সমকামী রায় পুনর্বিবেচনা বা আইন বদলের দাওয়াই
মকামিতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে সারা দেশে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে তা সামাল দিতে এখন কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে দু’টি পথ খোলা আছে বলে মনে করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ইন্দিরা জয়সিংহ। তাঁর মতে, সংসদে বিল এনে আইন সংশোধনের পদক্ষেপ করা যেতে পারে। কিংবা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে আবেদন করতে পারে। এর পাশাপাশি সমকামীরাও রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারেন বলে জানিয়েছেন ইন্দিরা।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরপরই ইন্দিরা জানিয়েছিলেন, সাংবিধানিক মূল্যবোধকে প্রসারিত করার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক সুযোগ নষ্ট হল। শুধু তা-ই নয়, সমকামিতার জন্য জরিমানার ব্যবস্থাটা মধ্যযুগীয় মানসিকতার পরিচয়। সোমবার কলকাতায় তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কী করা উচিত, সে ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল পরামর্শ দিচ্ছেন।”
সুপ্রিম কোর্টে সমকামীদের হয়ে মামলাটি নড়েছিলেন যিনি, সেই আইনজীবী আনন্দ গ্রোভার-ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ দিনের ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন। আনন্দ বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় পুনর্বিবেচনা ও আইন পরিবর্তনের জন্য এখন জনমত গঠন করা সব চেয়ে বেশি জরুরি।”

এলজিবিটি-র প্রতিবাদ হাজরা মোড়ে। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী।
ওই অনুষ্ঠানে অতিথি এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়া হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মাইকেল কার্বি। তিনি অবশ্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারাটিই অবিলম্বে তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী।
কার্বির বক্তব্য, “ওই ধারাটি ঔপনিবেশিক বোঝা ছাড়া আর কিছুই বহন করছে না। ইংরেজ ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার এত বছর পরেও সেই বোঝা রয়ে গিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আইনটি সেকেলে এবং তা বাতিল হওয়ারই কথা।” কার্বি নিজে এক জন সমকামী এবং সে কথা তিনি ১৯৯৯ সালে প্রকাশ্যে আনেন। তখন তিনি খোলাখুলি জানান, জোহান ফন ভ্লোটেন নামে এক ব্যক্তি ১৯৬৯ সাল থেকে তাঁর সঙ্গী। সমকামীদের অধিকারের বিষয়ে কার্বি দীর্ঘ দিন ধরে টানা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন কার্বি।
চুয়াত্তর বছরের কার্বি এ দিন কলকাতা বিশ্বদ্যালয়ে ‘টেগোর ল লেকচার’ দেন। বক্তৃতার বিষয় ছিল---‘সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন অ্যান্ড আইডেন্টিটি: আ নিউ প্রভিন্স অব ল ফর ইন্ডিয়া’। বক্তৃতায় কার্বি বলেন, “আমি আমার এই বক্তৃতার বিষয় কয়েক মাস আগেই বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি এখন অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক।” কী সেই ঘটনাগুলি? কার্বি জানান, সমকামীদের অধিকার নিয়ে বরাবর সমর্থন জানিয়ে গিয়েছেন যিনি, সেই নেলসন ম্যান্ডেলা গত ৫ ডিসেম্বর মারা গিয়েছেন। ১১ ডিসেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারাকে অসাংবিধানিক নয় বলে জানিয়ে সমকামিতাকে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করেছে। তার পর দিন, ১২ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার হাইকোর্ট সমকামী বিয়েকে বেআইনি বলে রায় দিয়েছে।
বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কার্বি বলেন, “সংসদ যদি ঠিক ভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে, সে ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। কিন্তু ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারা সংশোধন বা বাতিল করে সমকামিতাকে বৈধতা দেওয়ার ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় সংসদ তার দায়িত্ব পালন করেনি।” কার্বির মতে, “ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সমকামিতাকে অপরাধ বলে রায় দিয়েছে। কিন্তু বিষয়টির বিচার সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে হলে ভাল হত।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.