অন্য অফিসারদেরও গ্রেফতার চায় পুলিশই
থানার পূর্বতন সাব-ইনস্পেক্টরের পরে এ বার কে?
শর্ট স্ট্রিটের হামলায় শেক্সপিয়র থানার পূর্বতন এসআই তথা ওই মামলার প্রথম তদন্তকারী অফিসার নুর আলিকে গ্রেফতারের পরে একই ঘটনায় অন্য যে-সব পুলিশ অফিসারের নাম উঠেছে, তাঁদেরও গ্রেফতারের দাবি তুলেছে কলকাতা পুলিশের নিচু তলা। ১১ নভেম্বরের হামলার পরে প্রথমে নুরকে ক্লোজ করা হয়েছিল। তার পরে ওই থানার ওসি পীযূষ কুণ্ডু এবং এসি তাপস বসুকেও তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়। নুর অবশ্য দাবি করেছিলেন, তিনি যা করেছেন, সবটাই উপওয়ালার নির্দেশে।
৯এ শর্ট স্ট্রিটের জমি-বাড়িতে ১১ নভেম্বরের আগেও হামলা হয়েছিল। লালবাজারের গোয়েন্দাদের দাবি, ১৫ সেপ্টেম্বরের সেই হামলায় বন্দুক লুঠ হয়েছে জেনেও অভিযোগ নেননি নুর। ওই জমিটি দখল করার জন্য ১১ নভেম্বর আবার যে হামলা হবে, তা-ও জানতেন তিনি। গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, অভিযুক্তদের কাছ থেকে দফায় দফায় প্রচুর টাকা নেন নুর। তাঁর উপরওয়ালারা সেটা জানতেন না, এমনটাও মনে করেন না তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, শুক্রবার লালবাজারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নুর উপরওয়ালাদের সঙ্গে অভিযুক্তদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন। তা কতটা সত্যি, যাচাই করা হচ্ছে।
নুরের পরে কি এ বার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া ওসি এবং এসি-কেও গ্রেফতার করবে পুলিশ?
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “তদন্তে যাঁর নামে অভিযোগের প্রমাণ মিলবে, তাঁর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” লালবাজার সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের সঙ্গে ওই দুই অফিসারের কতটা যোগাযোগ ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মিলিয়ে দেখা হচ্ছে মোবাইলের কল লিস্টও। এ ব্যাপারে নুরকে আরও জেরা করা হচ্ছে। তিনিই এখন গোয়েন্দাদের তুরুপের তাস।
১৯৯৬ ব্যাচের এসআই নুর ছিলেন শেক্সপিয়র সরণি থানার ‘ছোটবাবু’। পদমর্যাদায় ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি-র ঠিক পরেই। থানা থেকে নুরকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় লালবাজারের কর্তারা বলেছিলেন, প্রাথমিক ভাবে ওই অফিসারের সন্দেহজনক ভূমিকার কথা জানার পরেই এই শাস্তি দেওয়া হল। তখনই পুলিশকর্তারা জানিয়ে দেন, পরবর্তী কালে তদন্তে যদি ওই ঘটনার সঙ্গে নুরের সম্পর্ক নিশ্চিত হয়, সে-ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দিন তাঁকে গ্রেফতার করে লালবাজার সেই ব্যাপারে আরও এক কদম এগোল।
লালবাজার সূত্রের খবর, শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে বুধবার সামির রিয়াজ নামে যে-আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়, তাঁকে জেরা করেই নুর আলি-সহ কলকাতা পুলিশের কয়েক জন অফিসারের নাম জানা গিয়েছে। ওই সব পুলিশ অফিসার বিতর্কিত জমি-বাড়ি দখল করতে হামলা চালানোর ব্যাপারে সম্পত্তির কারবারি পরাগ মজমুদারকে সাহায্য করেছিলেন। রিয়াজ অফিসারদের নাম জানানোর সাব-ইনস্পেক্টর নুর আলিকে লালবাজারে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার তোড়জোড় শুরু হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, রিয়াজ দাবি করেছেন, তিনি পেশায় ফৌজদারি আইনজীবী বলে বিভিন্ন মামলার স্বার্থে বহু পুলিশ অফিসারের সঙ্গে তাঁকে যোগাযোগ রাখতে হয়।
শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমিতে ১৫ সেপ্টেম্বরও হামলা চালানো হয়েছিল। সেই ঘটনায় বৃহস্পতিবার ধৃত, গড়িয়ার বাসিন্দা যুবক ঋত্বিক দে-কে শুক্রবার ব্যঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ঋত্বিকের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা এ দিন আদালতে বলেন, “আমার মক্কেল এক মাস ধরে তদন্তের ব্যাপারে পুলিশকে সাহায্য করছেন। বৃহস্পতিবার তিনি লালবাজারে গেলে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। অথচ পুলিশ বলছে, তাঁকে অন্য জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রকৃত তদন্ত হলে আমার মক্কেল নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।” তদন্তকারীরা জানান, ১৫ সেপ্টেম্বরের হামলার আগে বহিরাগতেরা যেখানে জড়ো হয়েছিলেন, সেই জায়গার ব্যবস্থা করে দেন ঋত্বিকই। হামলার অন্যতম মূল চক্রী বলে অভিযুক্ত পিনাকেশ দত্তের সঙ্গে তিনি সে-দিন ঘটনাস্থলে যান।
শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডের মূল চক্রী, সম্পত্তির কারবারি পরাগকে লেক থানায় রুজু হওয়া একটি প্রতারণার মামলার অভিযুক্ত হিসেবে শুক্রবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশ জানায়, ২০১২ সালে কল্পনা মজুমদার নামে এক মহিলা অভিযোগ করেন, তিনি বাদল সাউ ও গোবিন্দ সাউয়ের কাছ থেকে ১০৪ সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের একটি জমি কিনেছিলেন। কিন্তু বাদল ও গোবিন্দ সাউ সেই জমি তাঁকে হস্তান্তর করার আগেই পরাগের আবির্ভাব হয় এবং তিনি ওই জমি দখল করতে চান। তদন্তকারীরা জানান, কল্পনাদেবীর সই জাল করে ‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট’ তৈরি করেছিলেন পরাগ।

শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে ধৃত এসআই
আগে গ্রেফতার হয়েছেন দু’জন আইনজীবী। শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমিতে হামলার মামলায় এ বার গ্রেফতার করা হল প্রথম তদন্তকারী অফিসারকেই। নুর আলি নামে ওই অফিসারের বিরুদ্ধে শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ এনেছেন গোয়েন্দারা।
১১ নভেম্বর ৯এ শর্ট স্ট্রিটে যখন হামলা হয়, নুর ছিলেন শেক্সপিয়র সরণি থানার এসআই। সেই ঘটনায় তাঁর সন্দেহজনক ভূমিকার কথা গোড়াতেই জানতে পারে লালবাজার। তাই ঘটনার চার দিন পরেই তাঁকে ওই থানা থেকে সরিয়ে সাউথ ডিভিশনের রিজার্ভ অফিসে ‘ক্লোজ’ করা হয়। তিনি তখন ওই মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। ধৃতদের জেরা করে ওই হামলায় নুরের ভূমিকার ব্যাপারে নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা। শুক্রবার লালবাজারে ডেকে তাঁকে জেরা করা হয়। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “নুরকে শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমিতে বহিরাগতদের দিয়ে হামলা চালানোর চক্রান্তে সামিল থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
শর্ট স্ট্রিটের জমি-বাড়িতে হামলার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি নুর আগে থেকেই জানতেন বলে ধৃত কয়েক জনকে জেরা করে ইঙ্গিত পান তদন্তকারীরা। হামলার পরে নুর যে আইনজীবী সামির রিয়াজের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতেন, তা-ও স্পষ্ট হয়ে যায়। ১৫ সেপ্টেম্বর ওই বাড়ি থেকে রাইফেল লুঠের পরে রিয়াজের কথাতেই নুর অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে চাননি বলে গোয়েন্দাদের দাবি। রিয়াজকে বুধবার গ্রেফতার করা হয়। মোটা টাকার বিনিময়ে নুর অভিযুক্তদের হয়ে কাজ করতেন বলে অভিযোগ।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.