|
|
|
|
জানতাম আমাদের বিয়ের এই পরিণাম হবে |
নেতাজিনগরের জিমন্যাসিয়ামে সবে দেড় ঘণ্টার এক্সারসাইজ শেষ হল। লাস্ট কয়েক মাসে চোদ্দো কিলো
ওজন
কমিয়েছেন।
কিন্তু জীবনে চাপ বেড়েছে প্রচুর। স্ত্রী শ্রাবন্তী এ বার উকিলের চিঠি পাঠিয়েছেন
বিবাহবিচ্ছেদ
চেয়ে।
পরিচালক রাজীব বিশ্বাস রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন। এই প্রথম মুখ
খুললেন আনন্দplus-য়ের কাছে। সামনে ইন্দ্রনীল রায় |
রাজীব, আপনাকে খুব ডিসটার্বড লাগছে।
না, ডিসটার্বড নই। আপসেট একটু বলতে পারেন।
আপসেট কি যে দিন থেকে শ্রাবন্তী আপনাকে ডিভোর্স চেয়ে উকিলের চিঠি পাঠিয়েছেন সে দিন থেকেই?
দেখুন, এটা আমার কাছে শকিং লাগেনি। অনেক দিন ধরেই তো আমরা সেপারেট রয়েছি। আমি জানতাম আমাদের বিয়ের এই পরিণতি হবে। সেই মতো মেন্টাল প্রিপারেশন নিয়ে নিয়েছিলাম। তাও উকিলের চিঠি পাওয়ার পর খারাপ তো লাগছেই। আফটার অল এগারো বছরের বিবাহিত সম্পর্ক আমাদের।
কবে পাঠালো শ্রাবন্তী উকিলের চিঠি?
দিন দশ আগে। আমার বাড়ির অ্যাড্রেসে।
কোনও পার্টিকুলার ব্যাপার নিয়ে ঝামেলা?
না, তাও হয়নি। এই যে আমার ছবি ‘মজনু’ রিলিজ করল। সেটায় তো শ্রাবন্তী হিরোইন। ‘বিন্দাস’ বলে দেবের যে ছবিটা করছি, সেটাতেও ও হিরোইন। আমাদের কাজের জায়গায় দেখলে বুঝতেই পারবেন না, আমরা লাস্ট এতগুলো মাস সেপারেট রয়েছি। আমি ভেবেছিলাম যেহেতু আমরা দু’জনেই এত ব্যস্ত তাই দু’জন দু’জনকে টাইম দিতে পারছি না বলেই হয়তো এত প্রবলেম হচ্ছে...
তাই ভেবেছিলেন, দু’টো ছবিতে একসঙ্গে কাজ করলে একটু একটু করে সেই সমস্যার সুরাহা করা যাবে?
এগ্জাক্টলি তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু দেখলাম সেটা আর হওয়ার নয়। এই নিয়ে আমার সঙ্গে দেব, শ্রীকান্তদা আর রানেদার অনেক বার কথা হয়েছে। ওরা সবাই বলেছিল এখন শ্যুটিংয়ের মধ্যে এ সব নিয়ে মাথা না ঘামাতে। শ্যুটিং শেষ হওয়ার পর ওদের সঙ্গে ডিসকাস করেছি এটা নিয়ে।
আপনাদের তো লাভ ম্যারেজ?
হ্যাঁ, লাভ ম্যারেজ তো বটেই। |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল। |
শ্রাবন্তী তো আনন্দplus-য়ের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন বিজয়গড়ের পাড়ায় কল থেকে জলও তুলেছেন?
