মহিলা চুপ, তাই অনড় অশোক: এএসজি
যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন যিনি, সেই মহিলা আইনজীবী এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে তেমন সরব নন। আর তাঁর এই নীরবতার কারণেই অভিযুক্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান-পদে ইস্তফা না-দেওয়ার ব্যাপারে একগুঁয়ে মনোভাব দেখাচ্ছেন বলে মনে করেন দেশের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ইন্দিরা জয়সিংহ।
অশোকবাবুর শহর কলকাতায় এসে ইন্দিরাদেবী রবিবার বলেন, “মেয়েটি প্রচণ্ড সংযম দেখিয়েছে। গোড়া থেকেই সে দ্বিধায় ছিল। ব্লগে লিখেছিল, তাকে যৌন হেনস্থা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। কিন্তু
ইন্দিরা জয়সিংহ।
—নিজস্ব চিত্র।
তাঁর নাম উল্লেখ করেনি সে।” ৭৩ বছরের আইনজীবী ইন্দিরাদেবীর কথায়, “মেয়েটির নীরবতাই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে আরও সাহসী করে তুলেছে। তাই তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে গোঁ ধরে বসে আছেন।”
এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হলে অশোকবাবু বলেন, “উনি (ইন্দিরাদেবী) এ-সব কথা বলতেই পারেন। প্রত্যেকেরই বাক্স্বাধীনতা রয়েছে।” ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অশোকবাবুকে সরানোর জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে অনুরোধ করেন ইন্দিরাদেবী। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টকে জানাতে প্রধানমন্ত্রী যাতে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেন, সে-কথাই চিঠিতে লিখেছেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল। এখনও পর্যন্ত সেই চিঠির উত্তর আসেনি।
২০০৯ সালে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল বা এএসজি হন ইন্দিরাদেবী। এক সময় তিনি রূপান দেওল বাজাজের মামলা লড়েছিলেন। মহিলা আইএএস অফিসার রূপানের অভিযোগ ছিল, আইপিএস অফিসার ও পঞ্জাব পুলিশের তৎকালীন ডিজি কেপিএস গিল মদ্যপ অবস্থায় একটি পার্টিতে তাঁর শ্লীলতাহানি করেছেন। আশির দশকের শেষে ওই অভিযোগ ঘিরে দেশ জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। পরে দোষী সাব্যস্ত হন গিল।
এ দিন কলকাতা প্রেস ক্লাবে ইন্দিরাদেবী বলেন, “নৈতিকতার কথা মাথায় রেখেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পদত্যাগ করা উচিত ছিল। যাতে মানবাধিকার কমিশন কালিমালিপ্ত না-হয়। কিন্তু তিনি তা করেননি।” তাঁর বক্তব্য, দু’মুখো নীতি নেওয়ার মানে কী? আইন রূপায়ণের দায়িত্ব যাঁর, তাঁর বিরুদ্ধেই যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠলে মানুষ তো মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের উপরেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন। তাই অশোকবাবুকে সরাতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত বলে মনে করেন ইন্দিরাদেবী।
সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির কমিটি তদন্ত করে ৫ ডিসেম্বর জানায়, অশোকবাবু গত বছরের ডিসেম্বরে দিল্লির একটি পাঁচতারা হোটেলে তাঁর ইন্টার্ন হিসেবে কর্মরত এক তরুণীর সঙ্গে ‘অবাঞ্ছিত আচরণ’ করেন। তার পরে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক বিভিন্ন শিবির থেকে অশোকবাবুর পদত্যাগের জোরালো দাবি উঠেছে। শুক্রবার লোকসভায় এই দাবিতে সরব হয় তৃণমূল ও বিজেপি। কিন্তু অশোকবাবু জানান, পদত্যাগ করছেন না। তিনি শেষ দেখে ছাড়বেন।
লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার ও আইনজীবী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো যাঁরা অশোকবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদেরও সমালোচনা করেন ইন্দিরাদেবী। তাঁর কথায়, “এখনও অনেক কিছু বেরোতে পারে। এই সময়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে কেউ সমর্থন করলে সেটা মোটেই যুক্তিযুক্ত হবে না। এটা তদন্তে হস্তক্ষেপেরই সামিল।” গত মঙ্গলবার, মানবাধিকার দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সোমনাথবাবু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের তদন্তের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর মতে, সুপ্রিম কোর্ট অতি-উৎসাহ দেখিয়েছে।
ইন্দিরাদেবী অবশ্য মনে করেন, সুপ্রিম কোর্ট যথার্থ পদক্ষেপ করেছে। বিশাখা নির্দেশিকা অনুযায়ী কর্মস্থলে এমন অভিযোগ এলে প্রথমে দরকার অভ্যন্তরীণ তদন্ত। সেটাই করেছে শীর্ষ আদালত। তিন বিচারপতিকে নিয়ে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি গড়ে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। কারণ, অন্য কোনও সংস্থা ওই অবস্থায় তদন্ত করতে পারত না। “এর পরেও যদি কেউ সুপ্রিম কোর্টের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, সেটা সর্বোচ্চ আদালত সম্পর্কে ভুল বলা হবে,” বলেন ইন্দিরাদেবী।
এই ব্যাপারে সোমনাথবাবু বলেন, “আমি আমার মত দিয়েছি। ইন্দিরা জয়সিংহের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি না। উনি বিদুষী, অনেক পড়াশোনা করেছেন, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল হয়েছেন। আশা করি, উনি স্বীকার করবেন যে, আমার ব্যক্তিগত মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে।”
ইন্দিরাদেবী জানান, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মোবাইলে কথোপকথন, এসএমএস চালাচালির নথি সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছেন অভিযোগকারিণী। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর তিনি হোটেলে অশোকবাবুর সঙ্গে দেখা করতে যান এবং ঘটনাটি ঘটে রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে। কিন্তু ওই মহিলা প্রায় এক বছর পরে অভিযোগ জানালেন কেন?
ইন্দিরাদেবী বলেন, “জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই প্রাক্তন ছাত্রী ঘটনার পরেই তাঁর এক শিক্ষক এবং কিছু বন্ধুকে সব জানান। তাঁদের এক জন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে ফোনও করেছিলেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.