ক্লাবহাউসের আপার টিয়ারে বহু বছর আগে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়া পলাশ নন্দীর কথাটা তখন বেশ আশ্চর্যই শোনাচ্ছিল। বিকেল সাড়ে তিনটে, দুই বঙ্গ ওপেনার ড্রেসিংরুম ছেড়েও বেরোননি। কিন্তু পলাশ ততক্ষণে টেনশনে, “খুব বাজে সময় নামছে। ইডেনের প্রথম ঘণ্টার মতো শেষটাও ব্যাটসম্যানের জন্য মারাত্মক।”
কে জানত, দশটা ওভার এবং রুদ্রপ্রতাপ সিংহ-র দু’টো স্বপ্নের ডেলিভারি এমন নাটকীয় ভাবে যুদ্ধের প্রথম দিনে ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দেবে বাংলাকে, মাত্র এক ঘণ্টায় এমন নির্ভুল ভাবে মিলিয়ে দেবে এক প্রাক্তন বাংলা অধিনায়কের ভবিষ্যদ্বাণী! এবং উত্তরপ্রদেশকে দু’শোয় শেষ করে দেওয়ার স্বস্তি নয়, শনিবার বিকেলে বাংলাকে ইডেন ছাড়তে হবে আশঙ্কা ও টেনশন নিয়ে।
কেন?
ময়দানের ‘প্রাচীর’ আর নেই। অরিন্দম দাস আউট। বাইশ গজের দু’দিকে এখন দু’জন জুনিয়র, পরে আরও দুই। কোন কোনও বাংলা নির্বাচকের কাছে যাঁরা ‘আননোন এলিমেন্ট’, কী করবেন নিশ্চয়তা নেই। তাই।
বাংলাকে যদি ছ’পয়েন্টের স্বপ্ন দেখতে হয়, তা হলে প্রথম ইনিংসে চাই অন্তত পঞ্চাশ রানের লিড। কিন্তু রবিবাসরীয় ইডেনের প্রথম ঘণ্টার পেসার-বন্ধু পরিবেশ যে আবার তাঁদের জন্য অপেক্ষা করবে! সবুজ উইকেটে যেখানে ওঁত পেতে থাকবেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম থেকে ব্রাত্য কোনও এক রুদ্রের প্রতাপ। তাই। |

বাউন্সে বেসামাল। চাওলা বনাম দিন্দা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
সিএবি-তে সন্ধের দিকে কোনও কোনও কর্তা আফসোস করছিলেন যে, অরিন্দম থাকলে বাংলা ব্যাকফুটে, বলা যেত না। ঠিক। কিন্তু তেমন এটাও ঠিক দু’বল খেলে ফিরে যাওয়ার পিছনে যত না অরিন্দম (০) নিজে দায়ী, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি টিম ম্যানেজমেন্ট। অর্ধেক ফিটনেসের ওপেনারকে নামানোর তো দরকার ছিল না। ফিল্ড করতে অসুবিধে হচ্ছে, আরপি-র সুইংয়ের সামনে পা নড়ল না, উইকেটটা চলে গেল। শোনা গেল, জোরাজুরিটা কোচ অশোক মলহোত্র-র ছিল। অভিমন্যু ঈশ্বরণের (১০) মিডল স্টাম্প আবার যে বলে শূন্যে ঘুরে মাটিতে আছড়ে পড়ল, সেটা দিনের সেরা, স্বপ্নের বল। অফে পড়ে অতখানি ঢুকে এলে, অভিমন্যু কেন, ক্রিকেটবিশ্বের অনেক প্রখ্যাতকেও মুশকিলে পড়তে হত। তবে যতটুকু সময় ছিলেন, উনিশ বছরের অভিমন্যুকে দেখে একবারও মনে হয়নি তাঁকে রঞ্জি অভিষেকের ‘চক্রব্যূহে’ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সাহসী। বলের পিছনে গিয়ে ছাড়তে পারেন। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটস ভাল। রঞ্জিতে যা দরকার। বাংলার ক্রিকেট কর্তারা বসিয়ে দেওয়া নয়, তাঁর ‘সংরক্ষণে’ বেশি ইচ্ছুক।
ঠিক যেমন এখন খুঁজে বার করা উচিত, একটা ‘সেশনে’ পিছিয়ে পড়ার বিশল্যকরণী। যা নির্দয় ভাবে ভোগাচ্ছে চলতি রঞ্জি মরসুমে, আজও ব্যতিক্রম নয়। যে টিমের বোলাররা টি ব্রেকের কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত দাঁড়াতেই দিচ্ছিলেন না উত্তরের ব্যাটিংকে, সেই একই টিমের বোলারদের পিটিয়ে নবম উইকেটে উঠল ষাট রান। ১৩৮-৮ থেকে উত্তরপ্রদেশ টানল কি না ২১২ পর্যন্ত!
অথচ একটা সময় কী বলটাই না করছিলেন বঙ্গ পেসাররা। প্রয়োজনের সময় পরের পর উইকেট তুলে অশোক দিন্দা বোঝালেন, কেন তিনি টিমের এক নম্বর পেসার। চার উইকেট সৌরভ সরকারকে শুধু রঞ্জিতে একশো উইকেটের রেকর্ডই দিল না, তাঁর সুইংয়ের ‘সৌরভ’ও ছড়াল সমানে। শিবশঙ্কর পালও বুঝিয়ে দিলেন, পুরনো চাল আজও ভাতে বাড়ে! একটা সময় পর্যন্ত সিমের ব্যবহার অসম্ভব ভাল করছিল বাংলার পেস-ব্রিগেড। ব্যাটসম্যান ছাড়বে ঠিক করে দেখেছে বল কাট করে স্টাম্প উড়িয়ে দিচ্ছে! সঙ্গে তেমন ফিল্ডিং। কিন্তু ওই একই বোলিং শেষে নির্বিচারে শর্ট করেছে, বাউন্ডারি হজম করেছে নির্বিবাদে। সবচেয়ে বড় কথা, ময়দানের টাউন ক্লাবে খেলে যাওয়া উত্তরের বোলার ইমতিয়াজ আহমেদ ঠিক সেই সময়টা বাংলা ব্যাটসম্যানদের থেকে কেড়ে নিলেন, যখন কি না ইডেনের যে কোনও পিচে ব্যাট করা ছিল অনেকটা সহজ।
অতঃকিম?
কী আর, আজ সামনে ব্যাটিংয়ের গুরুদায়িত্ব। যার আংশিক জুনিয়রদের উপর, অধিকাংশ ব্যাটিং লাইন আপে পড়ে থাকা একমাত্র সিনিয়রের। নামটা সহজলক্ষ্মীরতন শুক্ল।
তা তিনি মানতে চান বা না চান, যতই বলুন, “আমি কে?”
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
উত্তরপ্রদেশ ২১২ (প্রশান্ত ৫৩, ইমতিয়াজ ৩৬, মোর্তাজা ৩৩, সৌরভ ৪-৫১, দিন্দা ৩-৭৫, শিব ২-৫১)
বাংলা ২৬-২ (গীতিময় ১৬ ব্যাটিং, রুদ্রপ্রতাপ ২-১৬) |