শীতের মতোই এ বার
দেরিতে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া

র্ষা পিছিয়ে গিয়েছে। তার পরে বঙ্গোপসাগরে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে সূর্য মুখ লুকিয়ে ছিল গোটা নভেম্বর জুড়ে। বৃষ্টির জমা জল শুকোতেই পারেনি। আর তার জেরেই ডিসেম্বরে মহানগরীতে হানা দিল মশাবাহিত দুই রোগ, ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া।
পতঙ্গবিদ এবং পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মেঘলা আকাশ মশার প্রজননের পক্ষে আদর্শ। আর এই আবহাওয়ায় ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার জীবাণুও অতি সক্রিয় হয়। শারীর বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, এই ধরনের আবহাওয়ায় নানা ধরনের ব্যাক্টেরিয়া, জীবাণু, পরজীবী আক্রমণ করে। সঙ্গী হয় সর্দি-কাশি-জ্বর। দুর্বল হয়ে যায় শরীর। সেই দুর্বল শরীরকে সহজে কাবু করে ফেলে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার জীবাণু।
পুর স্বাস্থ্য দফতরের খবর, বিক্ষিপ্ত ভাবে হলেও মধ্য কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতার কিছু এলাকায় কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন ওই দুই রোগে। সম্প্রতি রাজভবন এলাকার রেড ক্রস প্লেস এবং যাদবপুরের বিজয়গড়ে ডেঙ্গি ও ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের খবর মিলেছে। উত্তর কলকাতার বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট থেকেও ডেঙ্গি সংক্রমণের খবর এসেছে। রাজভবনের বাসিন্দা কিংবা বিধায়ক-কাউন্সিলরের পরিবারের সদস্যেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ায়।
সারা বছর শহর জুড়ে মশা নিধন কর্মসূচি চালায় পুরসভা। তাতে ফল কী হল, এই পরিস্থিতিতে উঠেছে সেই প্রশ্ন। পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ অবশ্য বলেন, “শহরটাকে ডেঙ্গি-মুক্ত করা গিয়েছে, এমন দাবি তো কোনও দিন করিনি। দু’একটা জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে এই রোগ হচ্ছে। তবে গত বার যে ভাবে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ছড়িয়েছিল, তা অনেকটা রোখা গিয়েছে।” তবে ডিসেম্বর মাসে যখন কীটপতঙ্গদের শীতঘুমে যাওয়ার কথা, তখন তারা এ ভাবে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠায় চিন্তিত পুরসভার কীট-পতঙ্গ মোকাবিলা বিভাগ। পুরসভার এক পতঙ্গবিদ বলেন, “স্বাভাবিক নিয়মে এ সময়ে শীতঘুমে যাওয়ার কথা মশার। কিন্তু আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় এখনও ঠান্ডা পড়েনি। মশাও ঘুমোতে যায়নি। সেটাই আমাদের ভাবাচ্ছে।”
এক পরজীবী বিশেষজ্ঞের ব্যাখ্যা, “যেহেতু বৃষ্টিটা অনেক দিন ধরে ছিল, তাই জমা জল ধুয়ে গিয়েছে সঙ্গে সঙ্গেই। এখন বৃষ্টি থেমেছে। জমা জল আর ধুয়ে যাচ্ছে না। উল্টে আকাশে মেঘ থাকায় ওই জলও শুকোচ্ছে না। যা মশার প্রজননের পক্ষে আদর্শ।” পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলেন, “এ বার কলকাতায় ডেঙ্গি শুরু হয়েছে দেরিতে। বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগী আসতে শুরু করেছে। রোগটা আরও বেশ কিছু দিন ভোগাবে বলেই মনে হচ্ছে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১২ সালে শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৫২। মৃত্যু হয়েছিল ২ জনের। এ বছর ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২১০। কেউই মারা যাননি। আক্রান্তের সংখ্যাটা বেড়েছে নভেম্বরের শেষ থেকে। গত বছর অগস্ট থেকেই শহর জুড়ে দাপাচ্ছিল ডেঙ্গি। এ বার তা ঘটেছে চার মাস দেরিতে। একই ভাবে ২০১২-য় কলকাতা পুরসভার ক্লিনিকে ৩২ হাজার ৬৫৯ জনের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু মিলেছিল। এর মধ্যে ম্যালেরিয়ায় (ফ্যালসিফেরাম) আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪০৩। এ বছর নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ১৭৩ জন। যার মধ্যে ফ্যালসিফেরামে ভুগেছেন ৪৮৪ জন। ডেঙ্গির মতো এ বার ম্যালেরিয়াও শহরে এসেছে দেরিতে।
মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) বলেন, “রাজভবনের সামনে রেড ক্রস প্লেসে এক সরকারি অফিসারের স্ত্রী-র ডেঙ্গি হয়েছে। খবর পেয়েই পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা ওই ঠিকানার চারপাশে প্রতিষেধক ব্যবস্থা নেন। তবে ওই এলাকায় ডেঙ্গির জীবাণুবাহক এডিস মশার সন্ধান মেলেনি। পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “খবর নিয়ে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত মহিলা কর্মসূত্রে অন্যত্রও যাতায়াত করেন। সেখানেও তাঁর শরীরে এই রোগের জীবাণু ঢুকতে পারে।”
অতীনবাবুর দাবি, “শহরে মোট জনসংখ্যা ৪৫ লক্ষ। দৈনিক ৬০ লক্ষ মানুষ বাইরে থেকে শহরে আসেন। সেই হিসেব ধরলে এ বছর মশাবাহিত রোগের প্রকোপ থেকে শহরকে অনেকটা স্বস্তি দেওয়া সম্ভব হয়েছে।” তবে ডিসেম্বর মাসটা না গেলে পুরসভার এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনও অবকাশ নেই বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.