কী কী ত্রুটি পুলিশের, আজই জানাতে নির্দেশ
দীর্ঘদিন ধরে শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমি-বাড়িতে বারবার হামলা সত্ত্বেও স্থানীয় পুলিশ তেমন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। এ বার কলকাতা হাইকোর্ট লালবাজারের কাছে জানতে চাইল, ওই বাড়ি-জমিতে হামলার ঘটনায় পুলিশের কী কী গাফিলতি ছিল? আজ, শুক্রবার বিচারপতি অসীম রায়ের এজলাসে তা জানাতে হবে কলকাতা পুলিশকে। বিচারপতি রায় বৃহস্পতিবার অন্য একটি নির্দেশে জানান, শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে শেক্সপিয়র সরণি থানার প্রাক্তন সাব-ইনস্পেক্টর নুর আলিকে গ্রেফতার করা হয়েছে কেন, পুলিশকে তা-ও জানাতে হবে।
শর্ট স্ট্রিট মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত পরাগ মজমুদার তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে কয়েক দিন আগে হাইকোর্টে আবেদন জানিয়ে বলেন, পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে প্রথমে ৯এ শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমিতে চুরির অভিযোগ দায়ের করেছিল। পরে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে মামলা করেছে। কেন তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে আনা অভিযোগ খারিজ করা হবে না, হাইকোর্টের কাছে তা জানতে চেয়েছেন পরাগ।
তার ভিত্তিতেই বিচারপতি রায় এ দিন পুলিশের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দেন। তিনি কলকাতা পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছেন, ওই হামলার তদন্তের দায়িত্ব গোয়েন্দা দফতরের গুন্ডা দমন শাখাকে দেওয়া হল কেন? গোটা ঘটনায় পুলিশের ত্রুটি কোথায়, তা-ও জানাতে হবে আদালতে।
ব্যাঙ্কশাল আদালতের সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস এ দিন জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর এক দল দুষ্কৃতী শর্ট স্ট্রিটের ওই জমি-বাড়িতে ডাকাতি করেছিল বলে অভিযোগ। সেই সময় শেক্সপিয়র সরণি থানায় কর্মরত সাব-ইনস্পেক্টর নুর আলি ওই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন। ১১ নভেম্বর ওই বাড়িতে ফের হামলা হয়, গুলি চলে এবং গুলিতে দু’জন মারা যান। সরকারি আইনজীবীর দাবি, ১১ নভেম্বরের হামলার তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ১৫ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় নুর ডাকাতির অভিযোগে মামলা দায়ের না-করে চুরির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। গোয়েন্দারা নতুন করে তদন্ত করে জানতে পারেন, ১৫ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় পরাগও জড়িত ছিলেন। তার পরে পরাগের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ বদলে ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযুক্ত নুরকে এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বরূপ শেঠের এজলাসে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সামির রিয়াজ ১১ নভেম্বরের আগে পার্ক সার্কাসের একটি শপিং মলে নুরকে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ। শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমি থেকে বাসিন্দাদের উৎখাত করার জন্য ওই পুলিশ অফিসারকে টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেছেন রিয়াজ নিজেই।
সরকারি আইনজীবী আদালতে আরও জানান, উৎখাতে সাহায্য করার জন্য নুরকে একটি দামি ল্যাপটপ এবং একাধিক বিদেশি হাতঘড়ি উপহার দেওয়া হয় বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ। ৩০ লক্ষ টাকা এবং উপহার সামগ্রীগুলির হদিস পাওয়ার জন্য ওই পুলিশ অফিসারকে আরও জেরা করা জরুরি। সেই জন্য পুলিশ অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। গ্রেফতারের সময় নুরের কাছে থাকা দু’টি মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। দু’টি মোবাইলের কল ডিটেলস থেকে তারা জেনেছে, ১০, ১১ এবং ১২ নভেম্বর নুরের সঙ্গে রিয়াজের দেড়শো
বারেরও বেশি কথা হয়। তাতে সময় লেগেছে কয়েক ঘণ্টা। বিচারকের কাছে কল ডিটেলস পেশ করেন সরকারি আইনজীবী।
এ দিন আদালতে নুরের জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী অশোক বক্সী। তিনি বলেন, পুলিশ আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে যে-সব ধারায় মামলা করেছে, তার একটিও ধোপে টেকে না। শর্ট স্ট্রিটে গুলি চালানোর সময় অভিযুক্ত অফিসার ঘটনাস্থলে বা তার ধারেকাছে ছিলেন না। অভিযুক্ত নিজে পুলিশ অফিসার। তিনি তদন্তকারীদের সব দিক থেকে সাহায্য করছেন। তাঁর পালিয়ে যাওয়ার বা তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে দেওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
বিচারক দু’পক্ষের সওয়াল শুনে অভিযুক্ত নুরকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে অনধিকার প্রবেশ ও সংঘর্ষের মামলায় অভিযুক্ত জয়ন্ত দাসকেও এ দিন আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী জানান, ওই অভিযুক্ত গুলিতে আহত হয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ দিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। জয়ন্তকে জেল-হাজতে পাঠিয়ে তাঁর টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন (টিআই) বা শনাক্তকরণ প্যারেডের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আবেদন জানান সরকারি আইনজীবী। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.