|
|
|
|
বিরাট উপহারের বাক্স নিয়ে না ঢুকে টাকা দিন
নবদম্পতি নতুন সংসার পাতার কথা ভাবলে জিজ্ঞাসা করে নিতে
পারেন উপহার কী পছন্দ, পরামর্শ দিচ্ছেন ঋতা ভিমানি |
|
|
রমরমিয়ে চলছে বিয়ের মরসুম। চারিদিকে বিয়ের নেমন্তন্নের কার্ড ছড়িয়ে বসে আছি।
কার্ডের সঙ্গে নানা স্বাদের, নানা আকারের মিষ্টিও আসছে। মিষ্টির বাক্সগুলো এমন শৌখিন ভাবে তৈরি যে রীতিমতো কালেক্টর্স আইটেম হয়ে যায়। আমি তো ওগুলো দিয়ে গয়নার বাক্স বানিয়েছি। কিছু কিছু বাক্সতে ড্রাইফ্রুট ভরে সাজিয়ে রেখেছি কফি টেবিলে। কখনও বা মিষ্টির বাক্সে সাজিয়ে রাখছি ককটেল ন্যাপকিন বা সুগন্ধি মোমবাতি।
এ বার প্রশ্ন হল বাক্সের ভেতরে যা মিলল সেগুলো কী করবেন? খাবেন অবশ্যই। কিন্তু লাড্ডুর সাইজ তো ক্রিকেট বলের মতো। ইউরোপ থেকে আমদানি করা চকোলেট, অভিজাত কনফেকশনারির তৈরি উঁচু দরের কুকিজএ সবই তো ক্যালরি কনশাস কার্ডপ্রাপকের নিত্যকার রুটিন নড়বড় করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। এত কড়া কড়া মিষ্টি খেলে ক্যালরির ভারসাম্য নষ্ট হতে বাধ্য। কিন্তু নিখাদ বাঙালিরা আর কবে মিষ্টি খেতে আপত্তি করেন? তাই বলব উপভোগ করুন পাত্র-পাত্রীপক্ষের দেওয়া এই সব মিঠাই।
এ সব কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে গেল আমার আর এক বন্ধুর বাড়ি থেকে পাওয়া নেমন্তন্নের কথা। অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত বাঙালি বন্ধুর বাড়ির নেমন্তন্ন ছিল সেটা। ওরা বিয়ের যা কিছু হয় সবই করেছিল এলাহি ভাবে। উত্তর ভারতীয়দের মতো চারটে অনুষ্ঠান ছিল বিয়েতে। আশীর্বাদ থেকে রিসেপশন, ককটেল ডিনার, সঙ্গীত একেকটা অনুষ্ঠান হয়েছিল একেক জায়গায়। অত্যন্ত অভিজাত পরিবেশে একটা অনুষ্ঠানে তো রুপোর বাসনে রীতিমতো পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়েছিল। নিমন্ত্রিতদের যে কার্ড দেওয়া হয়েছিল, তার নকশা করেছিলেন পরিবারের এক আত্মীয়া। কার্ডের ভেতর পাত্রপাত্রীর বর্ষীয়ান পিতৃপুরুষের পরিচয় সুন্দর ভাবে লেখা। এই ভাবেই পারিবারিক পরিচয়টা সুন্দর ভাবে মেলে ধরা হয়েছিল। পরিচিতিটা লিখেছিলেন লেখক বুদ্ধদেব গুহ। আমার কথা হল কার্ডের পেছনে যদি খরচ করতেই হয় এই ভাবেই খরচ করুন।
আবারও ফিরি বিয়ের কথায়। এমন যদি হয় দূরে কোথাও বিশেষ কোনও জায়গায় বিয়ের আয়োজন হয়েছে মানে যেটাকে বলে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং, অতিথিদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করছেন তাঁরাই, এমন খরচের বহর যাঁদের, সেই ধনী বিয়েবাড়িতে কী উপহার দেবেন? আমাদের এক বন্ধু সম্প্রতি এক গয়না ব্যবসায়ীর বিয়েবাড়িতে যোগ দিতে গিয়ে বর-কনেকে খামে করে দুশো ডলার উপহার দিয়েছিলেন। কারণ বর-বৌ বিদেশে সংসার পাতবে। দেশ থেকে কোনও জিনিস কিনে দিলে পরে সেটা শুধু বাড়তি জিনিস হিসেবে ঘর বোঝাই হত। তাই এটা বেশ ভেবে চিন্তে দেওয়া উপহার।