হ্যাঁ, তুলেছে। সেই সময় অবশ্য ও হিরোইন ছিল না। আমরা বিজয়গড়ে থাকতাম। ধীরে ধীরে ফ্ল্যাট কিনলাম। একটা ফ্ল্যাটের পর আর একটা কিনলাম। গাড়ি কিনলাম। আজকে আমার আর ওই বাড়িতে থাকাই সম্ভব হচ্ছে না। পুরো বাড়িতে শ্রাবন্তীর এত বড় বড় ছবি। ভীষণ অ্যাফেক্ট করছে আমায় সেটা। ডেসপারেটলি চাইছি একটা অন্য কোথাও বাড়ি কিনে চলে যেতে। দেখি কী হয়? এটা একটা হিউজ সাইকোলজিকাল প্রেসার।
আপনার আর শ্রাবন্তীর ব্যাপারে কিন্তু অনেক কিছু শুনতাম মিডিয়াতে!
কী রকম?
যে আপনি নাকি ফিজিক্যালি ভায়োলেন্ট হতেন ওঁর ওপর?
যারা বলছে তারা কি আমার বেডরুমে ঢুকে দেখেছে বলুন? এটা যাদের বলার তারা বলবে। আমি জানি, শ্রাবন্তী জানে কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যে।
শ্রাবন্তী তো বাপের বাড়িতে অনেক দিন ধরেই রয়েছেন।
হ্যাঁ, অনেক দিন ধরেই রয়েছে।
আপনাদের ছেলে ঝিনুকও তো শ্রাবন্তীর সঙ্গেই থাকে?
ঝিনুক মাঝে মধ্যে আমার কাছে এসেও থাকে। কখনও স্কুলের ছুটির পর আমি ওকে আনতে যাই, কখনও শ্রাবন্তী তোলে। এই রকম আর কি!
ওর পক্ষেও এই সময়টা ডিফিকাল্ট।
হ্যাঁ, ডিফিকাল্ট তো বটেই। ও আমাকে একবার বলেছিল, “বাবা, তোমাদের এই ঝগড়া আমার আর ভাল লাগছে না। এই আমি মাঝে মাঝে তোমার কাছে থাকি, মাঝে মাঝে মায়ের কাছে থাকছি।” আমি চেষ্টা করেছিলাম তখন ওকে বোঝাতে। ও বুঝেছিল। তবে যখন আমাদের ঝামেলা ছিল না তখন আমাদের শিডিউল দেখে ওকে আমরা দু’জনেই বলেছিলাম, “তুমি কি বোর্ডিংয়ে পড়বে?” ও যেতে চায়নি। আমরা জোরও করিনি।
শ্রাবন্তী আপনাকে উকিলের চিঠি পাঠানোর পর আর ওঁর সঙ্গে কথা হয়নি আপনার?
না, কোনও কথা হয়নি।
শ্রাবন্তীর মা-বাবার সঙ্গে কথা হয়নি?
ওঁদের সঙ্গে কথা একেবারেই হয়নি বললে মিথ্যে বলা হবে। ওই ঝিনুকের স্কুলের ছুটি কখন? ওকে কে তুলবে? আমার গাড়ি না শ্রাবন্তীর? এই সব নিয়ে কো-অর্ডিনেশনের কথা হয়েছে। অন্য কোনও কথা হয়নি।
আপনার মা-বাবা কী বলছেন?
ওঁরা ভেঙে পড়েছেন। দেখুন আমি কৃষ্ণনগরের ছেলে। ওখানে আমার বাবা খুব বড় ব্যবসায়ী। বাবা একজন সম্মাননীয় ব্যক্তি। এবং শহরের বাইরের মানুষ তো, ওঁরা অত সেপারেশন-টেপারেশন বোঝেন না। ওঁদের কাছে আলাদা থাকা মানেই ডিভোর্স। আর বিয়ের এত দিন পর ডিভোর্স হচ্ছে মানেই ওঁরা ভাবছেন অন্য কোথাও সম্পর্ক হয়েছে।
হয়েছে কি?
আমার তো হয়নি।
শ্রাবন্তীর হয়েছে? আমরা শুনছিলাম শ্রাবন্তীর সঙ্গে একজনের সম্পর্ক হয়েছে। মিডিয়াতে আমরা যখন জানি, তখন আপনিও নিশ্চয়ই শুনেছেন?
