রানিকুঠির কাছে চণ্ডী ঘোষ রোডে কলকাতা পুরসভার একটি উদ্যান থাকলেও তার নামকরণের কোনও নথি পুরসভায় নেই।
২০০৮-এ উদ্যানটি তৈরির পর স্থানীয় মানুষ প্রাক্তন স্বাস্থ্য মন্ত্রী প্রশান্ত শূরের নামে পার্কটির নামকরণ করেন। অথচ এই পার্কের নামকরণের কোনও নথি পুরসভায় না থাকায় স্থানীয় নাম পরিবর্তন করে পার্কের অন্য নাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “পুরসভার পার্কের কী নামকরণ হবে সেই সিদ্ধান্ত পুরসভাই নেবে। এর বাইরে কারও দেওয়া নাম সরকারি ভাবে গ্রহণ করা হবে না। যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা যে কোনও নামের প্রস্তাব আনতে পারেন। কিন্তু তা মেয়র পারিষদ এবং পুরসভার অধিবেশনে গৃহীত হতে হবে।” দেবাশিসবাবু আরও জানান, শহরে রাস্তার নামকরণ করতে গেলে কোনও প্রস্তাবিত নাম পুরসভার ‘রোড রিনেমিং কমিটি’-তে পাঠাতে হবে। কিন্তু পার্কের ক্ষেত্রে কেবল মেয়র পারিষদের আলোচনায় পাশ করেই পুর-অধিবেশনে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। |
এই পার্ক তৈরি হওয়ার পরেই এলাকার বাসিন্দারাই এই পার্কের নামকরণ প্রশান্ত শূরের নামে করেন বলে জানান স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার। তিনি আরও জানান, এই পার্কে প্রশান্ত শূরের নামাঙ্কিত একটি ফলকও লাগানো ছিল, যদিও এখন সেটি নেই। তিনি বলেন, “এই বিষয়টি জানার পরেই আমি পুর কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই এই নাম পুরসভার নথিভুক্ত কি না? স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা হয়। তাঁদেরকেও আমি পুরসভার এই সংক্রান্ত নথি দেখাতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরাও দেখাতে পারেননি।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, কী ভাবে এই পার্কের নামকরণ হয়েছিল তা জানা নেই। কে বা কারা এই পার্কের নামকরণ করেছিলেন সেই বিষয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এর পরেই পুরসভায় গত মেয়র পারিষদের আলোচনায় এই পার্কের অন্য নাম দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয়, পার্কটির নাম দেওয়া হবে রবীন্দ্র-বিবেকানন্দ সার্ধজন্মশতবর্ষ স্মারক উদ্যান। কিন্তু নামকরণ যত দিন না পুরসভার অধিবেশনে পাশ করা হচ্ছে তত দিন সরকারি ভাবে নামকরণ করা সম্ভব হবে না। নামকরণের পর এখানে পুরসভা ফলক বসাবে। |
এখন পার্কের সামনে লাগানো আছে এই বোর্ড। |
অন্য দিকে, পার্কটিকে এলাকায় ওয়্যারলেস পার্ক হিসেবেই পরিচিত। কারণ এই পার্কটির কাছেই রয়েছে রাজ্য পুলিশের ওয়্যারলেসের অফিস। কিন্তু এই নামটিরও কোনও বৈধতা নেই। সাধারণত, পুরসভার এলাকায় পার্ক বা উদ্যানের নামকরণ করা হয় প্রয়াত জনপ্রতিনিধি বা বিভিন্ন মনীষীর নামেই। সে ক্ষেত্রে এলাকার বাসিন্দারাই সেই নাম প্রস্তাব করে দেন। কিন্তু দলমত নির্বিশেষে এই ধরনের কোনও নাম বাসিন্দারা জানাননি। নামের ব্যাপারে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে বলে দেবব্রতবাবুর দাবি।
পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রূপা বাগচী বলেন, “নামকরণ নিয়ে নোংরা রাজনীতি চলছে। পুরসভা বামফ্রন্টের আমলেই এই পার্কের উদ্বোধন করেছিল। পুরসভাই এই পার্কের নামকরণও করেছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি ছিল প্রাশান্ত শূরের নামে উদ্যানের নামকরণ করার। কারণ প্রশান্তবাবু এই অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। দেখতে হবে পার্কের নামকরণের উল্লেখ পুরসভার নথিতে আছে কি না।” |