মনোনয়ন নিয়ে সংঘর্ষ জয়পুরিয়া কলেজে
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগেই অশান্ত হয়ে উঠল উত্তর কলকাতার জয়পুরিয়া কলেজ। মঙ্গলবার ওই কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের জেরে আহত হয়েছেন এক ছাত্রী-সহ দু’জন। পুলিশ জানায়, আহত ছাত্রীর নাম শিল্পা দেবশর্মা। আহত ছাত্রের নাম সুমন বিশ্বাস। দু’জনকেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, কলেজ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর গোলমালের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের পাল্টা অভিযোগ, বহিরাগতেরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এ দিন দুপুরের ওই গোলমালের পরে কলেজ চত্বরে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে ক্লাসঘরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশ এসে ক্লাসরুম থেকে ওই ছাত্রছাত্রীদের উদ্ধার করে। কলেজের সামনে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবে ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
সংঘর্ষে জখম ছাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
কী ঘটেছিল এ দিন? পুলিশ জানায়, বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ ছাত্রদের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা বাধে। তার পরেই দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। প্রথম বর্ষের ছাত্রী শিল্পা ওই গোলমালের মধ্যে পড়ে জখম হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান ওই ছাত্রী। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সুমনও হাতে চোট পান। এর পরেই কলেজের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কলেজে ওই সময় ক্লাস চলছিল। গোলমালের জেরে কলেজের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে পেয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। অনেকে ক্লাসের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশ এসে তাঁদের ঘর থেকে বের করে। পুলিশ কলেজের গেট বন্ধ করে দেয়। সন্ধ্যার পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, জয়পুরিয়া কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে ছিল। আগামী জানুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে বলে সম্প্রতি ছাত্র সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে এ দিন সকাল থেকেই কলেজে উত্তেজনা ছিল। এ দিনের ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আগামী নির্বাচনে কারা মনোয়নপত্র জমা দেবেন, তা নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ ছিল। এই নিয়েই গোলমাল শুরু হয়। পরে পুলিশ এসে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে।”
ওই কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তিতান সাহা অবশ্য দাবি করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মধ্যে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। তিনি বলেন, “বহিরাগতেরা এসেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগেও তারা দু’-এক বার কলেজে গোলমাল তৈরির চেষ্টা করেছে।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষ অবশ্য ওই গোলমালের জন্য এসএফআইকে দায়ী করেছেন। এ দিন তিনি বলেন, “এসএফআইয়ের ছাত্রেরাই পরিকল্পনামাফিক এই আক্রমণ করেছে। তবে এই ধরনের আক্রমণে কোনও লাভ হবে না।”
এসএফআই অবশ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংগঠনের কলকাতা জেলা সম্পাদক শ্রীজিৎ গোস্বামী বলেন, “এই অভিযোগ মিথ্যা। এসএফআই সমর্থকদের মেরে তৃণমূলের ছাত্রেরাই আগেই বের করে দিয়েছিল। সুতরাং তাদের আক্রমণ করার কোনও পরিস্থিতিই ছিল না। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে।”
বস্তুত, ছাত্র সংঘর্ষের অভিযোগ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই রাজ্যের শিক্ষাঙ্গন উত্তপ্ত। সাম্প্রতিক অতীতে বহু কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকদিন আগে মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। ওই ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা বন্ধ করতে রাজ্যপাল-সহ বিশিষ্ট মানুষদের তরফ থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদকে রাজনীতিমুক্ত করার চিন্তাও এসেছে। এমনকী, বিভিন্ন কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের জেরে রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধও করে দেওয়া হয়েছিল। সে সময় শাসক, বিরোধী দু’ পক্ষের ছাত্র সংগঠনই বলেছিল, ছাত্র সংঘর্ষ বন্ধ করা খুবই জরুরি। কিন্তু তার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া অর্থহীন।
অতি সম্প্রতি রাজ্য ঘোষণা করেছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। কিন্তু সরকারের ওই ঘোষণার অল্প দিনের মধ্যেই এ দিন জয়পুরিয়ার ওই ঘটনার পরে ফের ছাত্র-ভোট নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.