|
|
|
|
‘প্রতিবাদের কণ্ঠ’ শিলাদিত্যকে সেলাম জনতার |
কিংশুক গুপ্ত • বিনপুর |
শুক্রবার সন্ধ্যে ৬টা। হাফহাতা কালো টি-শার্ট আর নীল জিনসের বিধ্বস্ত যুবকটি ঝাড়গ্রাম উপ-সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে দাদাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। করজোড়ে সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, “সে দিন বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় সারের অভাবে চাষবাসের সমস্যার কথা বলতে চেয়েছিলাম। ‘দিদি’কে জানাতে চেয়েছিলাম কষ্টের কথা। চোদ্দদিন পরিজনদের মুখ দেখতে পাইনি। আমি বাড়ি যেতে চাই।” জেলের প্রধান ফটক থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে যাওয়ার আগেই অত্যুৎসাহী কে যেন গলায় পরিয়ে দিলেন ফুলের মালা! তাঁকে দেখার জন্য জেলের বাইরে থিকথিকে ভিড়। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ভাবেই ‘চাষি’ শিলাদিত্য চৌধুরীর ‘নব-নির্মাণ’ ঘটল! দাদা ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে গাড়িতে করে বিনপুরের নয়াগ্রামে বাড়ির পথে রওনা দিলেন শিলাদিত্য। পিছনে তখন জনতার স্লোগান ‘শিলাদিত্য চৌধুরী …প্রতিবাদের কন্ঠস্বর, যুগ যুগ জিও’। |
|
ঝাড়গ্রাম সাব-জেলের বাইরে দাদার সঙ্গে শিলাদিত্য। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
এ দিন দুপুরে হাজিরার দিন থাকায় জেল থেকে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে যখন শিলাদিত্যকে নিয়ে আসা হয় তখন তাঁর পরনে ছিল ছাইরঙা টি-শার্ট। তখনও শিলাদিত্য জানেন না মেদিনীপুর জেলা আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে। সেই খবর দিয়ে সংবাদ মাধ্যম তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কোনও জবাব না দিয়ে আদালতে ঢুকে যান শিলাদিত্য। বিকেল তিনটে নাগাদ শিলাদিত্যকে ফের সাব-জেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সাড়ে তিনটে নাগাদ মেদিনীপুর থেকে আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি নিয়ে আসেন শিলাদিত্যের দাদা তিলক চৌধুরী। শিলাদিত্যের আইনজীবী অশ্বিনী মণ্ডল সেই প্রতিলিপি-সহ জামিননামা দাখিল করলে শিলাদিত্যকে জেল থেকে ছাড়ার নির্দেশ দেন এসিজেএম প্রিয়জিৎ চট্টোপাধ্যায়। সন্ধ্যায় সাব-জেল থেকে ছাড়া পেয়ে দাদা তিলকবাবুর সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন শিলাদিত্য। এ দিন দুপুর থেকেই ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজির ছিলেন জেলা কংগ্রেসের দুই সহ-সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য ও নিখিল মাইতি। দুই প্রবীণ নেতা-ও সন্ধ্যায় বিনপুরের নয়াগ্রামে শিলাদিত্যের বাড়িতে যান। সন্ধে সাতটা নাগাদ শিলাদিত্য বিনপুরের নয়াগ্রামের বাড়ির সামনে পৌঁছতেই মা সন্ধ্যাদেবী চার বছরের নাতি বিষ্ণুকে কোলে নিয়ে ছুটে যান। মা ও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন শিলাদিত্য। এরপর কান্নায় ভেঙে পড়া স্ত্রী খুকুমণির সঙ্গে ঘরে ঢোকেন। বাবা বাড়ি ফেরায় ৬ বছরের বৃষ্টির আনন্দ আর ধরে না। সে উঠোনে আনন্দে দৌড়ে বেড়াতে থাকে। সন্ধ্যাদেবী করজোড়ে বলেন, “ছেলে বাড়ি ফিরেছে। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।” ছেলের জন্য নিজের হাতে ভাত, ডাল, ঢ্যাঁড়শ ভাজা, আলুপোস্ত আর ডিমভাজা করেছেন সন্ধ্যাদেবী। বললেন, “চোদ্দ দিন ছেলেটা জেলের খাবার খেয়েছে। আলুপোস্ত খেতে ভালবাসে।” রাতে শিলাদিত্যের বাড়ির উঠোনে জনতার ভিড়। সকলেরই বক্তব্য, “শিলাদিত্য কোনও অন্যায় করেনি। শিলাদিত্য প্রতিবাদের মুখ, এলাকার গর্ব।” শিলাদিত্য নিজেও বলেন, “আমি মাওবাদী নই।” |
|
|
|
|
|