পুলিশকে ভয় পেয়ো না, আস্থা রাখো। বিপদে-আপদে পুলিশের কাছে সব রকম সাহায্য পাবে।
শুক্রবার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় কলকাতা পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রীদের উদ্দেশে এই বার্তা দিলেন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ।
অনুষ্ঠানটির নাম ‘সম্পর্ক’। স্কুলছাত্রীদের পুলিশ-ভীতি কাটাতে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। এর আগে কলকাতা পুলিশের আটটি ডিভিশনের মোট ১৮টি থানায় এই অনুষ্ঠান হয়। এ দিন নর্থ ডিভিশনের আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার অনুষ্ঠানে হাজির ছিল বেথুন কলেজিয়েট স্কুল, আর্যকন্যা গার্লস মহাবিদ্যালয়, কাশীপুর গার্লস হাইস্কুল এবং বাগবাজার মাল্টিপারপাসের সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ১০০ ছাত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত লালবাজারের কর্তাদের বক্তব্য, এই ছাত্রীরা কিছু দিন পরেই কলেজে যাবে। তখন রাস্তাঘাটে একা চলাফেরার সময়ে বিভিন্ন বিপদের আশঙ্কা থাকে। তাই আগে থেকেই যাতে ছাত্রীরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ক্ষেত্রে সহজ হতে পারে, তার জন্যই এই কর্মসূচি।
এ দিন স্কুলছাত্রীদের জানানো হয়, তারা যেন কোনও বিপদে পড়লেই নিকটবর্তী থানায় গিয়ে পুরো বিষয়টি জানায়। কাছাকাছি থানা না পাওয়া গেলে কলকাতা পুলিশের হেল্পলাইনে ফোন করে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি, লালবাজারের সাইবার থানার অফিসারেরা ছাত্রীদের ই-মেল ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। সাইবার বিষয়ক গণ্ডগোলের ক্ষেত্রে আপৎকালীন নম্বরও দেওয়া হয় পুলিশ থেকে। ছাত্রীদের থানা ঘুরিয়ে দেখানো হয়, নিয়ে যাওয়া হয় ওসি এবং অন্য অফিসারদের ঘরে। জেনারেল ডায়েরি বা এফআইআর করার পদ্ধতিও
দেখানো হয়। |
এর নাম রিভলভার। স্কুলপড়ুয়াদের বোঝাচ্ছেন ডিসি (উত্তর) গৌরব শর্মা।
শুক্রবার, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায়। ছবি: সুমন বল্লভ। |
তবে এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রীদের একাংশ পুলিশ সম্পর্কে তাদের বিরূপ অভিজ্ঞতার কথাও কিন্তু গোপন করেনি। বাগবাজার মাল্টিপারপাস স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়, গত কয়েক মাস ধরে তার মোবাইলে ফোন করে উত্ত্যক্ত করছিল অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি। অনেক অশালীন কথাও সে এসএমএস-এ পাঠিয়েছে। কিন্তু থানায় অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ওই স্কুলেরই সপ্তম শ্রেণির আর এক ছাত্রী বলে, “আমাকেও মোবাইলে ফোন করে খারাপ কথা বলত এক জন। থানায় অভিযোগ জানানোর পরেও ফোন আসা বন্ধ হয়নি। আমার মা-বাবা ফোনে ওই লোকটাকে ধমকালে সে উল্টে ওঁদের খুন করার হুমকি দিয়েছে। এটা নিয়েও থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কোনও লাভ হয়নি। এখন বাড়ি থেকে বেরোতেই ভয় করে।”
এই অবস্থায় ‘সম্পর্ক’-এর মতো কর্মসূচি নিয়েও কি বদলাবে পুলিশ সম্পর্কে মনোভাব?
পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য, “থানার অফিসারদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যাতে অভিযোগকারীদের যতটা সম্ভব সাহায্য করেন। তবুও কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে। কোথাও একটা বোঝাপড়ার অভাবেই এই অসুবিধে হয়। তবে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে সেই অভাব যতটা সম্ভব কম করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে এর ফল পাওয়া যাবে।” সিপি স্বীকার করে নেন, পুলিশ সম্পর্কে যাদের বিরূপ ধারণা রয়েছে, তাদের ধারণা একটা মাত্র অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব নয়। তবে তাঁর কথায়, “অল্প বয়স থেকেই পুলিশের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিলে পুলিশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা বদলাবে।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে সামিল একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীই যেমন বলল, “পুলিশকাকু আমাদের থানা ঘুরিয়ে দেখালেন। আগে পুলিশ দেখলেই ভয় করত। আজকের পরে আর ভয় করবে না।” |