ইস্টবেঙ্গলের প্রাক-শতবর্ষ অনুষ্ঠানের মঞ্চে নিজেকে পুরোদস্তুর লাল-হলুদ সদস্য হিসেবে তুলে ধরতে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে অক্ষয়কুমার, সোনাক্ষী সিংহের। তাই ব্যস্ততার মাঝেও ব্যক্তিগত সচিবের কাছ থেকে চিডিদের পারফরম্যান্সের যাবতীয় খবর নাকি রাখছেন দু’জনে।
ঘরের মাঠে আই লিগে বেঙ্গালুরু এফসি ছিল অপরাজিত। পয়েন্ট টেবলে এখনও এক নম্বরে। সুনীল ছেত্রীদের সেই গরিমা রবিবার যে মোগা-চিডিরা মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন, সে খবর বলিউডের ‘খিলাড়ি’-ও হয়তো পেয়েছেন। হরমনজ্যোৎ খাবরার ‘কহানি’ শুনলে হয়তো আরও মোহিত হতে পারেন।
পেটের সংক্রমণ নিয়ে খেলেও এ দিনের ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক নব্বই মিনিটই পাঁচিল তুলেছিলেন রক্ষণের সামনে। ম্যাচ শেষে বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে কথা বলার সময়েও গলায় দায়বদ্ধতার সুর। “সতীর্থরা টেনশনে ছিল নামতে পারব কি না। কিন্তু আমি আজ মরে গেলেও মাঠ ছেড়ে উঠতাম না। চ্যাম্পিয়নশিপ দৌড়ে থাকতে এই ম্যাচ জিততেই হত। সেটা হয়েছে। শরীরে আর কষ্ট নেই।”
আর প্রথম গোলদাতা জেমস মোগা? চুপ করিয়ে দিলেন তাঁর সমালোচকদের। যাঁরা এত দিন সরব ছিলেন জাতীয় দল থেকে ক্লাব ম্যাচে তাঁর ফিরতে দেরি হওয়ায়। কিনিয়ান কার্তিস ওসানোকে বগলদাবা করে মোগা এ দিন যখন গোল করছেন, ক্লাব তাঁবুতে সদ্য স্থাপিত জাকুজিতে তখন রিহ্যাবে ব্যস্ত ভাসুম। শীর্ষ কর্তাদের চোখ টিভিতে। মোগার গোল দেখে সকলের মুখেই হাই-ভোল্টেজ হাসি। মহাসমারোহে প্রাক্-শতবর্ষ উদযাপন, ক্লাবের পরিকাঠামোয়ে অত্যাধুনিকতা আনা, টিমের সাফল্য প্রতিবেশী দুই প্রধান যখন ব্যর্থতা আর সমস্যায় জর্জরিত, তখন ইস্টবেঙ্গলের ‘সাফল্য-হ্যাটট্রিক’-এর রহস্য কী? অন্যতম শীর্ষ কর্তার জবাব, “কোয়ালিটিতে নো কম্প্রোমাইজ।” |
সুসময়
বেঙ্গালুরুতে লাল-হলুদের জয়ের দিন ক্লাবের নতুন জাকুজিতে ভাসুম। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
কর্তারা ‘কম্প্রোমাইজ’ না করলেও আর্মান্দো দলের স্বার্থে কিন্তু তা এ দিন করেছেন। সহকারী কোচ রঞ্জন এবং সিনিয়র ফুটবলারদের থেকে পরামর্শ নিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। যা পূর্বসূরি ব্রাজিলীয় কোচের আমলে ছিল না।
বেঙ্গালুরুর ব্রিটিশ কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড যে লেফট ব্যাক রিনো অ্যান্টো আর সুনীল ছেত্রীর অসাধারণ বোঝাপড়া কাজে লাগিয়ে তাঁর রক্ষণে নওবার দিক দিয়ে ঘনঘন ‘থার্ডম্যান’ মুভ করাবে, তা খেলা শুরুর দশ মিনিটেই বুঝেছিলেন আর্মান্দো। মোগার গোল হতেই ফেললেন নিজস্ব তাস। মাঝমাঠে দুই ফরোয়ার্ডের পিছনে সুয়োকা এবং ডান দিকে লোবো ক্রমাগত ‘সাফল’ করে চোখে সর্ষে ফুল দেখালেন মঞ্জুদের রক্ষণকে। দ্বিতীয়ার্ধে ডিকাকে তুলে তুলুঙ্গাকে নামিয়ে রিনো-সুনীল জোট ভেঙে দিতেই কেল্লা ফতে লাল-হলুদের। আর একক দক্ষতায় চিডির গোলের পর ম্যাচ একদম পকেটে।
এর পর এমনকী চাপে থাকা মোগারও ফোনে ঘোষণা, “আরও গোল করতে হবে। ইস্টবেঙ্গলকে আই লিগ দেওয়ার জন্যই তো এত ঘাম-রক্ত ঝরানো।” চিডির গলায় স্বস্তি, “গোলটা করে আত্মবিশ্বাস পেলাম। লিগ জয়ের ট্র্যাকেই আছি আমরা।” বলাই যায়। ইস্টবেঙ্গলের এখন ১১ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট। বাকি দলগুলোর চেয়ে তিন ম্যাচ কম খেলে।
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা, রাজু, গুরবিন্দর, সৌমিক, লোবো (সুবোধ), খাবরা, সুয়োকা, লালরিন্দিকা (তুলুঙ্গা), চিডি, মোগা (অর্ণব) |