মধ্যরাতে গড়িয়াহাটে ‘মত্ত’ মহিলার দাপট
ভীর রাতে শহরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এক মহিলা। ত্রস্ত অবস্থায় সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক পুলিশ অফিসার। জ্যাকেটের পুলিশি তারা লাগানো ‘স্ট্র্যাপ’ ছিঁড়ে গিয়েছে। মহিলা বারবার তাঁর জামা টেনে বলছেন, “এই পুলিশ, পুলিশ। কাম, কাম। পুলিশ হতে খুব ভাল লাগে!” পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তখন ক্রমশ মহিলার থেকে দূরে সরার চেষ্টা করেন ওই অফিসার। থানা-লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে ফোন করে সাহায্য চাইতে থাকেন।
ব্যাপারটা কী?
বৃহস্পতিবার রাতে রত্না মুখোপাধ্যায় নামে ওই মহিলা মত্ত অবস্থায় গড়িয়াহাট থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর সুখেন মল্লিককে মারধর ও গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, মহিলা পুলিশকর্মীর অভাবে তাঁকে নিরস্ত করা সম্ভব হয়নি। শেষে ফুটপাথবাসী দুই মহিলার সাহায্যে রত্নাকে নিরস্ত করা হয়। শুক্রবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনাচক্রে, মাস কয়েক আগে বৌবাজার থানায় গভীর রাতে চড়াও হয়েছিলেন এক মহিলা। ডিউটি অফিসারের গায়ে চিলি চিকেনের ঝোল ঢেলে দিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, তখনও মহিলা পুলিশের অভাবে তাঁকে আটকাতে পারেননি বৌবাজার থানার অফিসারেরা। সে দিন যা ঘটেছিল থানার অন্দরে, বৃহস্পতিবার রাতে সেটাই ঘটল শহরের রাজপথে। পুলিশের একাংশ বলছেন, মহিলা পুলিশের উপস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এই ঘটনা ফের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাতে লালবাজার কন্ট্রোলে মহিলা পুলিশের একটি দল থাকে। প্রয়োজন মতো ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় তাঁদের। যদিও পুলিশের একাংশ বলছে, লালবাজার থেকে মহিলা-বাহিনী পাঠাতে পাঠাতে অনেক সময়েই ঘটনা ঘটে যায়। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, “মহিলা বাহিনীতে ঘাটতি রয়েছে। সে কারণেই রাতে থানায় ডিউটি দেওয়া যাচ্ছে না।”
ঠিক কী ঘটেছিল বৃহস্পতিবার রাতে?
পুলিশ জানায়, আদতে দুর্গাপুরের বাসিন্দা রত্না একটি বেসরকারি আর্থিক সংস্থায় ডেপুটি ম্যানেজার পদে কর্মরত। টালিগঞ্জে পেয়িং-গেস্ট হিসেবে থাকেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে প্রবীর পইচ্যা নামে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটের পানশালায় গিয়েছিলেন রত্না। প্রবীরবাবুও একই সংস্থায় কাজ করেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পার্ক স্ট্রিট থেকে প্রবীরের গাড়িতে চেপেই বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে একটি অটোকে ধাক্কা মারে প্রবীরের গাড়ি। তা নিয়েই স্থানীয় কিছু লোকের সঙ্গে তাঁদের বচসা হয়। সে সময় মোটরবাইকে টহলরত ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর ঘটনাস্থলে হাজির হন। কথা বলার সময়েই আচমকা তাঁর উপরে চড়াও হন রত্না। প্রবীরবাবু তাঁকে নিরস্ত করার চেষ্টা করলেও সফল হননি বলে অভিযোগ। বেগতিক দেখে থানা ও লালবাজার কন্ট্রোলে ফোন করেন সুখেনবাবু।
পুলিশ সূত্রের খবর, ফোন পেয়ে থানা থেকে একটি প্রিজন ভ্যান নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন এক সাব-ইনস্পেক্টর। ওই গাড়িতে চাপিয়েই প্রবীরবাবুকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই এলাকার ফুটপাথবাসী দুই মহিলার সাহায্যে একটি ট্যাক্সিতে তোলা হয় রত্নাকে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
পুলিশ সূত্রের খবর, সূর্যাস্তের পরে কোনও মহিলাকে গ্রেফতার করা যায় না। সে ক্ষেত্রে কোনও নিরাপদ আশ্রয়ে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে তেমন করার জন্য এলাকায় বসবাসকারী এক মহিলা গ্রিন পুলিশকে বাড়ি থেকে ডেকে আনা হয়। শুক্রবার সূর্যোদয়ের পরে তাঁকে গ্রেফতার করে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়।
কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে মারধরের অভিযোগে রত্নার বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। আদালত রত্নাকে ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। একই নির্দেশ হয়েছে প্রবীরেরও।
মেয়ের গ্রেফতারের খবর পেয়ে এ দিন সকালেই দুর্গাপুরের বাড়ি থেকে রত্নার বাবা কলকাতায় চলে আসেন। সঙ্গে তাঁর ছোট মেয়েও। আলিপুর আদালতে গিয়ে রত্নার সঙ্গে কথাও বলেন তাঁরা। তবে বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি তাঁরা। সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়েই আলিপুর থেকে বেরিয়ে যান রত্নার বাবা ও বোন।
কিন্তু পরপর এই ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশের মহিলা-বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি নিয়ে কিছু ভাবছে পুলিশ?
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র অবশ্য বলছেন, “২৫০ জন মহিলা কনস্টেবলের প্রশিক্ষণ চলছে। তাঁরা বাহিনীতে যোগ দিলে মহিলা পুলিশের সংখ্যা বাড়বে।” ওই মহিলা কনস্টেবলদের থানায় রাতের ডিউটি দেওয়ার ভাবনা-চিন্তাও করছেন লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.