মোমের আলোয় কে ওই ছায়ামূর্তি, রহস্য জটিল কঙ্কাল-কাণ্ডে
ত্যিই কি টানা দশ বছর ধরে বন্ধ ছিল বাড়িটি?
এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে হাওড়ার বেলগাছিয়া রথতলা এলাকার বাসিন্দাদের মনে। ওই এলাকারই একটি বাড়ির দরজা খোলার পরে শোয়ার ঘরের বিছানায় নরকঙ্কাল পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল শুক্রবার। প্রায় দশ বছর পরে এক আত্মীয়ের সঙ্গে ওই বাড়িতে ঢুকে কঙ্কালটি দেখতে পেয়েছিলেন বাড়ির একমাত্র মেয়ে মুনমুন চট্টোপাধ্যায়। ওই খবর জানার পরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ঘটনার তদন্তে নামেন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। খবর দেওয়া হয়েছিল ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের।
ঘটনার দিন ওই পাড়া ও পরিবারের লোকজন দাবি করেছিলেন, গত ১০ বছর ধরে বন্ধ ছিল বাড়িটি। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, এলাকার বাসিন্দারা বছর তিন-চার আগেও বেশি রাতে ওই বন্ধ বাড়ির জানলার শার্সি দিয়ে ঘরের মধ্যে মোমবাতির আলো জ্বলতে দেখেছেন।
তড়িৎবাবুর বাড়িতে পুলিশ-প্রহরা। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ কেউ ঘরের মধ্যে ছায়ার্মূতিকে নড়াচড়া করতেও দেখেছেন। কিন্তু কেউই বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে মাথা ঘামাননি। কারণ এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, তাঁরা জানতেন পাওনাদারের ভয়ে বাড়ির মালিক তড়িৎ চট্টোপাধ্যায় বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন বছর দশেক আগেই। তার পরে তাঁর স্ত্রী-কন্যাও বাড়ি ছেড়ে চলে যান তড়িৎবাবুর শ্বশুরবাড়ি রামপুরহাটে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, বাসিন্দারা ভেবেছিলেন, পাওনাদারদের ভয়ে তড়িৎবাবুই হয়তো মাঝেমধ্যে বেশি রাতে গোপনে বাড়িতে আসতেন। কাউকে বুঝতে না দিয়ে চলেও যেতেন। তাই তাঁরা কেউ তাঁকে দেখতে পেতেন না।
পুলিশের এই বক্তব্যের সমর্থন মিলেছে শনিবার স্থানীয় বাসিন্দাদের কথাতেও। এ দিন নটবর পাল রোডের ওই বাড়ির উল্টো দিকে একটি পুরনো চায়ের দোকানের মালিক বিনয় হাজরা বলেন, “অনেকেই দেখেছেন ওই ঘরে মোমবাতির আলো জ্বলতে, ছায়ামূর্তিকে নড়াচড়া করতে। এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতেন না। পরে শুনতাম তড়িৎদা এসেছিলেন। কিন্তু আমরা কেউই তাঁকে দেখিনি।”
তড়িৎবাবুর প্রতিবেশী, এলাকার পুরনো বাসিন্দা সুধীরকুমার বসু বলেন, “টাকা না দেওয়ায় বহু বছর আগে তড়িৎবাবুদের বৈদ্যুতিক সংযোগ কেটে দিয়েছিল রাজ্য বিদুৎ পর্ষদ। তবে বছর তিন-চার আগেও ওই ঘরে হাল্কা আলো জ্বলার খবর শুনেছি।”
তদন্তে নেমে পুলিশ আরও একটি বিষয় নিয়ে দোটানায় পড়েছে। তা হল, ওই ঘর থেকে পাওয়া একটি ঠান্ডা পানীয়ের বোতল। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঘরে একটি জলের বোতলের পাশাপাশি কঙ্কালের মাথার কাছে একটা ঠান্ডা পানীয়ের বোতলও পাওয়া যায়। জলের বোতলটিতে লেগে থাকা ঝুল ও নোংরা দেখে বোঝাই যাচ্ছে, সেটি দীর্ঘ দিনের পুরনো। কিন্তু ঠান্ডা পানীয়ের বোতলটি সেই তুলনায় অনেক পরিষ্কার ও নতুন। দেখেই মনে হয়, বেশি পুরনো নয়। প্রশ্ন হল, কে আনল ওই বোতল? পুলিশ এখন এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে। যদিও তাদের ধারণা, ফরেন্সিক পরীক্ষার আগে এর উত্তর মিলবে না।
এ দিকে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবারও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা তদন্তে আসেননি। রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় সোমবারের আগে তাঁরা আসবেন না বলে সিটি পুলিশের ধারণা। তবে ওই বাড়ির সামনে পুলিশি-প্রহরা রাখা হয়েছে। তদন্তে সুবিধার জন্য অবিকৃত রাখা হয়েছে কঙ্কাল ও ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্র।
এ দিকে, তড়িৎ চট্টোপাধ্যায় নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরেই মুনমুন ওরফে প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর মা শেলি চট্টোপাধ্যায় যে বীরভূমের রামপুরহাটে থাকতে শুরু করেন, এ দিন তা জানান শেলিদেবীর ছোট ভাই অনিমেষ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “জামাইবাবু নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে দিদি কোথাও তাঁর সন্ধান না পেয়ে ভাগ্নিকে নিয়ে চলে আসেন। তার পর মাঝেমধ্যে তাঁরা হাওড়ায় জামাইবাবুর খোঁজ করতে যেতেন। কিন্তু সন্ধান না পেয়ে আবার রামপুরহাটে ফিরে আসতেন। বৃহস্পতিবার দিদি ও ভাগ্নি কলকাতায় এক ভগ্নীপতির বাড়িতে যান। শুক্রবার সেখান থেকে তাঁরা হাওড়ার ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন।”
পড়শিরা জানান, ওই তিন জন অবশ্য পাড়ায় কারও সঙ্গে খুব বেশি মিশতেন না। মুনমুন কয়েক বছর আগে রামপুরহাটের একটি বেসরকারি স্কুলে ক্যাশিয়ারের কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি গৃহশিক্ষকতা করেন।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.