উপহার দেওয়া নিয়ে দ্বিধাটা কাটানো দরকার। আজকাল অনেকেই বিয়ের কার্ডে লিখে দেন যে তাঁরা উপহার চান না। উপহারের বদলে নবদম্পতির জন্য আশীর্বাদই যথেষ্ট। এই রকম ক্ষেত্রে ফুল বা উপহার বা নগদ টাকা না নিয়ে গিয়ে নিমন্ত্রণকারীর ইচ্ছেকে সম্মান জানানো উচিত।
আজকাল বিয়েবাড়িতে নকশাকরা খামে নগদ টাকা দেওয়ার রেওয়াজ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কত টাকা দেওয়া উচিত। এর উত্তরে বলব এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে ওই পরিবারের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের গাঢ়তা কতটা তার ওপর। যদি সেই পরিবারের সঙ্গে কোনও ব্যবসায়িক সম্পর্ক থেকে থাকে তা হলে এই ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠানে সেরাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করুন। আর যদি সম্পর্কটা নেহাতই সামাজিক বা গড়পড়তা হয় তা হলে নিজের রেস্তো বুঝে উপহার দিন। তবে উপহারের কথা যদি ওঠে টাকা দেওয়াই সব চেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
যদি নিকটাত্মীয়ের বিয়ে হয়, নবদম্পতি যদি নিজেরাই সংসার পাতার কথা ভাবে তা হলে বিয়ের পাত্র বা পাত্রীকে জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন উপহার হিসেবে কী তাঁদের পছন্দ। এই ক্ষেত্রে মিক্সি, মাইক্রোওয়েভ, ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ উপহার হিসেবে সব চেয়ে ভাল। আজকালকার ‘ইয়ং’ ছেলেমেয়েরা সংসার পাততে গিয়ে কী কী দরকার তার একটা তালিকা তৈরি করে থাকে। সেই তালিকা থেকে বেছে নিয়ে যে কোনও জিনিস আপনি উপহার দিতে পারেন। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে টাকাই সব চেয়ে কেজো উপহার মনে হলেও অফিস কাছারিতে সহকর্মীদের বিয়ে উপলক্ষে সাধারণত টাকা তুলে প্রয়োজনীয় জিনিস উপহার দেওয়া হয়। আর পারিবারিক বিয়ে হলেও ছোটখাটো আংটি বা কানের দুল দেওয়ার চেয়ে দু’চারটি নিমন্ত্রিত পরিবার মিলে টাকা তুলে ভারী গয়না দেওয়াই ভাল। যদি সাধ্য থাকে এবং আত্মীয়তা খুবই ঘনিষ্ঠ হয় তবে উপহার হিসেবে সোনাই এখন এক নম্বরে....বিরাট উপহারের বাক্স নিয়ে বিয়েবাড়িতে হাঁটতে হাঁটতে ঢোকার দিন শেষ।
বরং নগদ টাকা পেলে নবদম্পতি সেই টাকা দিয়ে হনিমুনে খরচ করতে পারেন কিংবা গেরস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারেন। চাইলে ব্যাঙ্কেও সঞ্চয় করতে পারেন।
উপহার দেওয়ার সমস্যা মেটানোর সব চেয়ে ভাল উপায় হল আপনি নিজে উপহার হিসেবে কী পেতে চান সেটা ভাবা, এবং সেই অনুসারে উপহার দেওয়া। |
|
|
|
|
|