জ্বালানি থেকে যন্ত্রাংশ সবেরই দাম বাড়ছে। বাড়ছে না শুধু বাসভাড়া। সরকারের দাবি, সাধারণ মানুষের উপরে বাড়তি বোঝা না-চাপানোর জন্যই ভাড়া না-বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। কিন্তু এতে পরিবহণেরই হাল খারাপ হচ্ছে। ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই। এরই সাম্প্রতিক উদাহরণ বেহালার ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চালু হওয়া তিনটি নতুন রুটের সরকারি বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
পরিবহণ দফতরের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। ভাড়া না বাড়ায় আয়ও বাড়ছে না। ফলে, মেরামতির অভাবে এক দিকে যেমন পুরনো বাস বসে যাচ্ছে, অন্য দিকে সরকার নতুন বাস কিনতে পারছে না। অভিযোগ, এই অবস্থায় অন্য রুটের বাস তুলে এনে বেহালার ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজারহাট, সল্টলেক-নবদিগন্ত এবং মধ্যমগ্রামএই তিনটি রুট চালু করেছিলেন শিল্পমন্ত্রী তথা পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ধুমধামই সার। কয়েক মাস যেতে না যেতেই সেই তিনটি রুটেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, যে রুট থেকে বাসগুলি তুলে আনা হয়েছিল, সেখানে বাস কম পড়ায় আবার সেখানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। |
শুধুই অপেক্ষা। ছবি: অরুণ লোধ। |
তিনটি রুটেই মূলত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগম (ডব্লিউবিএসটিসি)-এর বাস চালানো শুরু করেছিল। উদ্বোধনের পরে শিল্পমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ওই বাসস্ট্যান্ড থেকে এই রুটগুলিতে নতুন বাস চালু করার জন্য বেহালা-ঠাকুরপুকুরের মানুষ দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি করছিলেন। তাই পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে আলোচনা করেই ওই তিনটি রুট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যদিও উদ্বোধনের দিনই নতুন রুটের বাসগুলি অন্য রুট থেকে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন পরিবহণ দফতরের কর্মীদের একাংশ। বাসের উপরে অন্য রুটের নাম লেখা ছিল। কিন্তু শিল্পমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, অন্য রুট থেকে বাসগুলি আনা হলেও পরিষেবা বিঘ্নিত হবে না। তিনি বলেন, “বাস চলবে, এটুকু দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি।” শুধু তাই নয়, আপাতত ছ’টি বাস চালু হলেও, কয়েক দিনের মধ্যেই আরও দু’টি নতুন বাস আনা হবে বলেও তিনি জানান। অর্থাৎ তিনটি রুটে মোট আটটি বাস চালানোর আশ্বাস দেন তিনি।
ভূতল পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, মেরামতির অভাবে পুরনো বাস বসে যাচ্ছে। নতুন বাসও আসছে না। তাড়াহুড়োয় অন্য রুটের বাস এনে তিনটি নতুন রুট চালু করা হয়েছিল। কিন্তু পুরনো রুটে বাস কম পড়ায় শিল্পমন্ত্রীর উদ্বোধন করা বাসগুলি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে, গত প্রায় ছ’মাস ধরে ওই তিনটি রুটে আর বাস নেই। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার মতে, শুধু ভূতল পরিবহণ নিগম নয়, সব নিগমেরই একই অবস্থা। এর মধ্যেই তাড়াহুড়ো করে রুট চালু করতে গিয়ে এই নজিরবিহীন অবস্থা তৈরি হয়েছে। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। শীঘ্রই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “বিষয়টি নজরে আছে। কিছু সমস্যা আছে। দ্রুত সেই সব সমস্যার সমাধান করে ফের ওই সব রুটে আমরা পরিষেবা চালু করব।” |