জীবনে প্রথম বার একা বিমান ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটা মোটেই ভাল হল না ঢাকার যাত্রী জয়া চক্রবর্তীর।
বিমান বাতিল হয়ে যাওয়ায় সোমবার শীতের রাতটা তাঁকে কাটাতে হল কলকাতা বিমানবন্দরে। মঙ্গলবার সকাল হওয়ার পরেও প্রতীক্ষা শেষ হয়নি। ২২ ঘণ্টা কলকাতা বিমানবন্দরে আটকে থেকে এ দিন দুপুরে শেষমেশ ঢাকা পাড়ি দিলেন জয়া। একই অভিজ্ঞতা ঢাকাগামী অন্য যাত্রীদেরও।
জয়ার কথায়, “জীবনে এই প্রথম একা যাচ্ছিলাম। যথেষ্ট খারাপ অভিজ্ঞতা।” কলকাতা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে ঢাকা যাওয়ার জন্য সোমবার বিকেল চারটেয় বিমানবন্দরে পৌঁছন জয়া। আর তাঁর বিমান ছেড়েছে মঙ্গলবার দুপুর দু’টোর পরে। কিন্তু কেন এই হয়রানি?
বিমানসংস্থা জানাচ্ছে, পাইলটের অভাবে এবং বিমানের যান্ত্রিক গোলযোগের জন্যই সোমবারের ঢাকা উড়ান বাতিল করতে হয়েছে। তবে পাইলটের অভাবটাই এখন তাঁদের কাছে মূল সমস্যা বলে জানিয়েছেন এয়ার ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্র। তিনি বলেন, “অনেক পাইলটই শীতের ছুটিতে। হায়দরাবাদে প্রশিক্ষণ নিতে চলে গিয়েছেন কয়েক জন। তাই অতিরিক্ত পাইলট পাওয়া যায়নি।”
পাইলটরা কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, যথেষ্ট সংখ্যক কম্যান্ডার পাইলট না থাকায় এই সমস্যা হচ্ছে। কো-পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কম্যান্ডার পাইলট তৈরির করার প্রক্রিয়া গত এক বছর ধরে বন্ধ রেখেছে সংস্থা। তাই সমস্যা হচ্ছে প্রধানত কম্যান্ডার পাইলট নিয়েই। কলকাতা বেস-এ কম্যান্ডার ও কো-পাইলট মিলে ছিলেন প্রায় ৫০ জন। তাঁদের মধ্যে সম্প্রতি কয়েক জন ড্রিমলাইনার ওড়ানোর প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছেন। তাই কম্যান্ডার পাইলটের ঘাটতি রয়েছে। তবে এয়ার ইন্ডিয়ার দাবি, সময়মতোই কম্যান্ডার প্রশিক্ষণ হচ্ছে। এ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।
ঠিক কী হয়েছিল সোমবার? বিমান সংস্থা সূত্রে খবর, সোমবার দুপুরে যান্ত্রিক গোলযোগে গয়াতেই আটকে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান। গয়ার ওই বিমানের পাইলটেরই কলকাতায় এসে সন্ধ্যায় ঢাকার বিমান নিয়ে উড়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই বিমানে যাওয়ার জন্য কলকাতা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন জয়ার মতো অন্য ১২২ জন যাত্রী। গয়ায় আটকে পড়া পাইলটের কোনও বদলি কলকাতায় ছিল না। তাই ঢাকার বিমান বাতিল করতে হয়।
বিমানসংস্থা জানাচ্ছে, ওই বিমান ঠিক করার জন্য তড়িঘড়ি মুম্বই থেকে ইঞ্জিনিয়ার ও যন্ত্রাংশ সমেত একটি বিমান গয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই বিমান গয়ার যাত্রী ও পাইলটদের নিয়ে কলকাতায় চলে আসে। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট পাইলটের ফ্লাইং টাইম অত্যধিক বেশি হয়ে যাওয়ায় তাঁকে আর ঢাকায় বিমান নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি বলে বিমান সংস্থা সূত্রের খবর।
জয়ার বাড়ি ভোপালে। স্বামী ঢাকায় কর্মরত। জয়া জানিয়েছেন, “সোমবার সন্ধ্যা সাতটা কুড়ি মিনিট নাগাদ বিমানটি ছাড়ার কথা ছিল। রাত দশটা নাগাদ যাত্রীরা যখন বেশ অধৈর্য্য হয়ে পড়েছিলেন, তখন বিমান বাতিল করার কথা বলা হয়। কলকাতায় আমার কয়েক জন আত্মীয় আছে ঠিকই, কিন্তু রাস্তাঘাট চিনি না। ফলে অত রাতে এয়ার ইন্ডিয়া ট্যাক্সি-ভাড়া দিতে চাইলেও আমার পক্ষে যাওয়াটা নিরাপদ ছিল না। এক সময়ে হোটেলেও জায়গা নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। তাই বিমানবন্দরেই থেকে যাই। আমাকে হোটেলে পাঠালে তো আমি সানন্দে চলে যেতাম।”
দুপুরে দিল্লি-ঢাকা উড়ানের মুখ ঘুরিয়ে কলকাতায় নামিয়ে আনা হয়। সেই বিমানেই পাঠানো হয় জয়াদেবীদের। |