ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে কলেজে কলেজে ছাত্র-সংঘর্ষ প্রায় নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন মৌলানা আজাদ কলেজ ও গুরুদাস কলেজ। উল্লেখ্য, এ বার কলকাতার কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন যে অশান্ত হয়ে উঠতে পারে, সেই বিষয়ে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল কলকাতা পুলিশ। সে কারণে ছাত্র-ভোট নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নির্বাচন করাতে বলেছিল রাজ্য সরকার। সেই অনুযায়ী প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব নির্বাচনী কমিটি গড়া হয়। পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের দিন স্থির করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামলাতে কলেজের বাইরে লাঠিধারী পুলিশের সঙ্গেই সশস্ত্র পুলিশ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ৮৬টি কলেজের মধ্যে ৩৩টি কলেজকে ও চারটি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরকে স্পর্শকাতর হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
কিন্তু এত কিছুর পরেও পুলিশি আশঙ্কা যে সত্যি হয়ে উঠতে পারে, বিভিন্ন কলেজে ছাত্র-সংঘর্ষের ঘটনাই তার প্রমাণ। এ দিন মৌলানা আজাদ কলেজে গোলমালের জেরে কলেজের চার ছাত্র আহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দেওয়াকে কেন্দ্র করে জয়পুরিয়া কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল বেধেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। দু’পক্ষের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হাতাহাতিতে আহত হন কয়েক জন ছাত্রী। সম্প্রতি মণীন্দ্র কলেজেও তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে বেশ কয়েক জন আহত হন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার মৌলানা আজাদ কলেজে গোলমাল বাধে টিএমসিপি এবং ছাত্র পরিষদের মধ্যে।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন? পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল থেকে কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের ভর্তি চলছিল। সে সময়ে মাইনে জমা দেওয়ার লাইনে কে আগে দাঁড়াবে, তাই নিয়ে কিছু ছাত্রের মধ্যে বচসা শুরু হয়। টিএমসিপি-র সদস্যদের অভিযোগ, আচমকা ছাত্র পরিষদের এক দল ছেলে এসে দাবি জানান, তাঁদের সমর্থকদের আগে মাইনে জমা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। টিএমসিপি বাধা দিলে ছাত্র-পরিষদ সমর্থকেরা তখনকার মতো কলেজ থেকে চলে যান।
কলেজের টিএমসিপি-র নেতা মহম্মদ আফজলের অভিযোগ, কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েক জন বহিরাগতকে নিয়ে ফিরে আসেন ছাত্র পরিষদের সমর্থক ছাত্রেরা। কলেজের একাংশে এখন মেরামতি চলছে। টিএমসিপি-র অভিযোগ, বহিরাগত যুবকেরা সেখান থেকে বাঁশ এনে তাঁদের উপরে হামলা চালান। আহত হন দ্বিতীয় বর্ষের চার জন ছাত্র।
অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কৌস্তুভ বাগচী বলেন, “কংগ্রেস ছাত্র পরিষদ মোটেই গোলমাল করেনি। আমাদেরই আক্রান্ত হতে হয়েছে তৃণমূলীদের হাতে। টিএমসিপি মিথ্যে অভিযোগ জানাচ্ছে যাতে নির্বাচনে ছাত্র পরিষদ মনোনয়ন জমা না দেয়।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষের পাল্টা অভিযোগ, ১৮ জানুয়ারি মৌলানা আজাদ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ছাত্র পরিষদের সদস্যেরা তাই পরিকল্পনা মাফিক এই আক্রমণ করেছে। যাতে নির্বাচনে তৃণমূল খারাপ ফল করে।
পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তালতলা থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। অধ্যক্ষ প্রতাপচন্দ্র রায় বলেন, “দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের মধ্যে মাইনে জমা দেওয়া নিয়ে গোলমাল হয়েছিল বলে শুনেছি। আমরাই পুলিশ ডেকে পরিস্থিতি শান্ত করি।” ঘটনার সময় ঊশ্রী রায় নামে এক শিক্ষিকা ক্লাস নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “আওয়াজ শুনে ক্লাস থেকে বেরিয়ে দেখি, কয়েক জন ছেলে মিলে মারামারি করছে। তাদের মধ্যে অনেককেই এর আগে কখনও কলেজ চত্বরে দেখিনি।”
এ দিনের ঘটনার পরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যেরা তালতলা থানায় বহিরাগতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে, এ দিন রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার কলেজে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন টিএমসিপি সমর্থকেরা।
অন্য দিকে, এ দিন গুরুদাস কলেজেও দু’দল ছাত্রের গোলমাল হয়। অভিযোগ ওঠে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ছাত্রছাত্রীদের পরিচয়পত্র এবং ফি-বুক কেড়ে নিচ্ছে যাতে তাঁরা কলেজ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। কলেজের এক ছাত্র প্রতীক সেনগুপ্ত পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
|