আর্থার পাপাস কবে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরবেন কেউ জানে না। ডেম্পো গত এক মাস কোচহীন!
পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী ক্লাবে এখন একজন মাত্র বিদেশি— সাইমন কোলোসিমো। সেই তিনিও পুরোপুরি চোটমুক্ত নন!
বেটো, সমীর নায়েক, দেবব্রত রায়ের মতো সিনিয়র তথা তারকা ফুটবলাররা চোটের জন্য টিমের বাইরে। কার্ডের জন্য নেই পিটার কার্ভালহো।
গোল করার লোক জেজে গোলের মধ্যে নেই বহু দিন। ক্লিফোর্ড মিরান্ডাও ফর্মের ধারেকাছে নেই।
এ রকম ‘সুখাদ্য’ সামনে পেলে যে কোনও কোচের চোখ-মুখই জ্বলজ্বল করে। করিম বেঞ্চারিফারও করছে। “আমরা যে ধারাবাহিক সেটা প্রমাণ করার জন্য এই ম্যাচটা জিততে হবে। তিন পয়েন্টের জন্যই খেলব,” বলার পর চতুর মরক্কান কোচকে দেখে মনে হল মনোভাবটা এমন যে, খেলা শুরুর চব্বিশ ঘণ্টা আগেই ধরে নিয়েছেন এই ম্যাচে জিততে না পারলে আর কবে জিতব!
কোচ কথা বলে যাওয়ার পর বাগানের নতুন ‘আশার প্রদীপ’ চিজোবা ক্রিস্টোফারের মন্তব্যটা আরও আত্মবিশ্বাসের। “ওদের দলে মাত্র একজন বিদেশি এটা আমাদের সুবিধা। তবে গোল করতে হবে। গোল করার জন্যই তো আমাকে আনা হয়েছে। এই ম্যাচে তাই গোল করতেই হবে।”
‘গো ব্যাক’ শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া ওকোলি ওডাফা ইদানীং গোল মিসের মতো পালানোটাও ভাল অভ্যাস করে ফেলেছেন। কখনও হেলমেট মাথায় দিয়ে যুবভারতীর পিছনের দরজা দিয়ে পালাচ্ছেন তো কখনও মিডিয়ার সঙ্গে কোচ কথা বলার সময় দ্রুত গাড়িতে বসে উধাও হয়ে যাচ্ছেন বাগান অধিনায়ক। এ দিনও হলেন, তবে চিতাবাঘের মতো একটা চাহনি নিয়ে, চারদিকে তাকাতে তাকাতে। তিনিও কি ডেম্পোকেই উঠে দাঁড়াবার মঞ্চ করতে চাইছেন? মুখে কিছু না বললেও, অনুশীলনে ওডাফাকে কিন্তু বেশ চনমনে দেখাল।
|
রাম মালিক, প্রীতম কোটাল, সৌভিক ঘোষদের মতো তরুণদের সঙ্গে ওডাফা-কাতসুমিদের মিশিয়ে একটা উইনিং কম্বিনেশন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন মোহন-কোচ। ফলে ডেম্পো ম্যাচে দলে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। করিম অবশ্য এ দিন অনুশীলনে সেট পিস অনুশীলনের উপর জোর দিলেন। তিন ধরনের কর্নার-মুভ, ফ্রি কিক চলল প্রায় আধ ঘণ্টা।
বাগানে যখন ডেম্পো-বধের প্রস্তুতি চলছে তখন হাহাকার গোয়ার ক্লাবের অনুশীলনে। “আরে আমি তো এখন প্রতিবন্ধী। একগাদা ফুটবলারের চোট। কেউ নেই। লড়ার জন্য তো ন্যূনতম একটা অভিজ্ঞতা দরকার,” সহকারী কোচ মরিসিও আফান্সোর কথাগুলো আর্তনাদের মতো শোনায়। কিন্তু এই টিম নিয়েই তো র্যান্টি-এরিকদের ইউনাইটেডকে আটকে দিলেন দিন চারেক আগেই? “সেই চেষ্টাই আবার করছি। যদি এক পয়েন্ট পাই সেটাই বড় সাফল্য হবে আমাদের,” বলে দম নেওয়ার চেষ্টা করেন মরিসিও।
যুবভারতীর আজকের ম্যাচে তারকাদের ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠছে অবশ্য বঙ্গসন্তানদের লড়াই। দু’দল মিলিয়ে জনা আটেক বাংলার ছেলে খেলবেন। যাঁদের কারও বাড়ি মছলন্দপুর, কারও বজবজ, কারও বর্ধমান। ডেম্পোর বঙ্গ ব্রিগেডে জুয়েল রাজা, প্রবীর দাস, প্রণয় হালদার, নারায়ণ দাসরা যেমন রয়েছেন, তেমনই গঙ্গাপারের ক্লাবকে জেতাতে সন্দীপ নন্দী, প্রীতম কোটাল, রাম মালিক, সৌভিক ঘোষরা নামবেন সবুজ-মেরুন জার্সিতে।
লিগ টেবিলের যা অবস্থা, তাতে দু’দলেরই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বাগান শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে তা নিয়ে মন্তব্য না করলেও করিম এ দিন বলে দিলেন, “পয়েন্ট টেবিলের যা অবস্থা তাতে চ্যাম্পিয়ন কে হবে বলা কঠিন। আরও অনেক অঘটন ঘটবে।” কিন্তু মোহনবাগান লিগ টেবিলে কোথায় গিয়ে থামবে? “কোনও মন্তব্য করব না। তবে এটা বলছি, ফেড কাপের আগে ওডাফা শুদ্ধু আমার পুরো দল আরও তৈরি হয়ে যাবে।”
কথা শুনলেই বোঝা যায়, আই লিগ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে ধরেই নিয়েছেন করিম। হয়তো কর্তারাও। ডেম্পোর বিরুদ্ধে ম্যাচ অথচ আগের দিন মাঠে কোনও কর্তারই দেখা নেই। ফেডারেশনের নিয়ম মেনে সাংবাদিক সম্মেলনও হচ্ছে না দু’পক্ষকে নিয়ে। ডার্বি হারের পর তা বন্ধ।
কে আয়োজন করবে? ক্লাব কর্তাদের হাল যে ওডাফা ওকোলির মতোই! ফর্মহীন! |
শনিবারে আই লিগ ফুটবল
মোহনবাগান: ডেম্পো (যুবভারতী ৫-০০)
স্পোর্টিং ক্লুব: শিলং লাজং (গোয়া)। |