হ্যাঁ, আমার কানেও কথাটা এসেছে। দেখুন, এটা শ্রাবন্তীকে আপনি জিজ্ঞেস করলেই ভাল করবেন।
এটা নিয়েও কোনও কথা হয়নি আপনাদের মধ্যে?
না, কোনও কথা হয়নি। দেখুন, আমি যে-শ্রাবন্তীকে চিনতাম, সেই সময় ও একজন সাধারণ মেয়ে ছিল। আজ শ্রাবন্তীর বিশাল নাম, প্রচুর টাকা। লাস্ট কুড়ি বছরে ও অনেক কিছু পায়নি, যা আজকে ওর পক্ষে পাওয়া সম্ভব। ও হয়তো একটু অন্যরকম ভাবে নিজের জীবনটাকে সাজাতে চাইছে। তাতে আমি আর কী বলব? তবে এটুকু জানি এ সব শুনে আমার মা-বাবা খুব আপসেট।
ওঁরা শ্রাবন্তীকে মেয়ের মতো ভালবাসতেন। স্পেশালি আমার মা। সেটা আপনি শ্রাবন্তীকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন।
আচ্ছা এটা কি সত্যি যে আপনি শ্রাবন্তীকে নিয়ে সব সময়
ইনসিকিওর্ড থাকতেন।
একেবারেই না। দেব, বিট্টু (সোহম) আমার এত ভাল বন্ধু। আমি কেন ইনসিকিওর্ড হব বলুন? আর দেবের সঙ্গে আমার এই নিয়ে কথাও হয়েছে।
জিতের সঙ্গে কথা হয়েছে?
না, জিতের সঙ্গে এই নিয়ে কথা হয়নি।
শ্রাবন্তী কি আপনাকে নিয়ে ইনসিকিওর্ড থাকতেন?
আমার আটটা ছবির মধ্যে পাঁচটাতেই শ্রাবন্তী হিরোইন। ওর ইনসিকিওর্ড লাগার কোনও কারণ নেই। আর আমার ছবিতেই তো শ্রাবন্তীকে সব চেয়ে ভাল লাগত। ওর আমাকে নিয়ে ইনসিকিওর্ড হওয়ার কারণ ছিল না।
ডিভোর্স হলে আবার বিয়ে করবেন?
তার আগে আমার প্রশ্ন, কেউ আমাকে বিয়ে করবে কেন বলুন তো। আমার এগারো বছরের বিয়ে ভাঙার মুখে। আমার দশ বছরের এক ছেলে আছে। কোন মেয়েই বা বিয়ে করতে রাজি হবে? আর কেনই বা রাজি হবে? তবে একটাই জিনিস খারাপ লাগে...
কী?
দেখুন দশ বছরে তো কিছু দারুণ সময় কাটিয়েছি আমরা। ধীরে ধীরে জীবনে উন্নতি করেছি। আজকে পিছনে ফিরে তাকালে মনে হয়, সবটাই তো মিথ্যে ছিল না।
এখনও তো ডিভোর্স হয়নি। আপনাদের দু’জনেরই অনেক কমন বন্ধু। তাঁরা যদি আপনাদের বোঝান, তা হলে তো ডিভোর্সটা না-ও হতে পারে।
না, আমি চাইছি এ বার ডিভোর্সটা হোক। কারণ এই যে এত মাসের সেপারেশন, ভবিষ্যতে কোনও ঝামেলা হলে এই প্রসঙ্গে কথা উঠবেই। আমি আর তিক্ততা চাই না। আমি চাই, খুব নিশ্চিন্ত ভাবে ডিভোর্সটা হোক।
শ্রাবন্তী, একজন প্রথম সারির নায়িকা। তাঁর ডিভোর্স তো ব্রেকিং নিউজ। মিডিয়াতে তো হইচই হবেই।
সেটা যত কম হয়, ততই ভাল। আমি শুধু এখন চাই কোনও অশান্তি ছাড়া ডিভোর্সটা হোক। শ্রাবন্তী আর ঝিনুকের যেন বাকি জীবনটা খুব ভাল করে কাটে।
|
|
|
|
|
|