কেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের কয়েকজনের ক্ষোভ, প্রতিদিন অন্তত তিনশো জন নদী খাত কেটে বালি তুলছেন। স্থানীয় বাসিন্দা উপেন রায় জানান, মোটা বালি দানার খোঁজে নদী গর্ভের উপরিস্তর অন্তত ৪ ফুট গভীর করে কেটে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ দিনে এক ট্রাক বালির ব্যবস্থা করে শ্রমিকরা আটশো টাকা রোজগার করছেন। প্রতিদিন অন্তত ২০ ট্রাক বালি ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি-সহ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে।
ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় আরএসপি-র বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন, “বিশেষজ্ঞরা জানানোর পরেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এটা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি দেখছি।” |