|
|
|
|
বেরিয়েই বললেন, মোদী ভাগাও
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি
১৬ ডিসেম্বর |
এখনও শেষ হয়ে যাননি জামিনে জেল থেকে বেরিয়েই স্বভাবসিদ্ধ আত্মবিশ্বাসে ঘোষণা করে দিলেন আরজেডি প্রধান। আগে বলতেন সামোসায় যত দিন আলু, বিহারে লালুর রমরমাও তত দিন। এ বার আর সামোসার ভরসায় থাকেননি। সরাসরি ঘোষণা করলেন, “যব তক রহেগা আলু, তব তক রহেগা লালু।” মানে আলু থাকবে যত দিন, লালু থাকবে তত দিন।
বাড়তি এই প্রত্যয়টাই তো দেখতে চাইছিলেন জেলের বাইরে জড়ো হওয়া আরজেডি সমর্থক ও গুণমুগ্ধরা। হর্ষধ্বনি আর হাততালির উচ্ছ্বাস থামিয়ে এ বার লালু ঘোষণা করলেন তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি, “বিজেপি হঠাও, মোদী ভাগাও, দেশ বাঁচাও।” কুস্তির আখড়ার পালোয়ানি ঢঙে এ-ও বললেন, “ল্যাঙট (অন্তর্বাস) পরে ময়দানে নেমেছি। মোদী তাড়িয়ে ছাড়ব।”
বিহারে তাঁর বা রাবড়ীদেবীর রাজ গিয়েছে অনেক দিন হল। তবু এক সময় লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথ থামিয়ে দেওয়া নেতাকে আগের চেহারায় দেখে স্বাভাবিক ভাবেই সমর্থকরা খুশি। বিশেষ করে রাজ্যের ক্ষমতা থেকে বিজেপি ছিটকে যাওয়ার পরে আর কয়েক মাসের মধ্যেই যেখানে লোকসভা নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চলেছে দল। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের জামিন পেয়ে আজ বিরসা মুন্ডা জেল থেকে বেরিয়ে এসেই লালুপ্রসাদ বুঝিয়ে দিলেন, আপাতত নীতীশকুমার নন, বিজেপি ও তাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রাথী নরেন্দ্র মোদীই তাঁর নিশানা। |
জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর রাঁচির দেউরি মন্দিরে পুজো লালুপ্রসাদের।
পাশে ছেলে তেজস্বী। সোমবার প্রশান্ত মিত্রের তোলা ছবি। |
বিরসা মুন্ডা জেলের দোরে তৈরিই ছিল গাড়ি। হাল্কা নীল পাঞ্জাবির উপরে নীল সোয়েটার আর সাদা পাজামা, সে দিকে না গিয়ে এগিয়ে এলেন দূরে দাঁড়ানো সাংবাদিকদের দিকে। এই দফায় জেলে ঢোকার দিন কেমন যেন মিইয়ে গিয়েছিলেন। আজ কিন্তু ছেলে তেজস্বীর পাশে দাঁড়িয়ে আপন তেজে নিজেকে যথাসম্ভব উজ্জ্বলই দেখানোর চেষ্টা করেন লালু। দৃশ্যতই অনেক আত্মবিশ্বাসী। আর মুখ খুলতেই বোঝা গেল, বিহারে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে নিশানা স্থির করে নিয়েছেন তিনি। গাড়িতে ওঠার আগে বললেন, “এই মুহূর্তে দেশকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত থেকে বাঁচানোটাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। সাতচল্লিশ সালের পর এ বার, ২০১৪। ফের দেশকে সাম্প্রদায়িকতার নামে ভাগ করার চেষ্টা চলছে। এর জন্য আমি যা করার করব। যেখানে যাওয়ার যাব। সব দলের সঙ্গে কথা বলব। যে বলিদান দিতে হয় দেব।”
তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ইত্যাদি নানা অভিযোগ। কিন্তু লালুর গায়ে তাঁর অতি বড় শত্রুও ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা সাঁটতে পারেনি। যে কারণে বিহারে গত নির্বাচনেও ১৪.৪ শতাংশ যাদব ভোটের পাশাপাশি ১৪.৭ শতাংশ মুসলিম ভোটের সিংহভাগ নিজের পক্ষে ধরে রাখতে পেরেছিলেন তিনি। সেই ভোট ব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে মরিয়া তাঁর একদা ‘সহকর্মী’ নীতীশ কুমার। কিন্তু নীতীশকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর ঘোষিত শত্রু, বিজেপি-মোদী। অঘোষিত লক্ষ্য, মুসলিম ভোটকে নিজের দিকে ধরে রাখা। তাঁর বিহারি ভোট ব্যাঙ্কের উদ্দেশে লালুর বার্তা, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে এককাট্টা করতে হবে।”
আর নীতীশ? জবাব এল লালু-সুলভ উপেক্ষায়, “বিজেপি-র সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছিল। অব্ ডাইভোর্স হো গ্যয়া।” কিন্তু বিয়ে তো হয়েছিল। অর্থাৎ বিজেপি-কে ছেড়ে এলেও নীতীশের গায়ে এখনও বিজেপি-র গন্ধ-স্পর্শ। সেই ভাঙা সম্পর্কই এ ক্ষেত্রে লালুর অন্যতম হাতিয়ার।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত শুক্রবারই তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছিল। আইনি প্রক্রিয়ার শেষে আজ জেল থেকে বেরিয়ে লালু গেলেন ৪০ কিলোমিটার দূরের দেউড়ি মন্দিরে। পুজো দিলেন। নারকেল ফাটালেন। বেরিয়ে এসে হনহন করে চলে এলেন দলীয় মঞ্চে। তামাড় বিধানসভা আসনের মধ্যেই এই দেউড়ি মন্দির। আর এই তামাড়ের বিধায়ক সঞ্জয় যাদবও আরজেডি-র। তাঁর উদ্যোগেই জেল ফেরত লালুর প্রথম জনসভা।
কারাগারে জন্ম কৃষ্ণের। সেই পৌরাণিক উপমা আগেও বারবার টেনেছেন লালু। এ বারও সেই ঢাল ব্যবহার করে তিনি বোঝাতে চাইলেন, জেল, সাজা এ সব কিছুই নয়। “কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল জেলের ভিতরে। সিবিআই আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে। তা সত্ত্বেও দেশের আইনি ব্যবস্থার উপরে আমার ভরসা রয়েছে। আর ভরসা রয়েছে দলের সমর্থক ও আম-জনতার উপর।”
তবে লালুর জামিনে আরজেডি কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না নীতীশ। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, এটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ, রাজনৈতিক ঘটনা নয়। তা-ই এ নিয়ে আনন্দ-উৎসব করা যুক্তিহীন। পটনায় নীতীশ এ দিন বলেন, “তিনি (লালু) কোথা থেকে আসছেন? জেল থেকে। এটি একটি আইনি সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক নয়, তা হলে এত মাতামাতি হচ্ছে কেন? তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ রয়েছে, আদালত তা দেখছে।”
লালুর প্রত্যাবর্তন বিহারে রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে? নীতীশের জবাব, “২০১০ সালের ভোটে জনতা আমার কাঁধে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা মনপ্রাণ দিয়ে পালন করার চেষ্টা করছি। রাজনৈতিক বিরোধীরা কে কী বলছেন, তা নিয়ে চিন্তা করার সময়ই নেই আমার।” |
পুরনো খবর: জামিন পেলেও লালু এখনও জেলেই |
|
|
|
|
|