সম্পাদকীয় ২...
পথে বসিবার প্রস্তুতি
রিবর্তন সত্যই আসিয়াছে। সে কালে পড়ুয়ারা পরীক্ষায় খারাপ ফল করিলে অভিভাবকরা তাহাদের তিরস্কার করিতেন, মন দিয়া লেখাপড়া করিতে বলিতেন, ছেলেমেয়েকে পড়াইতে বসিতেন, ভাল গৃহশিক্ষকের খোঁজ করিতেন। ছাত্রছাত্রীরাও কিছুটা দুঃখে ও অনুতাপে, কিছুটা ভয়ে, কিছুটা বা ভাল করিবার প্রতিজ্ঞায় পাঠে মন দিত। এ কালে পরীক্ষায় খারাপ করিলে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরা একযোগে রাজপথে বসিয়া যান চলাচল রোধ করেন। সোমবার শ্যামবাজারের একটি প্রাচীন এবং এক কালের খ্যাতনামা স্কুলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক-এর টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য কিছু পড়ুয়া ও তাহাদের অভিভাবকরা এমনই এক ইতিহাস সৃষ্টি করিলেন। ‘সৃষ্টি’ না বলিয়া ‘লালন’ করিলেন বলাই যুক্তিযুক্ত। কারণ, ‘ফেল নয়, পাশ চাই’ দাবিতে অনুরূপ অবরোধ বিক্ষোভের ঘটনা গত বছরেও ঘটিয়াছে। এক নয়, অনেক। বুঝিতে অসুবিধা নাই, নূতন ঐতিহ্য তৈয়ারি হইতেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করিয়া পরীক্ষার ফল উল্টাইয়া দিবার ঐতিহ্য। ইহাকে অঙ্কুরে বিনাশ করিবার আর উপায় নাই, অঙ্কুর ইতিমধ্যেই ডালপালা মেলিয়াছে।
সম্পূর্ণ অন্যায় জুলুমের এই বিষবৃক্ষটি মহীরুহে পরিণত হইবার আগে যদি তাহাকে বিনাশ করিতে হয়, প্রথম কাজ আপসহীন ভাবে তাহার মোকাবিলা। কোনও স্কুলে কোনও অবস্থাতেই চাপে পড়িয়া নতিস্বীকার করা চলিবে না। সে জন্য প্রশাসনকে সর্বপ্রকারে স্কুল কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করিতে হইবে। সোমবারের ঘটনা উপলক্ষে শিক্ষামন্ত্রী তেমন কঠোরতার পক্ষে সওয়াল করিয়াছেন। এই অবস্থানে অবিচল থাকা তাঁহার কর্তব্য। প্রয়োজনে স্কুলের পাশে দাঁড়ানো তাঁহার দায়িত্ব। কঠোরতায় যে ফল হয়, শ্যামবাজারের স্কুলটির ঘটনাচক্র হইতেই তাহা স্পষ্ট— বিক্ষোভের পরের দিন খাতা দেখিয়া বিক্ষুব্ধ পড়ুয়া ও অভিভাবকরা ফল মানিয়া লইয়াছেন! তবে অভিভাবকদের খাতা দেখানো যদি রীতি না হয়, তাহা হইলে রাস্তা অবরোধের পরেই বা তাহা কেন দেখানো হইবে, সে প্রশ্নও উঠিবেই। ইহাও কিন্তু আপস।
যে অভিভাবকরা স্কুলের উপর চাপ দিতে ‘আন্দোলন’ করেন, তাঁহাদের আত্মসংযমের দায় আছে। অন্যদেরও কিন্তু দায় আছে এই উন্মার্গগামী অনৈতিক আচরণ হইতে তাঁহাদের নিবৃত্ত করিতে সচেষ্ট হওয়া। সমাজের এক অংশের অন্যায় গোটা সমাজকে বিপথে চালিত করিতে পারে, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, নীতি ও শৃঙ্খলার ক্ষতি সাধন করিতে পারে। বিশেষ করিয়া স্কুলের পরিসরেই যদি অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলার অভ্যাস তৈয়ারি হয়, তাহার পরিণাম সুদূরপ্রসারী হইতে বাধ্য। পশ্চিমবঙ্গ এই প্রক্রিয়ার সাক্ষী ও শিকার। ষাট-সত্তরের দশকে শিক্ষাজগতের যে সর্বনাশ ঘটিয়াছিল, তাহার কুফল আজও ফুরায় নাই। তাহার পরে ক্রমে এক ধরনের স্থিতি আসিয়াছিল। সেই স্থিতি উৎকর্ষ আনিতে পারে নাই, তাহা অন্য সমস্যা। স্থিতির আড়ালে বহু অনিয়মও সাধিত হইয়াছে, কিন্তু সেই অনিয়ম সাধারণত আড়ালেই থাকিয়াছে। বর্তমান জমানায় অন্য অনেক বিষয়ের মতোই এ ক্ষেত্রেও অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা অতিমাত্রায় প্রকট। ইহা উদ্বেগের কারণ। জুলুমের দ্বারা নিয়ম ভাঙিবার রীতি এক বার প্রচলিত হইলে শিক্ষার কাঠামোই ভাঙিয়া পড়িবে। পরিণাম ছাত্রছাত্রীদের পক্ষেও শুভ হইবে না। পথে বসিয়া নম্বর বাড়াইতে গিয়া যাঁহারা আপন সন্তানের ভবিষ্যৎটিকে পথে বসাইতেছেন, তাঁহারা ঈষৎ কাণ্ডজ্ঞান সংগ্রহ করিলে সন্তানদেরই মঙ্গল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.