বিমানবন্দরের ভিতর থেকে সোনা নিয়ে বাইরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মিলত ২০ হাজার করে টাকা। সেই লোভেই এমন কাজে বেশ কয়েক বার হাত পাকিয়েছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার ট্রাফিক সুপারিন্টেন্ডেন্ট বিনীত জেভিয়ার তিরকে। এমনটাই দাবি করছেন গোয়েন্দারা।
তবে গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সম্প্রতি চোরাচালানকারীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। জানা গিয়েছে, মাস চারেক আগে দুবাই থেকে কলকাতায় ছয় কিলোগ্রাম সোনা নিয়ে আসেন আফতাব আলি নামে এক চোরাকারবারি। সেই সোনা দেওয়া হয় বিনীতকে। গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া বিনীতের বয়ান অনুযায়ী, সে দিন তিনি লুকিয়ে সোনা নিয়ে বেরোনোর সময়ে দেখেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ অফিসারেরা বিমানবন্দর ও বিমান সংস্থার কর্মীদের শরীর তল্লাশি করছেন। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি শৌচাগারে গিয়ে ওই সোনা লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু পরের দিন শৌচাগারে গিয়ে দেখেন, সোনা নেই! খবর পান, তা শুল্ক অফিসারদের হাতে চলে গিয়েছে। তবে বিনীতের বয়ান মানতে চাননি আফতাব। তাঁর ধারণা, সেই সোনা বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন বিনীত। তিনি গোয়েন্দাদের জানান, এর পরে তিনি আফতাবের হয়ে কাজ করা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিনীতের সঙ্গে চোরাচালানের যোগাযোগের কথা এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে বলে তাঁকে ভয় দেখাতে থাকেন আফতাব। তাই বাধ্য হয়েই বিনীতকে আবার কাজে নামতে হয়।
বিনীত জানান, সোমবার শেষ বারের মতো সেই কাজ করতে গিয়েই তিনি হাতেনাতে ধরা পড়ে যান ডিআরআই অফিসারদের হাতে। গ্রেফতার করা হয়েছে বাংলাদেশের বাসিন্দা আফতাব আলি, তাঁর ভাই আলিম আলি এবং কলকাতার বাসিন্দা দীনবন্ধু মণ্ডলকেও। সোমবার দীনবন্ধু ও আলিমই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন বিমানবন্দরের বাইরে। তাঁদের হাতেই ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকার সোনা তুলে দিয়েছিলেন বিনীত। সেই সোনা সোমবার সকালেই দুবাই থেকে কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন আফতাব।
তদন্তে জানা গিয়েছে, গত ২০ বছর ধরে এয়ার ইন্ডিয়ায় কাজ করেন বিনীত। তবে তার মধ্যে কর্মসূত্রে তিন বছরের জন্য তিনি ঢাকায় ছিলেন। তখনই তাঁর সঙ্গে আফতাবের আলাপ হয়। সহকর্মীদের কাছে ‘নিরীহ’ বলে পরিচিত বিনীতের সঙ্গে কিছু দিনের মধ্যেই আফতাবের বেশ ঘনিষ্ঠতাও হয়ে যায়। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, বেশ কয়েক বছর ধরেই ছোটখাটো চোরাচালানের ক্ষেত্রে আফতাবকে সাহায্য করে আসছিলেন বিনীত।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে বেশ কয়েক বার দুবাই থেকে সোনা নিয়ে কলকাতায় এসেছেন আফতাব। কোনও বারই তিনি কলকাতা শহরে ঢোকেননি। ভারতে ঢোকার ভিসার জন্য আবেদনও করেননি। শুধু কলকাতা বিমানবন্দরে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে উড়ে যেতেন ঢাকায়। তার মধ্যেই তাঁর সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছ থেকে সোনা নিয়ে বাইরে পৌঁছে দিতেন বিনীত। গোয়েন্দাদের ধারণা, এ ভাবে গত এক বছরে প্রায় পাঁচ বার সোনা পাচারে সাহায্য করেছেন বিনীত। প্রতি বারই গড়ে পাঁচ থেকে সাত কিলোগ্রাম সোনা পাচার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রে খবর, বিনীত জেভিয়ার তিরকে-কে কাজ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সংস্থাও আলাদা করে ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। মঙ্গলবার চার অভিযুক্তকেই ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়েছিল। তাঁদের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
|