রাস্তার মেরামতি নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিলই। তার উপর রাস্তার নীচের ফুটো হয়ে যাওয়া পাইপ মেরামতির নামে রাস্তা কেটে ফেলে রাখায় বৃহস্পতিবার সেই ক্ষোভ রাস্তা অবরোধের ঘটনায় বদলে গেল। রাস্তা সংস্কারের পাশাপাশি জলের পাইপ মেরামতি নিয়ে গাফিলতির প্রতিবাদে রাস্তায় চেয়ার-বেঞ্চ পেতে দলীয় পতাকা লাগিয়ে অবরোধে নেমে পড়ল কংগ্রেস। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শহরের প্রধান দু’টি রাস্তা টাকি রোড ও ইটিন্ডা রোড। সকাল সকাল কাজে বের হওয়া মানুষজন থেকে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী সকলেই দুর্ভোগে পড়েন। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করে অবরোধ তুলে দিলে বেলা ১২টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ধৃতদের ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। |
ত্রিমোহিনী মোড় থেকে একটি রাস্তা (টাকি রোড) চলে গিয়েছে হাসনাবাদের দিকে। আর একটি (ইটিন্ডা রোড) চলে গিয়েছে ইটিন্ডার দিকে। পুলিশ সূত্রের খবর, দুই রাস্তার সংযোগস্থলের কিছু দূরে রয়েছে পাম্প হাউস। যেখান থেকে বসিরহাট পুর এলাকায় মাটির নীচে পাইপের সাহায্যে জল সরবরাহ করা হয়। দীর্ঘদিনের ওই জলের পাইপ জীর্ণ হওয়ার কারণে এবং রাস্তা দিয়ে ভারী ট্রাক যাতায়াতের জন্য মাঝেমধ্যেই পাইপ ফুটো হয়ে রাস্তা ভাসে। তখন যাতায়াত আরও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তখনকার মতো তাপ্পি দিয়ে কোনওরকমে তা মেরামত করা হলেও স্থায়ী ভাবে আজ পর্যন্ত সারাইয়ের কাজ হয়নি। জীর্ণ পাইপ ফাটার সমস্যা এড়াতে বদলানো হয়নি পাইপ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই জলের পাইপ ফাটার কারণে বহুবার ওই রাস্তায় ভারী যান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পাইপ বদলানোর আবেদন জানান তাঁরা। কিন্তু তাতে কানই দেয়নি প্রশাসন। ফলে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এদিনের ঘটনায় অবিলম্বে রাস্তা ও পাইপ মেরামতির দাবিতে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা বাবু গাজি, অবিনাশ নাথ, সেলিম মণ্ডলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়।
ইটিন্ডা রাস্তার মধ্যেই পড়ে বসিরহাট হাসপাতাল, থানা, স্কুল, হাট-বাজার, মহকুমাশাসকের দফতর-সহ একাধিক সরকারি অফিস। গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার প্রায় সর্বত্রই বড় বড় গর্ত। পিচ উঠে বেরিয়ে পড়েছে নীচের পাথর, ইটের খোয়া। এমনই রাস্তার নীচে দিয়ে গিয়েছে জলের পাইপ। ভারী ট্রাক যাতায়াতের কারণে চাপ সহ্য করতে না পেরে মাঝে মাঝেই জলের পাইপ ফেটে বিপর্যয় ঘটে। কিন্তু দীর্ঘদিনের পাইপ বদলাতে গেলে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করতে হবে। ব্যাহত হবে জল সরবরাহও। এই ‘অজুহাত’ দিয়েই না রাস্তা না পাইপ কিছুই বদলাচ্ছে না বলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, রাস্তা সারাতে গেলে বা পাইপ মেরামতির ক্ষেত্রে জল সরবরাহ ব্যাহত হওয়া নিয়ে প্রশাসনের যদি এতই মাথাব্যাথা, তাহলে ওই রাস্তায় তাঁরা ভারী যান নিয়ন্ত্রণে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? কারণ দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ সময় ওই সব ভারী ট্রাকের চাকার চাপেই পাইপ ফেটেছে।
বসিরহাটের পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার তপন নস্কর বলেন, “ত্রিমোহিনী থেকে বেলতলা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কারে ইতিমধ্যেই দু’বার টেন্ডার ডাকা হয়েছে। কিন্তু টেন্ডারে কেউ অংশ নেননি। ফের আর একবার টেন্ডার ডাকা হয়েছে। ঠিকাদার রাজি হলেই রাস্তার কাজ শুরু হয়ে যাবে।” পুরপ্রধান কৃষ্ণা মজুমদার বলেন, “রাস্তার খারাপ অবস্থা নিয়ে দিন কয়েক আগে সংশ্লিষ্ট সব দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। যাতে দ্রুত রাস্তা ও পাইপ মেরামত করা যায় তার চেষ্টা হচ্ছে।”
মহকুমা জনস্বাস্থ্য-কারিগরি দফতরের সহকারি বাস্তুকার জয়দেব মণ্ডল বলেন, “দীর্ঘদিনের ওই সব পাইপ জীর্ণ হয়ে যাওয়ায় বহু জায়গায় ছিদ্র হয়ে গিয়েছে। নতুন পাইপ বসালে কোটি টাকার উপর খরচ। এখনই তা সম্ভব নয়। তাই পুরনো পাইপই দ্রুত মেরামতির কাজ চলছে।” |