|
|
|
|
বিরোধী প্রার্থী নেই, বিনা-যুদ্ধে পুরপ্রধান প্রণব
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
রাজনৈতিক সৌজন্যের আবহে পুরপ্রধান নির্বাচন হল মেদিনীপুরে। বাম জোট ও কংগ্রেস কোনও প্রার্থী না দেওয়ায় বিনা লড়াইয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য পুরপ্রধান পদের দায়িত্ব নিলেন তৃণমূলের প্রণব বসু। বিরোধীদের বক্তব্য, মানুষ তৃণমূলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছেন। তাই মানুষের রায়কে সম্মান জানাতেই বিরোধী শিবির পুরপ্রধান পদে কোনও প্রার্থী দেয়নি। সৌজন্যের বার্তা দিতে সোমবার পুরপ্রধানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও হাজির ছিলেন বিরোধী কাউন্সিলররা। পুরসভায় কংগ্রেসের দলনেতা কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মানুষের রায়কে সম্মান জানিয়ে আমরা দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করব।” প্রণব বসুও বলছেন, “আমি সকলকে নিয়ে কাজ করতে চাই। আশা করব, আগামী দিনেও বিরোধীদের সহযোগিতা পাব।”
সোমবার সকাল থেকে পুরসভায় ছিল সাজ সাজ রব। পুরভবনের ঠিক উল্টোদিকে মঞ্চ বেঁধেছিল তৃণমূল। সেখানে দলীয় কাউন্সিলরদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে দশটার কিছু পরে শহরের ফেডারেশন হলের সামনে থেকে তৃণমূলের মিছিল শুরু হয়। নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মৃগেন মাইতি, জেলা সভাপতি দীনেন রায়, জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ প্রমুখ। এলআইসি মোড়, কলেজ মোড় ঘুরে এগারোটা নাগাদ মিছিল পৌঁছয় পুরসভার সামনে। কংগ্রেস কাউন্সিলররাও মিছিল করে পুরসভায় আসেন। সাড়ে এগারোটায় শপথগ্রহণ শুরু হয়। তৃণমূলের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দিনের সভাপতি হন শ্যামল ভকত। সভাপতি হিসেবে শ্যামলবাবুর নাম প্রস্তাব করেন অনিলচন্দ্র দলবেরা। সমর্থন করেন মৌ রায়। পুরপ্রধান হিসেবে প্রণব বসুর নাম প্রস্তাব করেন জিতেন্দ্রনাথ দাস। সমর্থন করেন শিপ্রা মণ্ডল। পুরপ্রধানকে শপথবাক্য পাঠ করান মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত। |
মিছিল করে পুরসভায় গেলেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
পুরপ্রধান নির্বাচনের পরে পুরসভার বাইরে শুরু হয় তৃণমূলের সংবর্ধনা। একে একে ১৩ জন কাউন্সিলরের হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দেওয়া হয়। ঠিক ছিল, পুরসভার সামনে সভাও হবে। সেখানে থাকবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ মুকুল রায়। তবে, মুকুলবাবু এই মঞ্চে আসেননি। তিনি চলে যান ফেডারেশন হলে। সেখানেই দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে পরিচয় সারেন। সকলকে ভাল ভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।
গত পুরবোর্ডেও চেয়ারম্যান ছিলেন প্রণব বসু। তবে সে বার বোর্ড ছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের। এ বার তৃণমূল একাই ক্ষমতায় এসেছে। পুরসভার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে শহরবাসীর দৈনন্দিন চাহিদা, রোজকার পরিষেবা। দিন বদলেছে। নাগরিক জীবনে সমস্যাও বেড়েছে। শহরবাসী চাইছেন, নতুন পুরবোর্ড আরও গতিশীল হোক। মেদিনীপুর শহরকে আরও আধুনিক করে গড়ে তুলুক।
২০০৮ সালের পুরভোটের আগে ইস্তেহার প্রকাশ করেছিল তৃণমূল। তাতে জানানো হয়েছিল, ক্ষমতায় এলে কী কী করা হবে। এ বার কোনও ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়নি। তবে কাজ বাকি রয়েছে অনেক। পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর শহর মেদিনীপুরে পানীয় জলের সমস্যা বহু দিনের। গ্রীষ্মে সঙ্কট তীব্র আকার নেয়। জলকষ্ট দূর করতে ১৯৮৬ সালে শহরে মাস্টার প্ল্যান চালুর তোড়জোর শুরু হয়। মাস্টার প্ল্যানের কাজ হওয়ার কথা তিনটি পর্যায়ে। এখনও পর্যন্ত একটি পর্যায়ের কাজই শেষ হয়েছে। নিকাশি সমস্যাও রয়েছে। প্রধান নিকাশি মহানালা দ্বারিবাঁধ খাল সাফাই করা হয় না। বেশ কয়েকটি নালার মুখ আবার প্লাস্টিকে বন্ধ। ঠিক হয়েছিল, নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে আবাস থেকে নতুন একটি মহানালা তৈরি করা হবে। আবর্জনার সমস্যা মেটাতে ধর্মার পাশাপাশি কেরানিচটিতেও ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু এ সব পরিকল্পনা বাস্তবের মুখ দেখেনি।
আগের প্রতিশ্রুতিগুলো কি এ বার অগ্রাধিকার পাবে? পুরপ্রধান প্রণববাবুর বক্তব্য, “সব পেরেছি বলব না। তবে, গত পাঁচ বছর শহরের সার্বিক উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। আগামী দিনেও সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
|
যে কাজ এখনও বাকি |
• পানীয় জলের মাস্টার প্ল্যানে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। আরও দু’টি পর্যায়ের কাজ বাকি।
• শহরের প্রধান নিকাশি নালা দ্বারিবাঁধ খাল নিয়মিত সাফাই হয় না। অনেক নালার মুখ প্লাস্টিক জমে বন্ধ। কথামতো নতুন মহানালাও তৈরি হয়নি।
• সিদ্ধান্ত হলেও কেরানিচটিতে নতুন ডাম্পিং গ্রাউন্ড হয়নি।
• পুরপ্রধান নিজেও মানছেন, সব কাজ হয়নি। |
|
পুরনো খবর: পুরপ্রধান পদে প্রণবেই আস্থা |
|
|
|
|
|