অবশেষে সূত্র হিসেবে মিলেছে দু’টি বাঁধানো নকল দাঁত।
আর এই দাঁত দেখেই হাওড়ার বেলগাছিয়া রথতলা এলাকার বাড়িতে থাকা নরকঙ্কালটি কার, সে বিষয়ে আপাতত একটা ধারণা পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সোমবার বিকেলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা এসে ওই দাঁত দুটি উদ্ধার করেন। এর পরেই তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, ওই কঙ্কালটি বাড়ির মালিক তড়িৎ চট্টোপাধ্যায়ের। কেননা, তাঁর মেয়ে নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর বাবার সামনের দুটি দাঁত নকল ছিল।
তবে কঙ্কালটি যে তড়িৎবাবুরই, সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে কঙ্কালটির ডিএনএ টেস্ট-এর পাশাপাশি ওই ব্যক্তির মোবাইলের কল লিস্ট পরীক্ষা করে দেখবে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, তড়িৎবাবু যে মোবাইল ব্যবহার করতেন তা খুঁজে পাওয়া না গেলেও তিনি যে নম্বরটি ব্যবহার করতেন, তার কল লিস্ট জোগাড় করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। সেই লিস্ট থেকেই জানা যাবে শেষ কবে কাকে কোন সময় ফোন করা হয়েছিল।
এ দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ শিপ্রা রায়ের নেতৃত্বে চার জনের একটি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের দল রথতলার নটবর পাল রোডে তড়িৎবাবুর ওই বাড়িতে আসেন। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে তাঁরা তদন্ত চালান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দোতলার যে ঘরে কঙ্কালটি রয়েছে সেখান থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দাঁত ছাড়াও বন্ধ ফ্রিজ থেকে ইনসুলিনের দু’টি অ্যাম্পুল পাওয়া গিয়েছে। দেখা গিয়েছে, ওই ওষুধগুলি ২০০৪ সালের। এ ছাড়াও কঙ্কালের পাশ থেকে একটি স্টিলের গ্লাস ও ঘরের মেঝে থেকে দুটি ভিটামিন ওষুধের শিশিও পেয়েছেন ফরেন্সিক দল। |
পুলিশ সূত্রের জানা গিয়েছে, তড়িৎবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ওই দলটি সোজা চলে যায় ব্যাঁটরা থানায়। সেখানে তড়িৎবাবুর মেয়ে মুনমুন ও তাঁর এক আত্মীয়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তখনই জানা যায়, তড়িৎবাবু ব্লাড সুগারের রোগী ছিলেন বলে ইনসুলিন নিতেন। দুটি নকল দাঁতও ব্যবহার করতেন। এর পরেই কঙ্কালটি তড়িৎবাবুর বলেই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ও পুলিশ এক প্রকার নিশ্চিত হন। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ডিএনএ পরীক্ষা এবং মোবাইল নম্বরের কল লিস্ট দেখেই শেষ কথাটা বলা যাবে।”
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ২০০৬ সালে রামপুরহাটে মেয়ে এবং স্ত্রী সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তড়িৎবাবু। কিন্তু পাওনাদারদের ভয়ে সেখানেও তিনি থাকেননি। আবার ওই বছরে তাঁর মা মারা যাওয়ার পরে হাওড়ার ওই বাড়িতে তড়িৎবাবু একবার এসেছিলেন। কিন্তু এর পরে আর কবে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন তা কেউই জানাতে পারছেন না।
তদন্তকারীরা মনে করছেন ওই বছরই কোনও এক সময় সকলের অজ্ঞাতে বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন তড়িৎবাবু। এর পর আর কোনও দিন বাড়ি থেকে বার হননি।
তদন্তে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে অর্থাৎ ২০০৮ সাল নাগাদ ওই বাড়ি থেকে পচা গন্ধ বের হত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়েরা। যদি ধরে নেওয়া হয় ২০০৬ সালেই তড়িতবাবু বাড়িতে ঢুকে আত্মগোপন করে ছিলেন। হতে পারে, টানা দুই বছর এ ভাবে থাকার পরে ২০০৮ সালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এ দিন ঘরের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হলেও কঙ্কালের কোনও রকম নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। শিপ্রাদেবী বলেন, “আমরা কিছু নমুনা পেয়েছি। তবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ফরেন্সিক মেডিসিনের দল আসবে।” এ দিকে এ দিন ওই বাড়িতে ফরেন্সিক দল আসার খবর চাউর হতেই ভিড় জমান এলাকার কৌতুহলী লোকজন। আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারাও।
তদন্ত চালানোর পরে সবাই ফিরে গেলেও নটবর পাল লেনের দোতলা বাড়ির ঘরটিতে এখনও মাথার তলায় হাত দিয়ে ‘তিনি’ শুয়ে রয়েছেন!
|