খাতায়-কলমে প্রকল্প আছে। গৃহহীনদের আশ্রয়দানের প্রকল্প। অথচ স্রেফ উপযুক্ত ঘরের অভাবে হাওড়ায় তা রয়ে গিয়েছে ভাবনাচিন্তার স্তরেই। হাওড়া স্টেশনের হাল ফেরাতে সম্প্রতি স্টেশন চত্বর হকারমুক্ত করে দেওয়ায় যার মাসুল গুনছেন এত দিন ওই চত্বরে বসবাসকারী গৃহহীনেরা। তাঁদের রাত কাটছে ফুটপাথেই। স্টেশন চত্বর হকারমুক্ত করার এই প্রশাসনিক উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও ওই ভবঘুরেদের থাকার ব্যবস্থা চাইছেন নিত্যযাত্রী ও এলাকাবাসীরাও।
গৃহহীনদের বাসস্থান সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ২০১১ সাল থেকেই রাজ্যের পুর এলাকায় “গৃহহীন আশ্রয়” প্রকল্প চালু করেছিল। সমাজ কল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই এই প্রকল্প চালু হয়। কিন্তু হাওড়া পুরসভা এলাকায় উপযুক্ত ঘরের অভাবে গৃহহীনদের সমস্যা মেটানো যাচ্ছে না। এত দিন এই ধরনের কিছু মানুষ থাকতেন স্টেশন লাগোয়া কলকাতা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে। কিন্তু বর্তমানে আর কোনও উপায় না থাকায় রাত বাড়লে ফুটপাথে কোনও রকমে কাটাচ্ছেন তাঁরা।
কেউ থাকেন বর্ধমানের কেতুগ্রামে। কারও বাড়ি কাটোয়ায়। পূর্ব মেদিনীপুরের নারায়ণ পাকুড়িয়া মুরাইলের বাড়ি ছেড়েছেন এক বৃদ্ধা। কয়েক জন মিলে ঘর পেতেছিলেন বাস ছাউনিগুলিতে। লেবু, সিগারেট, চা বিক্রি করে কোনও রকমে দিন গুজরান। কেউ বা দিনভর ভিক্ষা করে রাতে ফিরতেন নির্দিষ্ট জায়গায়।
এমনই এক মহিলা বলেন, “আমরা তো গরিব, আমাদের পাশে কে দাঁড়াবে? এ ভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল।” এক নিত্যযাত্রী কার্তিক সাউ বলেন, “স্টেশন চত্বরের হাল ফেরাতে প্রশাসন যা করেছে, তা একেবারেই ঠিক কাজ। তবে এদেরও থাকার বন্দোবস্ত হলে ভাল হয়।”
কী এই গৃহহীন আশ্রয় প্রকল্প? কী ভাবে বাস্তবায়িত হয় এটি?
নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দফতরের চক্রচর (ভ্যাগাবন্ড) নিয়ামক বিভাগ সূত্রের খবর, ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে রাজ্য সরকার ‘গৃহহীন আশ্রয়’ প্রকল্প চালু করে। প্রধানত পুরসভা এলাকায় এটি চালু হয়। বর্তমানে কলকাতা, হাওড়া ও আসানসোল পুর-এ লাকায় এই প্রকল্প চালু রয়েছে। তবে প্রকল্পের বেশ কিছু শর্ত রয়েছে।
দফতর সূত্রের খবর, ১০০০ বর্গমিটার এলাকার কোনও বাড়ি যেখানে ৪০টি ঘর, ২টি স্নানঘর, ২টি শৌচালয় (স্নানঘর ও শৌচালয় একসঙ্গে থাকলে মোট দু’টি), ২৪ ঘণ্টা জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা, বিনোদনের জন্য টিভি এবং বাড়িটির আইনত বৈধতার প্রমাণ রয়েছে এমন বাড়িতেই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা যাবে। এই শর্তগুলি পূরণ করে এমন বাড়ির খোঁজ নিয়ে পুরসভা বা স্থানীয় জেলাশাসক সমাজকল্যাণ দফতরে সেই তথ্য দিতে পারেন। অথবা কোনও এনজিও এই প্রকল্পে ভাড়া দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিগত কারও বাড়ির খোঁজ দিতে পারে দফতরে। সমাজকল্যাণ দফতরের চক্রচর নিয়ামক বিভাগের আধিকারিকেরা তথ্য যাচাই করে প্রকল্প চালু করলে সেই বাড়িতেই গৃহহীনরা থাকতে পারবেন। বিছানা, এবং শীতে কম্বলও দেওয়া হয় তাঁদের।
দফতর সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত হাওড়া, কলকাতা ও আসানসোল পুরসভায় এই প্রকল্পের মোট ৩৭টি বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে হাওড়ায় রয়েছে ৭টি। সালকিয়া ও রামকৃষ্ণপুরে রয়েছে হাওড়া পুরসভার নিজস্ব ভবন। ব্যক্তিগত বাড়ি রয়েছে টিকিয়াপাড়ায় দু’টি, লিলুয়া, দানেশ শেখ লেন ও কোনার তেঁতুলতলায় একটি করে।
তা হলে গৃহহীনদের ঘর দেওয়া যাচ্ছে না কেন?
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা হাওড়া পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “আপাতত পুরসভার তেমন বাড়ি নেই। তবে আমরা দ্রুত এমন বাড়ির বন্দোবস্ত করতে চেষ্টা করছি।” স্থানীয় এক এনজিও সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, “সরকারি বাড়ির কথা বলতে পারব না। তবে ব্যক্তিগত ভাবে এই প্রকল্পের জন্য কেউ আর বাড়ি দিতে চাইছেন না।”
যদিও এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “এ বিষয়ে পুরোটা জানি না। কলকাতা বাস স্ট্যান্ড অঞ্চলে শীঘ্রই অফিসারদের পাঠিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। অবশ্যই চেষ্টা করব ওই গৃহহীনদের জন্য কোনও বাড়ির বন্দোবস্ত করতে।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও বলেন, “ভবঘুরেদের জন্য হোমের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আলোচনা করেছি। |