মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বিশৃঙ্খলায় অভিযুক্ত শিলাদিত্যর জামিন
পুলিশ একাধিক জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত করলেও শুক্রবার জামিন পেলেন মুখ্যমন্ত্রীর বেলপাহাড়ির সভায় ‘বিশৃঙ্খলা বাধানো’ শিলাদিত্য চৌধুরী। ঝাড়গ্রাম উপ-সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে তাঁর বক্তব্য, “সে দিনের (৮ অগস্ট) সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সারের অভাবে চাষবাসের সমস্যার কথা বলতে চেয়েছিলাম। বাড়ি ফিরতে চাই।”
গত ১৮ অগস্ট মেদিনীপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক সমর রায়ের কাছে বিনপুরের নয়াগ্রামের বাসিন্দা শিলাদিত্যের জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী তথা জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক চিরঞ্জীব ভৌমিক। এ দিন ছিল সেই আবেদনের শুনানি। সরকারি আইনজীবী রাজকুমার দাস জামিনের বিরোধিতা করলেও ১ হাজার টাকার বন্ডে শিলাদিত্যর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক। তাঁকে দেখার জন্য সংশোধনাগারের বাইরে অপেক্ষায় ছিল থিকথিকে ভিড়।
শিলাদিত্য গ্রেফতারের ঘটনা ‘আমজনতার গণতান্ত্রিক অধিকার খর্বের দৃষ্টান্ত’ বলে অভিযোগ তুলেছিল বাম, বিজেপি থেকে শুরু করে তৃণমূলের জোট-সঙ্গী কংগ্রেসও। এ দিন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “আগেই বলেছিলাম শিলাদিত্য মাওবাদী নন। যা সত্য, তা আদালতে প্রকাশ পেয়েছে।” নামখানায় এ প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, “এটা সরকার চলছে না সার্কাস, বুঝতে পারছি না!” শিলাদিত্যর বিষয়টি তদন্ত করতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হওয়া বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের প্রতিক্রিয়া, “শিলাদিত্যর মা, ভাইকে আমি কথা দিয়েছিলাম, মাওবাদী আখ্যা দিয়ে যে কলঙ্ক গায়ে লাগানো হয়েছিল, তা মুছে দেব। উনি জামিন পাওয়ায় কথা রাখতে পেরেছি।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আর্জি, নিরীহ মানুষকে মাওবাদী ‘তকমা’ দিয়ে মাওবাদীর সংখ্যা বাড়াবেন না।” পক্ষান্তরে জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের মন্তব্য, “জামিন পাওয়া মানেই মামলা শেষ হয়ে যাওয়া নয়।”
মুক্তির পরে: বিনপুরের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে শিলাদিত্য চৌধুরী। শুক্রবার দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সভা চলাকালীন গলা চড়িয়ে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল শিলাদিত্যকে। তাঁর ‘আচরণে’ ‘ক্ষুব্ধ’ হন মমতা। বক্তৃতার মধ্যেই ‘মাওবাদীরা সভায় লোক ঢুকিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। শিলাদিত্যকে ‘ধরার’ নির্দেশও দেন। পুলিশ তাঁকে মঞ্চের পিছনে ধরে নিয়েও যায়। এর পরে পুলিশের দাবি, জেরা চলাকালীন ‘কড়া’ নিরাপত্তার বেষ্টনী গলে ‘পালিয়ে যান’ শিলাদিত্য। যদিও পরিবারের দাবি, মামুলি কিছু কথা জেনে পুলিশই সে দিন ছেড়ে দেয় শিলাদিত্যকে। ১০ অগস্ট বিনপুর থেকে বছর আটত্রিশের এই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালত শিলাদিত্যর জামিনের আবেদন খারিজ দিয়ে তাঁকে জেল-হেফাজতে পাঠায়।
শিলাদিত্যর আইনজীবী চিরঞ্জীব ভৌমিক এ দিন আদালতে বলেন, “শিলাদিত্য যদি সত্যিই মাওবাদী হন, তা হলে গ্রেফতারের পরে পুলিশ তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করল না কেন?” ভারতীয় দণ্ডবিধির যে চারটি ধারায় শিলাদিত্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ৩৩২ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে আঘাতের চেষ্টা) ও ৩৫৩ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা) ছিল জামিন অযোগ্য। চিরঞ্জীববাবু আদালতে বলেন, “যদি কাউকে আঘাতই করা হয়েছে, তা হলে ‘ইনজুরি রিপোর্ট’ কোথায়? পুলিশ এমন কোনও রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়নি।” সরকারি কৌঁসুলি পাল্টা বলেন, “অভিযুক্ত প্রথমে নিজের নাম গোপন করেছিলেন। পরে ঠিক নাম বলেছেন। কেন নাম গোপন করলেন? নিশ্চয়ই কোনও উদ্দেশ্য ছিল।” তাঁর বক্তব্য, “বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্যই সে দিন সভার ‘হাই-সিকিওরিটি জোনে’ ঢুকে চেঁচাচ্ছিলেন শিলাদিত্য। যদি নিজের পরিবার বা কৃষকদের সমস্যার কথাই বলতে আসেন, তা হলে এটা কি তা জানানোর পদ্ধতি? এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত ছিল।” দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন।
বারবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষ এ দিন ফোন ধরেননি। এ দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে পৌঁছনোর পরে শিলাদিত্যর মা সন্ধ্যাদেবী ছেলেকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলেন। কোনও মতে বলেন, ‘‘ছেলে ঠিক, না ভুল করেছে জানি না! ও যে সুস্থ ভাবে ফিরে এসেছে, এটাই সব!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.