কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক দিয়ে কংগ্রেসের দখলে থাকা জলপাইগুড়ি পুরসভা ‘ঘেরাও’ করে, আগামী লোকসভা ভোটের আগে শহরে সাংগঠনিক শক্তির বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করল তৃণমূল।
পুরসভার মিড ডে মিলের টাকা অন্য খাতে খরচ করা, সিনিয়র সিটিজেন পার্ক তৈরি, বার্ধক্য ভাতা বিলি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বুধবার যুব তৃণমূল কংগ্রেস পুরসভা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। কংগ্রেস ছেড়ে সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন যুব কংগ্রেস সভাপতি তথা বর্তমানে যুব তৃণমূলের সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই এ দিন ঘেরাও কর্মসূচি হয়। এ দিনের কর্মসূচিতে কর্মী সমর্থকদের প্রচুর ভিড় দেখে স্বভাবতই উৎসাহিত জেলা তৃণমূল নেতৃবৃন্দ। তাঁদের দাবি, আগামী বছর লোকসভা এবং তার পরের বছর পুরসভা ভোটে জলপাইগুড়ি শহরে তৃণমূল যে কংগ্রেসকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে যাচ্ছে তার ‘বার্তা’ ভালভাবেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এ দিন সৈকতবাবু ছাড়াও সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্দীপ মাহাতো, জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি চন্দন ভৌমিক, কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রামারি, রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়, সোমনাথ পাল-সহ অন্য নেতারা সমাজপাড়া আইএমএ মাঠ থেকে কয়েক হাজার সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে পুরসভার সামনে যান। সেখানেই বিক্ষোভ সভা হয়। পুরসভার সামনে সভা হলেও, ডিবিসি রোড, মার্চেন্ট রোডের মতো জনবহুল এলাকাতেও সভার মাইক বাঁধা হয়েছিল। বিক্ষোভ সভার পর মহকুমাশাসকের কাছে গিয়ে পুরসভার অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার দাবি জানিয়েছেন। |
যুব তৃণমূলের পুরসভা অভিযান জলপাইগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র। |
যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকতবাবু বলেন, “মিড ডে মিলের টাকা অন্য খাতে খরচ থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে ৪ কোটিরও বেশি টাকার অনিয়ম হয়েছে। বিস্তারিত তথ্য মহকুমাশাসককে জমা দিয়েছি। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুরসভার চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে হবে।” মহকুমাশাসক সীমা হালদার জানিয়েছেন, সমস্ত অভিযোগগুলি নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।
এ দিন তৃণমূলের বিক্ষোভ চলার সময়ে চেয়ারম্যান মোহন বসু এবং ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত দু’জনেই পুরসভাতেই ছিলেন। টানা ১৫ বছর ধরে কংগ্রেসের একক গরিষ্ঠতায় থাকা জলপাইগুড়ি পুরসভার সামনে এমন বিপুল বিক্ষোভ সমাবেশের নজির নেই বলেই কংগ্রেস সূত্রেরই খবর। এ দিন তৃণমূলের তোলা অভিযোগের জবাব দিতে আজ বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের তরফে সাংবাদিক বৈঠকও ডাকা হয়েছে। চেয়ারম্যান মোহন বসু অবশ্য এ দিন বলেছেন, “সব অভিযোগ-ই ভিত্তিহীন।” সেই সঙ্গে মোহনবাবু জানান, সৈকত চট্টোপাধ্যায় এবং সন্দীপ মাহাতো এক সময় কাউন্সিলর ছিলেন।
বর্তমানে সৈকতবাবুর মা এবং সন্দীপবাবুর স্ত্রী কংগ্রেসের কাউন্সিলর। পুর চেয়ারম্যানের দাবি, “পুরসভার আগের বোর্ডে এবং এই বোর্ডে যা সিদ্ধান্ত হয়েছে সব কাউন্সিলরদের লিখিত সম্মতি নিয়েই হয়েছে। আমরা যদি চোর হই, তবে চোরের ঘরে তাঁদের মা এবং স্ত্রীকে কেন রেখেছেন?” এ ব্যাপারে সন্দীপবাবুর স্ত্রী রাণী দেবী জানিয়েছেন, তিনি দল ছাড়ার কথা ভাবছেন না। তবে সৈকতবাবু মা চিত্রা দেবী বলেছেন, “রাজনীতিতে এক দল অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতেই পারে। তা নিয়ে তদন্ত হলে কোনও ক্ষতি নেই।”
সিপিএম অবশ্য সন্দেহ করছে, এসজেডিএ কাণ্ডে তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সাংগঠনিক সভাপতি চন্দন ভৌমিকের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় জনতার নজর অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে। সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সলিল আচার্য বলেন, “ওই আন্দোলন আসলে এসজেডিএ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তৃণমূলের জেলা সভাপতির উপরে বেড়ে চলা চাপের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশল মাত্র।” যদিও সৈকতবাবুর প্রশ্ন, “এসজেডিএ-র প্রশ্ন উঠছে কেন? দুর্নীতির অভিযোগে ওখানে তদন্ত চলছে। জলপাইগুড়ি পুরসভার অনিয়ম নিয়ে তদন্ত হবে না কেন?” |