শিলাদিত্য চৌধুরীর অপরাধ কী ছিল? তিনি নির্বাচিত সরকারের প্রধানের কাছে সারের দর বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন এটাই কি তাঁর অপরাধ? শিলাদিত্য চৌধুরীর দায়ের করা মামলার শুনানির সময়ে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি আইনজীবী শাক্য সেনকে নিজেই এই প্রশ্ন করেন।
গত বছরের ৮ অগস্ট পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা থেকে পুলিশ শিলাদিত্যকে আটক করে। প্রাথমিক ভাবে তাঁর গায়ে মাওবাদী তকমা দেওয়া হলেও পরবর্তী কালে ওই অভিযোগ থেকে তাঁকে রেহাই দেয় সরকার। ফলে সে দিন রাতেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঘটনার এক দিন পর, ১০ অগস্ট ফের শিলাদিত্যকে গ্রেফতার করা হয়। বিনপুরের লোয়াগা গ্রামে জমিতে চাষের কাজের সময় ওই প্রান্তিক চাষিকে থানায় তুলে আনে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে হাই সিকিওরিটি জোনের ব্যারিকেড ভাঙার অভিযোগ এনে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। অবশেষে ২৪ অগস্ট শিলাদিত্য জামিনে মুক্তি পান।
ওই ঘটনার পরে মাওবাদী বলে শিলাদিত্যকে গ্রেফতার করায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করে রাজ্য সরকারের কাছে। কিন্তু সরকার এখনও সেই টাকা দেয়নি। রাজ্য সরকার যাতে ওই ক্ষতিপূরণ দেয়, সেই আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন শিলাদিত্য।
এ দিন মামলার শুনানির সময়ে বিচারপতি জানতে চান, তাঁকে মাওবাদী অভিযোগে গ্রেফতার করা হলেও এফআইআরে তা প্রতিফলিত হয়নি কেন। সরকারি আইনজীবী বলেন, শিলাদিত্য পুলিশের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছিলেন। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন। বিচারপতি জানতে চান, ব্যারিকেড কীসের? সরকার পক্ষের জবাব, হাই সিকিওরিটি জোনের জন্য ব্যারিকেড। বিচারপতির প্রশ্ন, ব্যারিকেডের গায়ে কি কোনও নোটিশ লাগানো ছিল? তা যদি না হয় লোকে কী করে জানবে, ওটা হাই সিকিওরিটি জোনের ব্যারিকেড।
এর পরেই বিচারপতি বলেন, এক জন সাধারণ মানুষের সঙ্গে যা খুশি করা যায়, পুলিশের ধারণা এমনই। শিলাদিত্যকে ১৪ দিন পুলিশের হেফাজতে রাখা হল। অথচ তিনি যে মাওবাদী, তার কোনও প্রমাণ মিলল না। সরকারের প্রধানের জনসভায় তিনি গিয়েছিলেন। তাঁকে বেদনার কথা বলতে গিয়েছিলেন। মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ রাজ্য গ্রহণ করছে কি না, তাও জানতে চান বিচারপতি।
সরকারি আইনজীবী জানান, ২১ নভেম্বর কমিশন সরকারকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত বিবেচনার জন্য তিন মাস সময় দিয়েছে। বিচারপতি কমিশনের ওই সুপারিশ দেখতে চান। সরকারি আইনজীবী দেখাতে পারেননি। আজ, বুধবার কমিশনের সুপারিশ হাইকোর্টে দেখাতে হবে সরকারকে। |