|
|
|
|
অভিজ্ঞতার জোরে বাকিদের টেক্কা
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
শেষ হাসি হাসলেন প্রণব বসুই। দ্বিতীয়বারের জন্য মেদিনীপুরের পুরপ্রধান নির্বাচিত হলেন তিনি। সোমবার পুরপ্রধান পদে শপথ নিলেন তিনি। দ্বিতীয়বারের জন্য মেদিনীপুরের পুরপ্রধান হওয়াটা কিন্তু খুব একটা সহজ ছিল না। তৃণমূলের অন্দরের খবর, এই পথে অনেক কাঁটা ছিল। পুরপ্রধানের দৌড়ে অনেকেই ছিলেন। তবে সকলকে পিছনে ফেলে শেষ হাসি হাসলেন প্রণববাবুই। ফের পুরপ্রধান পদে বসে প্রণববাবু বলেন, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞ। আরও উন্নত পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে পুরবোর্ড কাজ করবে। আমরা শহরকে আরও সুন্দর ভাবে সাজাব।”
প্রণববাবু আগে কংগ্রেসে ছিলেন। ২০০৮ সালের গোড়ায় তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। বেশ কিছু দিন তৃণমূলের জেলা সভাপতিও ছিলেন। তিন বার পুরসভা নির্বাচনে জেতা। তার মধ্যে দু’বার পুরপ্রধান। সব মিলিয়ে জেলা রাজনীতিতে প্রণববাবুর উত্থান কিছুটা তড়িৎ-গতিতেই হচ্ছে।
কীসের নিরিখে বাকিদের হারালেন প্রণববাবু? রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অভিজ্ঞতার জোরেই অন্যদের টেক্কা দিয়েছেন তৃণমূলের এই কাউন্সিলর। প্রণববাবু প্রথম ভোটে দাঁড়ান ১৯৮৮ সালে। এই নিয়ে তিনবার পুর-নির্বাচনে জিতলেন। গত ২২ নভেম্বর মেদিনীপুরে পুরভোট হয়। ২৫ নভেম্বর ফল বেরোয়। ২৫টির মধ্যে ১৩টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় তৃণমূল। কিন্তু পুরপ্রধান বাছতে গিয়ে সামনে আসে গোষ্ঠী-কোন্দল। দুই সাংসদ মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের মধ্যে বিরোধ এই জেলায় বহু চর্চিত একট বিষয়। প্রণব বসু শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অন্য দিকে, তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি, জেলা সভাপতি দীনেন রায় মুকুল-অনুগামী। এ বার যাঁরা কাউন্সিলর হয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও মুকুল-অনুগামী বেশি। |
মুকুল রায়ের সঙ্গে পুরপ্রধান। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
আরও একটি বিষয় চর্চায় উঠে আসে। তৃণমূলের ১৩ জন কাউন্সিলরের মধ্যে মাত্র ৪ জনের পুর-প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। এঁদের মধ্যে প্রণববাবুই প্রবীণ। ২০০৮ থেকে ২০১৩, টানা পাঁচ বছর কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পরিচালিত পুরবোর্ডের পুরপ্রধান ছিলেন তিনি। মাঝে অনাস্থা এলেও ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করেন প্রণববাবু। ফলে, তিনি কিছুটা এগিয়েই ছিলেন। কিন্তু একটি বিষয়ে জল্পনা চলছিল। পুরভোটের রণকৌশল ঠিক করতে মেদিনীপুরে বৈঠক করেছিলেন মুকুল এবং শুভেন্দু। সেখানে পুরভোটের কাজকর্ম দেখভালের জন্য ৬ সদস্যের কমিটি গড়া হয়। ওই কমিটি বৈঠকেও বসে। দলীয় সূত্রে খবর, পুরভোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানোর জন্য বৈঠকে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। তাতে সম্মতি দেননি প্রণববাবু। প্রস্তাবপত্রে সইও করেননি। প্রশ্ন ওঠে, এরপরেও কি প্রণববাবুকে পুরপ্রধান করবে দল?
সব জল্পনায় জল পড়ে ২৯ নভেম্বর। ওই দিন কলকাতায় তৃণমূলের সভায় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে মেদিনীপুরের পুরপ্রধান হিসেবে প্রণববাবুর নাম ঘোষণা করেন। তৃণমূল এ বার একক ভাবে মেদিনীপুর পুরসভা দখল করলেও ফল খুব ভাল হয়নি। বোর্ড গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ১৩টি আসনই পেয়েছে তারা। তৃণমূলের একাংশ কর্মী মনে করছেন, বিরোধীরা যাতে বোর্ড গড়ার সুযোগ না পায়, সে জন্যই তৃণমূল নেত্রী প্রণববাবুকে ফের পুরপ্রধান করেছেন। না হলে গোষ্ঠী-কোন্দল সামনে আসত।
প্রণববাবুর সঙ্গে তৃণমূলের শহর সভাপতি সুকুমার পড়্যার মতবিরোধও কারও অজানা নয়। সোমবার এই দূরত্ব মেটানোর চেষ্টা করেন জেলা সভাপতি দীনেন রায়। পুরসভার সামনে মঞ্চ বেঁধে তখন তৃণমূল কাউন্সিলরদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। দীনেনবাবু ঘোষণা করেন, ‘‘এ বার প্রণব বসুকে সংবর্ধিত করবেন দলের শহর সভাপতি সুকুমার পড়্যা।’’ প্রণববাবুর হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দেন শহর সভাপতি। |
|
|
|
|
|